প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৭
নামমাত্র আত্মীয়

সমাজের মৌলিক কাঠামো হলো পরিবার। পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কগুলো আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আধুনিক যুগে এ সম্পর্কগুলো প্রায়শই নামমাত্র হয়ে উঠেছে। ‘নামমাত্র আত্মীয়’ বলতে আমরা সেসব আত্মীয়দের বুঝি, যারা রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক বন্ধনের কারণে আত্মীয় বলে পরিচিত; কিন্তু বাস্তবে তাদের মধ্যে কোনো গভীর অনুভূতি, সহযোগিতা বা সমর্থন নেই। এ বিষয়টি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত জীবনে নয়, সমাজের সামগ্রিক গতিশীলতায়ও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
প্রথমত, ‘নামমাত্র আত্মীয়’ এর সংজ্ঞা আমি এভাবে নির্ধারণ করবো-এটি এমন আত্মীয় যারা শুধুমাত্র নামে আত্মীয়; কিন্তু কর্মে নয়। উদাহরণস্বরূপ, একজন চাচা যিনি তার ভাইপোকে শুধুমাত্র উৎসবে দেখা করেন, কিন্তু কোনো সঙ্কটকালে সাহায্য করেন না, তিনি নামমাত্র আত্মীয়। এ ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই বিদ্যমান; কিন্তু আধুনিক সমাজে এটি আরো প্রকট হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদেশে, যেখানে যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে এ সমস্যা আরো জটিল। বাংলা সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "ঘরে-বাইরে" বা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলোতে আত্মীয়তার এ নামমাত্রতা প্রতিফলিত হয়েছে।
কারণসমূহ
নামমাত্র আত্মীয়তার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত, শহুরিকরণ এবং আধুনিক জীবনযাত্রা। গ্রামীণ সমাজে আত্মীয়রা একসাথে থাকতেন, কাজ করতেন এবং সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতেন। কিন্তু শহরে চলে আসার পর দূরত্ব বাড়ে, যোগাযোগ কমে যায়। ফলে আত্মীয়তা শুধুমাত্র ফোন কল বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক চাপ। আধুনিক যুগে প্রত্যেকেই নিজের কর্মজীবন নিয়ে ব্যস্ত। অর্থ উপার্জনের দৌড়ে আত্মীয়দের জন্যে সময় বা সাহায্য দেয়া কঠিন হয়ে ওঠে। উদাহরণস্বরূপ, একজন ভাই যিনি বিদেশে চাকরি করেন, তার পক্ষে দেশে থাকা আত্মীয়দের সাথে গভীর সম্পর্ক রাখা কঠিন।
তৃতীয় কারণ হলো সামাজিক পরিবর্তন। পশ্চিমী সংস্কৃতির প্রভাবে ব্যক্তিবাদ বাড়ছে। লোকেরা নিজের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, আত্মীয়তাকে দায়িত্ব হিসেবে দেখে না। এছাড়া, বিবাহবিচ্ছেদের হার বাড়ায় পরিবারের কাঠামো ভেঙে যায়, যা’ আত্মীয়তাকে নামমাত্র করে তোলে।
চতুর্থত, মানসিক দূরত্ব। কখনো পুরনো ঝগড়া বা অভিমানের কারণে আত্মীয়রা দূরে সরে যায়। উদাহরণস্বরূপ, সম্পত্তি বিবাদে ভাই-বোনের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। এ কারণগুলো মিলিয়ে নামমাত্র আত্মীয়তা একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে উঠেছে। বিশ্বের অনেক দেশে এ সমস্যা বাড়ছে। যেমন, আমেরিকায় "হঁপষবধৎ ভধসরষু" এর ধারণা প্রচলিত, যেখানে দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়রা শুধুমাত্র উৎসবে মিলিত হয়। ভারতে, বিশেষ করে বাংলায়, যৌথ পরিবারের অবক্ষয় এ সমস্যাকে তীব্র করেছে। সামাজিক বিজ্ঞানীদের মতে, এটি একটি "ংড়পরধষ ধষরবহধঃরড়হ" এর লক্ষণ।
প্রভাবসমূহ
