মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫৪

জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত

সাত মাসেরও অধিক সময় কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নেই কোনো ধরনের ঔষধ

কবির হোসেন মিজি
জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা চরমভাবে ব্যাহত

চাঁদপুর জেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দীর্ঘ প্রায় সাত মাস যাবত কোনো ধরনের ঔষধ নেই। এসব প্রতিষ্ঠানে মোট ২৭ ধরনের ঔষধ থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে একটি আইটেমও নেই। অর্থাৎ ঔষধশূন্য অবস্থায় আছে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলো। ফলে গ্রামের মানুষগুলো এসব চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে এসে ঔষধ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। আর এ পরিস্থিতি চলছে প্রায় সাত মাস যাবত। এমন পরিস্থিতিতে এই জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র 'কমিউনিটি ক্লিনিক' এবং 'ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র'গুলোতে ক্যালসিয়াম, প্যারাসিটামল, আয়রন ট্যাবলেট, এন্টাসিড, জন্মবিরতিকরণ পিল, কনডম, চোখের ড্রপসহ সর্বমোট ২৭টি আইটেমের ঔষধ থাকার কথা। কিন্তু গত ৬/৭ মাস ধরে এসব চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে কোনো ধরনের ঔষধই নেই। তবে কিছু কিছু স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে হাতগোণা কয়েকটি ঔষধ থাকলেও তা একেবারেই সীমিত। যেখানে প্রতিদিন ৫০জন মানুষের চাহিদা পূরণে যে পরিমাণ ঔষধ থাকার কথা, সেখানে রয়েছে মাত্র ৭/৮ জন মানুষের চাহিদা পূরণ করার ঔষধ। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে কয়েক হাজার সেবাপ্রার্থী চিকিৎসার জন্যে এলেও তারা প্রয়োজনীয় ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।

চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, দীর্ঘ সাত মাস ধরে তারা কোনো ঔষধ পাচ্ছেন না। বিগত বছরগুলোতে আমাদের গরিব-দুঃখীদের জন্যে গ্রামের এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে সরকার বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ঔষধ সরবরাহ করে এসেছে। কিন্তু বিগত সরকার পতনের পর থেকে এসব স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ওষুধ সরবরাহ নেই বলে জানান কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এতে করে রোগীদেরকে বাইরে থেকে টাকা দিয়ে ঔষধ কিনে নিতে হচ্ছে, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া লোকবল সংকটও রয়েছে প্রকট। তাই দ্রুত লোকবল ও ওষুধ সংকট দূর করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান তারা। পূর্বের মতো বিনামূল্যে চিকিৎসা ও পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা অব্যাহত রাখার দাবি জেলাবাসীর।

এ বিষয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাদের কয়েকজন জানান, গত ৬-৭ মাস ধরে ঔষধ সংকট। তাই সেবাগ্রহীতাদের আমরা ঔষধ দিতে পারছি না। ২৭টি ঔষধের মধ্যে গত কয়েক মাস ধরে আমাদের এখানে কোনো ধরনের ঔষধই নেই। এতে চিকিৎসাসেবা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তবে আমরা প্রাথমিক চিকিৎসা অব্যাহত রেখেছি।

এদিকে চাঁদপুর জেলায় মোট ৮১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ১ হাজার ৬৯টি অনুমোদিত পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র ৬৮৯ জন। ৩৮০টি পদ শূন্য থাকায় জনবল সংকটও তীব্র। এতে চিকিৎসা কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে।

এ বিষয়ে চাঁদপুর জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক একেএম আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে ঔষধ সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ২৭টি ওষুধ থাকার কথা থাকলেও একটিও এখন নেই। গত মাসে অল্প কিছু সরবরাহ এসেছিল, সেগুলোও শেষ হয়ে গেছে। মূলত কেন্দ্রীয়ভাবে সরবরাহ না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক হলে সংকট কেটে যাবে বলে আশা করছি। একই সঙ্গে বিভিন্ন কেন্দ্রের অবকাঠামো ও লোকবল সংকট সমাধানের জন্যে কাজ করা দরকার বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রফিকুল হাসান ফয়সাল জানান, কেন্দ্রীয়ভাবেই আমরা গত কয়েক মাস ধরে কোনো প্রকার ঔষধ পাচ্ছি না। সে জন্যে কোনো কমিউনিটি ক্লিনিকে ঔষধ দিতে পারিনি। কেন্দ্রীয়ভাবে এই সমস্যা কেটে গেলে আশা করি আগামী এক- দু মাসের মধ্যে আমরা ঔষধ পাবো। তারপর পূর্বের মতো আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারবো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়