সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

আনন্দ ভ্রমণ যেন আন্তরিকতার মহাযাত্রা

ফয়েজ আহমেদ ॥
আনন্দ ভ্রমণ যেন আন্তরিকতার মহাযাত্রা

কোনো সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে যদি বিচক্ষণতাকে প্রাধান্য দেয়া যায় তবে সে সংগঠনের ভিত চীনের প্রচীরের চেয়ে সুদৃঢ় হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। আর ঐক্যবদ্ধ একটি সংগঠন এগিয়ে যেতে পারে দুর্বার গতিতে। সদ্য শেষ হওয়া শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের আনন্দ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আমার ক্ষুদ্র জীবনে দেখা শৃঙ্খলার প্রকৃষ্ট এক উদাহরণ, যেখানে নিজেকে একজন সদস্য মনে না হয়ে সুশৃঙ্খল পিঁপড়ে দলের সৈনিক মনে হয়েছে। সেখানে সংগঠন শকট সঞ্চালকদের মনে হয়েছে একেকজন পরিশ্রমী নেতা। আবার ক্ষণে ক্ষণে কাজ এগিয়ে নিতে প্রতিটি সদস্যই যেন এক একজন সভাপতি।

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অ্যাডঃ ইলিয়াছ মিন্টু ভাইসহ অন্যদের দোয়া নিয়ে যাত্রা শুরু, প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অধ্যক্ষ হুমায়ুন কবির ভূঁইয়াকে সফরসঙ্গী করা, বাসে আসন গ্রহণের ক্ষেত্রে বয়োজ্যেষ্ঠ ও অসুস্থদের প্রাধান্য দেয়া, সকলের আসন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে নেতৃত্বদানকারী অগ্রজদের পেছনে কিংবা ড্রাইভারের পাশে বসা, শত কিলোমিটার দাঁড়িয়ে গমন, প্রতিটি আসনে বারবার ঘুরে কারো কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা দেখা, হোটেলে সবার কক্ষ নিশ্চিত শেষে নেতৃবৃন্দের কক্ষে যাওয়া, অন্য সদস্যকে নিজের কক্ষ ছেড়ে দিয়ে সভাপতি নিজে মেঝেতে ঘুমানো, প্রতিবার খাবার গ্রহণের সময় আগে সদস্য ও তাদের পরিবার এমনকি পরিবহন শ্রমিকদের খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করাসহ নেতৃবৃন্দের ত্যাগের মানসিকতা দেখে মনে হয়েছে কিছু লোক এখানে আনন্দ ভ্রমণে নয়, স্বেচ্ছাশ্রম দিতে এসেছেন। আনন্দ ভ্রমণ থেকে অনেক কিছু শিক্ষণীয় থাকে, তবে প্রেসক্লাবের এ ভ্রমণ আমার জীবনে এক অনন্য আলোর সবক মনে হয়েছে।

দীর্ঘ সময় শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের নানা সাংগঠনিক জটিলতা দেখে কবি ফররুখ আহমদের ‘পাঞ্জেরী’ কবিতার কিছু শব্দ হৃদয়ে অনুরণন হতো। মনে হতো,

দীঘল রাতের শ্রান্তসফর শেষে

কোন দরিয়ার কালো দিগন্তে আমরা পড়েছি এসে?

এ কী ঘন-সিয়া জিন্দেগানীর বা’ব

তোলে মর্সিয়া ব্যথিত দিলের তুফান-শ্রান্ত খা’ব

অস্ফুট হয়ে ক্রমে ডুবে যায় জীবনের জয়ভেরী।

এক বছর আগে বর্তমান কমিটি দায়িত্বভার নেয়ার পরে শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের স্থায়ী ঠিকানা গড়তে জমি ক্রয়, ৮ বছরের বকেয়া পরিশোধ করে পূর্বের জমির লীজ নবায়ন, নিজেদের অর্থে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফরম পূরণ, অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল সদস্যদের কল্যাণে তহবিল গঠনসহ নানামুখী পদক্ষেপ এ সংগঠনকে সাংবাদিক ও এলাকার গণমানুষের হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে ভালোবাসার অনন্য উচ্চতায় স্থান করে দিয়েছে।

ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবগাহন কিংবা উত্তাল সমুদ্রের ঊর্মিমালার কথা না বলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলার কথা বলা হয়তো কারো কাছে বিস্বাদ মনে হতে পারে, তবে অবশ্যই অতিকথন নয়। আমার চোখে এটি কেবল কোনো ভ্রমণ নয়, এটি শাণিত নেতৃত্বের এক পরিভ্রমণ, কোনো সুশৃঙ্খল সেনাদল কিংবা নাবিক দলের সমুদ্র অভিযান। যেখানে অপরের জন্যে ত্যাগ, মায়া, আন্তরিকতা ও ভালোবাসা মহাস্ত্র হিসেবে সবাই অস্তিনের বাম পাশে মজুদ রেখেছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়