প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৪
বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর ৪৫তম প্রযোজনা
জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে দর্শক মাতালো দমফাটানো হাসির নাটক ‘গিট্ঠু’

চাঁদপুরের স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী নাট্য সংগঠন বর্ণচোরা নাট্য গোষ্ঠীর ৪৫তম প্রযোজনায় চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মঞ্চস্থ হলো দম ফাটানো হাসির নাটক ‘গিট্ঠু’। গত ৩১ অক্টোবর ২০২৫ (শুক্রবার) সন্ধ্যায় চুরাশিয়ান বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানিয়ে এই নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়। বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর বহুল আলোচিত ‘গিট্ঠু’ নাটকটি দমফাটানো হাস্যরস, প্রাণবন্ত সংলাপ, নিখুঁত অভিনয় ও নিখুঁত মঞ্চ উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে দর্শকদের মন জয় করে নেয়। পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিলো উচ্ছ্বাস, হাসির ঝলক, আর প্রাণভরা হাততালি। এই নাটকে প্রতিটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন দক্ষ ও প্রাণবন্ত শিল্পীরা। তাঁদের অভিনয়ে হাস্যরস, প্রাণচাঞ্চল্য ও সংলাপের গতি পুরো নাটকটিকে করেছে দর্শকনন্দিত ও প্রাণবন্ত।
মলিয়ের রচিত, গোলাম সারওয়ার হারুনের রূপান্তরে ও শুকদেব রায়ের নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিয়ন করেছেন সংগঠনের শিল্পীরা। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন হ্যাপি আক্তার, গিট্ঠু চরিত্রে অভিনয় করেছেন দেবব্রত সরকার বিজয় ও পিছলা মিয়া চরিত্রে ছিলেন দিলীপ দাস। আতর আলী চরিত্রে প্রাণবন্ত অভিনয় করেছেন নাজমুল হোসেন বাপ্পি। জনাব আলী চরিত্রে অভিনয় করেছেন কামরুজ্জামান শিশির।
লাইলা চরিত্রে ছিলেন আসমা আক্তার পাখি। আৎকা বেপারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরীফ চৌধুরী। আহল্যাদী চরিত্রে ছিলেন ঐশী দাস। সুলেমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন লিটন গাজী।
দারোগা চরিত্রে প্রাণবন্তভাবে মঞ্চ মাতিয়েছেন নূরে আলম নয়ন। দারোগার বউ চরিত্রে অভিনয় করেছেন আয়েশা পাটোয়ারী ও মরিয়ম মাহি। পুলিশ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সিয়াম খান ও দিলীপ দাস । মঞ্চে তাঁদের প্রাণবন্ত সংলাপ ও হাস্যরসাত্মক অভিনয় দর্শকদের এক মুহূর্তের জন্যেও আসন ছাড়তে দেয়নি।
নাটকটির আলো, সঙ্গীত, রূপসজ্জা, মঞ্চ পরিকল্পনা ও অন্যান্য কলাকুশলীতে যুক্ত ছিলেন চাঁদপুরের বহু প্রতিভাবান নাট্যকর্মী।
আলোক পরিকল্পনায় ছিলেন শুকদেব রায়, সঙ্গীত পরিকল্পনায় আজিজুর দত্ত ও নূরে আলম নয়ন, অভিনয় নির্দেশনায় শান্তনু চৌধুরী তানভা, আবহ সংগীতে সিয়াম খান ও রিপন চন্দ্র, মঞ্চ পরিকল্পনায় বিচিত্রা সাহা, পোশাক পরিকল্পনায় সাবিহা জান্নাত দিপা, রূপসজ্জায় ছিলেন শীলা তুষা ও মরিয়ম মাহি।
নাটক মঞ্চায়নের আগে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি শুকদেব রায় ও সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী। তাঁরা বলেন, মুক্তিযুদ্ধোত্তর বাংলা নাট্য সাধনায় হাঁটি হাঁটি পা পা করে গৌরবের ৫১ বছর পেরিয়ে আমরা ৫২ বছরে পদার্পণ করেছি। এই দীর্ঘ পথচলায় যাঁরা আমাদের সঙ্গী হয়েছেন, সবার প্রতি জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
সভাপতি আরও বলেন, পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া তিন নদীর মিলনস্থল চাঁদপুর সংস্কৃতিচর্চার এক উৎকৃষ্ট স্থান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শকে ধারণ করে ১৯৭৪ সালের ১৭ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী। দীর্ঘ বিরতির পর আমরা আমাদের ৪৫তম প্রযোজনা হিসেবে ‘গিট্ঠু’ নাটকটি মঞ্চে এনেছি। আশা করি দর্শকরা আমাদের এই প্রয়াসে আনন্দ পেয়েছেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরীফ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বলেন, নাটকটি সফলভাবে মঞ্চস্থ করতে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তাঁদের সবাইকে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানাই রক্তিম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। চাঁদপুর থিয়েটার ফোরাম, সাংস্কৃতিক সংগঠন, সাংবাদিক সমাজ, ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ও দর্শক-শ্রোতাদের সহযোগিতায় আমাদের অনুষ্ঠানটি সার্থক হয়েছে। আমরা সকলের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই মঞ্চায়নে বিশেষ সহযোগিতা করেছেন চুরাশিয়ান নাট্যপ্রেমীরা। তাঁদের উদ্দেশে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
চুরাশিয়ান বন্ধুদের আমন্ত্রণে ‘গিট্ঠু’ নাটকটি মঞ্চস্থ করতে পেরে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত। তাঁদের প্রতি জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।
চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মঞ্চে বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর ‘গিট্ঠু” নাটকটি ছিলো হাস্যরস, অভিনয় ও সামাজিক ব্যঙ্গের এক অপূর্ব সমন্বয়।
দীর্ঘ ৫১ বছরের নাট্যযাত্রায় সংগঠনটি যেমন নাট্যচর্চায় আলোকবর্তিকা হয়ে আছে, তেমনি আগামী প্রজন্মের হাতে নতুন আলো তুলে দিতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।







