প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫, ২১:০৮
চাঁবিপ্রবিতে প্রথমবারের মতো মৌসুমী ফল উৎসব ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি

চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চাঁবিপ্রবি) প্রথমবারের মতো আয়োজন করা হয়েছে প্রাণবন্ত মৌসুমী ফল উৎসব এবং ফলদ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি-২০২৫। এই উৎসব ক্যাম্পাস জীবনকে রঙিন ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে এবং দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন মৌসুমী ফলের প্রতি শিক্ষার্থী ও কর্মচারীদের মধ্যে আগ্রহ ও সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে। উৎসবটি সোমবার দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-২-এর ৪০০১ ও ৪০০২ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
|আরো খবর
উৎসবের আয়োজন করা হয় ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক খাদিজা খাতুন টুম্পার সভাপতিত্বে।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. পেয়ার আহম্মেদ। যাঁর উদ্বোধনী বক্তব্য অনুষ্ঠানের গুরুত্ব ও উদ্দেশ্যকে তুলে ধরে উৎসবের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।উপাচার্য তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে ফল ও প্রকৃতি সম্পর্কিত দুটি আয়াত তেলাওয়াত করেন এবং সেগুলোর তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, যার কিছু তোমরা পান করো এবং যার দ্বারা গাছপালা উৎপন্ন হয়, যেখান থেকে তোমরা পশু চারণ করাও। তিনি তার দ্বারা তোমাদের জন্যে শস্য, জলপাই, খেজুর, আঙুর এবং নানা প্রকার ফল উৎপন্ন করেন। নিঃসন্দেহে এতে চিন্তাশীল জাতির জন্যে নিদর্শন রয়েছে।’ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তিনি উল্লেখ করেন, আল্লাহ তাআলা আমাদের জীবনধারণের জন্যে আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, যার মাধ্যমে উদ্ভিদ জন্মায় এবং তা থেকে আমরা বিভিন্ন প্রকার ফল, খাদ্যশস্য ও জীবিকার উপকরণ লাভ করি। এটি আল্লাহর অসীম কুদরত ও দয়ার প্রকাশ। তিনি আরও বলেন, এই নিদর্শনগুলো নিয়ে যারা গভীরভাবে চিন্তা করে, তারাই প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর মহত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ফল উৎসব কেবল এক আনুষ্ঠানিকতা নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য ধারণ ও প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে দেয়ার মহতী প্রয়াস। এমন আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঐতিহ্যবোধ ও সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হয়, যা ক্যাম্পাসকে আরও মানবিক ও সমৃদ্ধ করে তোলে। চাঁবিপ্রবিতে এ ধরনের অনুষ্ঠান নিয়মিত আকারে আয়োজন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের জীবন হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত ও সংস্কৃতিময়।
ফল উৎসবে ছিলো দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগৃহীত রসালো মৌসুমি ফলের চমৎকার সমাহার। যেমন-লিচু, আম, কাঁঠাল, জাম, আনারস, বিলাতি গাব, জাম্বুরা, কলা, কামরাঙা, আমড়া, ড্রাগন ফল, লটকন, পেঁপে, পেয়ারা, জামরুলসহ নানাবিধ ফল। প্রতিটি বিভাগের নিজস্ব স্টলে ছিল রঙ্গিন সাজসজ্জা এবং ফলের মনোহর প্রদর্শনী।
উৎসবটি শুধু ফল প্রদর্শনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো না, সেখানে ছিলো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে আন্তরিক আলোচনা, হাস্যোজ্জ্বল আড্ডা, ছবি তোলা ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। অংশগ্রহণকারী সবাই এই আনন্দঘন পরিবেশকে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে অভিহিত করেছেন।উৎসবের সমাপ্তিতে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আম ও কমলা-লেবুর চারা রোপণ করেন। এ সময় তিনি হাদিস উদ্ধৃত করে বলেন, ‘কেয়ামত এসে গেলেও যদি তোমার হাতে একটি গাছের চারা থাকে, তবে তা রোপণ করো।’ এ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, রাসূল (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, পৃথিবীর শেষ সময় আসলেও ভালো কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। গাছ রোপণ পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি একটি সাওয়াবের কাজ, যা আমাদের নৈতিক দায়িত্বও বটে। পুরো অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে সঞ্চালনা করেন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক প্রিন্স মাহমুদ। এ ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একাডেমিক উৎকর্ষে নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের অগ্রণী অবস্থানকে নিশ্চিত করছে। ভবিষ্যতেও বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের উদ্যোগ চালিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।