প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২০:১৫
রায়পুরে গৃহপারিচারিকা কিশোরী ধর্ষণ, জবাবে পাল্টা গণধর্ষণ মামলা, ৩ জন কারাগারে

নারী ইউপি সদস্যের ঘরে গৃহপারিচারিকার কাজ করতো সুমি আক্তার (ছদ্ম নাম) (১৪)। গত ৬ জুলাই রাতে ইউপি সদস্যের অনুপস্থিতিতে সুমিকে ধর্ষণ করে একই বাড়ির আবদুল জলিল সর্দারের ছেলে বখাটে মো. সজিব (১৯)। এ ঘটনায় বিচার না পাওয়ায় সুমির পিতা আবদুর রহমান বাদী হয়ে সজিব ও ইউপি সদস্য ফাতেমাকে আসামি করে গত ১২ জুলাই রায়পুর থানায় ধর্ষণ মামলা করেন।
|আরো খবর
আবদুর রহমানের দায়ের করা মামলার ৫দিন পরই (১৭ জুলাই ২০২৫) ইউপি সদস্য পারভিনের প্ররোচনায় পড়ে একই এলাকার সিপাতের স্ত্রী জোসনা আক্তার (২২) তারই বড়ো ভগ্নিপতিসহ তিন জন কৃষককে আসামি করে লক্ষ্মীপুর আদালতে গণধর্ষণ মামলা করেন।
জোসনা আক্তারের দায়ের করা গণধর্ষণ মামলায় সোমবার (১৮ আগস্ট ২০২৫) লক্ষ্মীপুর আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জেলা জজ জামায়াত ইসলামের রায়পুরের দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের যুব বিভাগের সভাপতি ও একই এলাকার ইউনুস হাওলাদারের ছেলে নুর আলম (৩০), একই এলাকার ওহাব আলী সরদারের ছেলে কৃষক মো. জালাল (৩২) ও মাহমুদ আলী সৈয়ালের ছেলে কৃষক আবদুস সোবহানের (৩৫) জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। সেই সঙ্গে ৩ আসামি ও বাদী জোসনার ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন।
কৃষক আবদুর রহমানের মেয়ে গৃহপারিচারিকার ধর্ষণ মামলায় দক্ষিণ চরবংশী ইউপি সদস্য ও নুরু সরদারের স্ত্রী পারভিন বেগম এবং ধর্ষক সজিব ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন।
পৃথক 'ধর্ষণ ও গণধর্ষণ' মামলার ঘটনায় পুরো দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়ন (মোল্লারহাট বাজার) এবং উপজেলায় ক্ষোভ ও তোলপাড় চলছে।
গৃহপারিচারিকার পিতার মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, তাদের বসতঘরের একশ' হজ দূরেই নারী ইউপি সদস্য পারভিন বেগমের বসতঘরে গত ৩ মাস ধরে গৃহপারিচারিকার কাজ করে সুমি আক্তার (১৪)। গত ৬ জুলাই রাতে পারভিনের অনুপস্থিতিতে কৌশলে তার ঘরে ঢুকে সুমিকে হাত-পা-মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে সজিব। এ ঘটনায় পারভিনসহ অভিভাবকের কাছে সজিবের বিচার দাবি জানায় আবদুর রহমান। বৈঠকের বিচারে দোষী সাবস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় সজিবের। রাজি না হওয়ায় সুমিসহ তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয় পারভিন ও সজিব। নিরূপায় হয়ে সজিবকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়।
জোসনা আক্তার তার মামলার এজাহারে অভিযোগ করেছেন, গত ১৭ জুলাই মধ্য রাতে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বসতঘরের বাইরে যান তিনি। এ সময় তার বড়ো ভগ্নিপতি সহ তিন আসামি হাত-পা ওড়না দিয়ে বেঁধে জোরপূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ করেন তাকে। তিনি চিৎকার দিলে আসামিরা পালিয়ে যায়। এ সময় ৯৯৯ নাম্বারে ফোন করলে হাজিমারা ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা আহত জোসনাকে উদ্ধার করে তার বসতঘরে নিয়ে রেখে চলে যান।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও গণধর্ষণ মামলার ১নং আসামি নুর হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা জানান, কৃষক আবদুর রহমানের মেয়ে ধর্ষণ হয়েছে, তা সঠিক। তবে এই মামলাটি নুর হোসেনসহ তিন আসামি সহযোগিতা করায় ইউপি সদস্য পারভিন তার স্বজন জোসনা আক্তারকে দিয়ে মিথ্যা গণধর্ষণ মামলা সাজিয়ে নুর হোসেনসহ তিন আসামিকে চরমভাবে হয়রানি করছেন।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, গৃহপারিচারিকা ধর্ষণের মামলার আসামি ইউপি সদস্য পারভিন আক্তার ও ধর্ষক সজিব পলাতক রয়েছেন। একই এলাকার জোসনা আক্তারের আদালতে করা গণধর্ষণ মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। এই মামলায় সোমবার নুর হোসেনসহ তিন আসামি আদালতে আত্নসমর্পণ করতে গেলে বিচারক কারাগারে পাঠিয়েছেন। এই মামলাটি পিবিআই (নোয়াখালি) তা তদন্ত করছেন।