রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৫:২৩

রায়পুর ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স :

রোগীর চাপে ভর্তি হাসপাতালের মেঝে-বারান্দা

তাবারক হোসেন আজাদ, রায়পুর (লক্ষ্মীপুর)
রোগীর চাপে ভর্তি হাসপাতালের মেঝে-বারান্দা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে প্রায় ৪ লাখ বাসিন্দার চিকিৎসার একমাত্র আস্থা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও জনসাধারণ ১০০ শয্যার সদর হাসপাতালে চলে যান। প্রতিদিন এ হাসপাতালটির আউটডোরে হাজারেরও বেশি রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। এ ছাড়া হাসপাতালে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি থাকে।

রোববার (২৭ জুলাই ২০২৫) সরেজমিনে দেখা গেছে, নারী ও পুরুষ বিভাগে ২০টি করে ৪০টি বেড রয়েছে। এ ৫০ বেডের বিপরীতে ৯২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। শিশু ওয়ার্ডে ১০ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২১ জন। এভাবে প্রায় সব ওয়ার্ডেই ধারণ ক্ষমতার চেয়েও অতিরিক্ত রোগী ভর্তি। শয্যার বিপরীতে এতো পরিমাণ রোগী ভর্তি থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে হিমশিম খেতে দেখা গেছে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের।

ভর্তিকৃত শয্যার অতিরিক্ত থাকা রোগীর বিছানা পাতা হয়েছে ফ্লোর, চলাচল পথের সামনে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় এবং ভ্যাপসা গরমে রোগীদেরও নানা ভোগান্তি পোহাতে দেখা গেছে। রোগীর চাপের বিপরীতে শয্যা সংকটের সঙ্গে আছে চিকিৎসক সংকট। জটিল রোগের চিকিৎসক না থাকায় ওইসব রোগাক্রান্ত রোগী সেবা নিতে পারছেন না। ফলে অনেক জটিল রোগের রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয় প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যার হাসপাতালে বিভিন্ন স্থান থেকে রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। গুরুতর রোগীদের ভর্তি রাখতে হয়। কেউ আবার প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আউটডোরে চিকিৎসাপত্র নেন রোগীরা।

রোববার (২৭ জুলাই ২০২৫) সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নাফিসা (৮), হাসিবুর রহমান, (৯), ইয়ামিন, (১২), তোফায়েল আহাম্মদ,(৭০), তাজল ইসলাম (৬৫), ফাতেমা (১৪), আবদুল আহাদ (২১ মাস), মিম (১৮), রফিক উল্যা (৬০), শাহনাজ (২৫), শামসুল হক (৭৫), সমি (৪৫), ফাতেমা (৯) ও মানিক দেওয়ান ও ২১ জন শিশু-বৃদ্ধসহ ৯২ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন।

গত বুধবার ৩৩ জন, বৃহস্পতিবার ৩৩ জন,

শুক্রবার ৩৯ জন, শনিবার ৪২ জন চিকিৎসা নেন এবং রোববার ৯২ জন রোগী ভর্তি থাকতে দেখা যায়।

হাসপাতালে ভর্তি রোগী ইয়াসিন (১০)-এর মা স্বপ্না আক্তার বলেন, আমার শিশুপুত্র ইয়াসিনের নাকে সমস্যা থাকায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু বেড না থাকায় আমাদের মেঝেতে বিছানা করে দিয়েছে। গত তিন দিন ধরে মেঝেতে থেকে ছেলের চিকিৎসা করাচ্ছি।

পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি রোগী চরবংশী গ্রামের বৃদ্ধ তোফায়েল আহাম্মদ ও তাজল ইসলাম বলেন, বেড নেই। যে পরিমাণ রোগী, তাতে বেড থাকবে কী করে? তাই মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে।

পৌরসভার মধুপুর গ্রামের মিম নামে এক নারী জানান, তিনি নিজে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মেঝেতে শয্যা দেওয়া হয়েছে। ফ্যানের বাতাস পর্যাপ্ত না হওয়ায় কাগজের সাহায্যে বাতাস করতে হচ্ছে।

রায়পুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মামুনুর রশীদ পলাশ বলেন, এ হাসপাতালে রোগীদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, বেশি সমস্যা হলে সদর হাসপাতালে রেফার করা হয়। প্রতিদিন এ হাসপাতালে রোগীদের অনেক চাপ থাকে। শয্যার বিপরীতে রোগীর পরিমাণ দ্বিগুণ হওয়ায় চিকিৎসাসেবা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।

রায়পুর সরকারি হাসপাতালটি ৫০ শয্যার মঞ্জুরিকৃত ২০৩ জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ১০৫ জন। গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসক পদও শূন্য। আবার কোনো চিকিৎসক ছুটিতে গেলে ওই চিকিৎসকের সেবা বন্ধ থাকে। সেবা না নিয়েই ফিরে যেতে হয় রোগীদের।

পৌরসভার কাঞ্চনপুর গ্রামের বাসিন্দা স্বপন পাটোয়ারী বলেন, হাসপাতালে কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই। নার্সসহ ৯৮ টি পদে জনবল না থাকায় সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে । কয়েকদিন ধরে নার্স ও ডাক্তার অসুস্থ থাকায় সেবা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি জানান, হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এবং জটিল রোগের চিকিৎসকের অনেক পদ শূন্য থাকায় বাইরের প্রাইভেট হাসপাতালগুলো থেকে চিকিৎসা নিতে হয়।

জানা গেছে, হাসপাতালে কনসালটেন্ট গাইনি, মেডিসিন, ইএনটি, চক্ষু ও জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারি, চর্ম ও যৌন পদে কোনো চিকিৎসক নেই। ৩১টি পদের মধ্য ১৮টি পদে কর্মরত শুধু মেডিসিন ডাক্তার। দীর্ঘদিন ধরে পদগুলো শূন্য থাকায় রোগীরা সেবাপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চারটি পদের মধ্যে মাত্র একজন কর্মরত রয়েছেন। ফলে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থানে অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা পরিবেশ দেখা গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধও ছড়াচ্ছে।

চিকিৎসক সংকটের বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বাহারুল আলম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে জ্বর, সর্দি ও কাশির রোগীদের সাথে অন্য রোগীও বাড়তি। রোববারই জ্বরসহ অন্য রোগের ৯২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। কিছু পদে চিকিৎসক না থাকায় রোগীরা ওইসব রোগের সেবা পাচ্ছেন না। তবে আমরা যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। শূন্য পদে জনবল পেতে জেলা সিভিল সার্জন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়