নামমাত্র আত্মীয়তার প্রভাব ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সামাজিক স্তরে পড়ে। ব্যক্তিগতভাবে, এটি একাকীত্ব বাড়ায়। যখন কোনো সঙ্কটে আত্মীয়রা সাহায্য না করে, তখন ব্যক্তি মানসিক চাপে পড়ে। উদাহরণস্বরূপ, একজন বয়স্ক ব্যক্তি যার সন্তানরা দূরে থাকেন, তিনি একা থাকতে বাধ্য হন; যা’ ফবঢ়ৎবংংরড়হ এর কারণ হয়। পারিবারিকভাবে, এটি পরিবারের ঐক্য নষ্ট করে। শিশুরা আত্মীয়তার মূল্যবোধ না শিখলে, তারা ভবিষ্যতে একই ভুল করবে। কেননা পরিবার হলো সমাজের মৌলিক একক, এবং আত্মীয়তা তার অনিষ্ট অংশ। আত্মীয়তার মূল্যবোধ বলতে আমরা সেই অনুভূতি, দায়িত্ববোধ এবং সহযোগিতাকে বুঝি; যা’ রক্তের সম্পর্ক বা বৈবাহিক বন্ধনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে। এটি শুধুমাত্র সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেয়া নয়; বরং একে অপরের প্রতি অটল সমর্থন এবং ভালোবাসা। কিন্তু আধুনিক যুগে এই মূল্যবোধ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে। যখন শিশুরা ছোটবেলা থেকে আত্মীয়তার গুরুত্ব শিখতে পারে না, তখন তারা বড় হয়ে একই ভুল করেÑআত্মীয়দের প্রতি উদাসীনতা, নামমাত্র সম্পর্ক এবং একাকীত্বের চক্র সৃষ্টি করে। সুতরাং শিশুকালীন শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীনকালে, ভারতীয় উপমহাদেশের যৌথ পরিবার ব্যবস্থায় শিশুরা আত্মীয়দের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বড় হতো। চাচা-মামা, দাদা-নানা, কাকা-পিসিরা সকলে একসাথে থেকে শিশুদের মনে আত্মীয়তার বীজ বপন করতেন। কিন্তু আজ শহুরিকরণ, একক পরিবার এবং ব্যক্তিবাদের প্রভাবে এ ঐতিহ্য ভেঙে পড়ছে। ফলে শিশুরা আত্মীয়দের শুধুমাত্র উৎসবের দিন দেখে, যোগাযোগের অভাবে সম্পর্ক নামমাত্র হয়। এ অভাব ভবিষ্যতে একটি দুষ্টচক্র সৃষ্টি করে, যা’ সমাজের সামগ্রিক কাঠামোকে দুর্বল করে।
কারণসমূহ
শিশুরা আত্মীয়তার মূল্যবোধ না শেখার পিছনে প্রধান কারণ হলো পরিবারের কাঠামোর পরিবর্তন। আধুনিক সমাজে অভিভাবকরা কর্মজীবন নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত যে শিশুদের সাথে আত্মীয়দের মিলনের সময় দিতে পারেন না। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলে অনেক পরিবারে বাবা-মা দু’জনেই চাকরি করেন, ফলে শিশুরা স্কুল-টিউশন এবং স্ক্রিন টাইমে ব্যয় হয়। আত্মীয়রা দূরে থাকলে ভিডিও কলের মাধ্যমে যোগাযোগ হয়; কিন্তু এটি গভীর সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। ফলে শিশুরা আত্মীয়তাকে 'অপ্রয়োজনীয়' মনে করে।
দ্বিতীয় কারণ হলো শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি। স্কুলে পড়ানো হয় গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাসÑকিন্তু নৈতিক শিক্ষায় আত্মীয়তার মূল্যবোধের উপর জোর দেয়া হয় না। বর্তমানে স্কুলগুলো প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষায় মনোনিবেশ করে, যেখানে ব্যক্তিগত সাফল্যকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ফলে শিশুরা শেখে 'নিজের জন্যে নিজে লড়াই করো', কিন্তু 'আত্মীয়দের সাথে একসাথে লড়াই করো' এ ধারণা অনুপস্থিত। সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাবও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে 'ফ্রেন্ডস' তৈরি করে, কিন্তু আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ ভুলে যায়। এ ভার্চুয়াল সম্পর্কগুলো অস্থায়ী, যা’ আত্মীয়তার স্থায়িত্ব শেখাতে পারে না।
তৃতীয়ত, অর্থনৈতিক চাপ এবং স্থানান্তর। গ্রাম থেকে শহরে বা বিদেশে চলে যাওয়ায় আত্মীয়রা ছত্রভঙ্গ হয়। শিশুরা এ দূরত্বে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে, ফলে আত্মীয়তাকে অপ্রাসঙ্গিক মনে করে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করা বাবাদের সন্তানরা দেশে থাকা আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। এ কারণগুলো মিলিয়ে শিশুরা বড় হয় 'আমরা এবং তারা' এ বিভাজন নিয়ে, যা’ ভবিষ্যতে আত্মীয়দের প্রতি উদাসীনতা জন্ম দেয়।
প্রভাবসমূহ
যখন শিশুরা আত্মীয়তার মূল্যবোধ না শিখে, তখন তারা বড় হয়ে একই ভুল করেÑআত্মীয়দের প্রতি দায়িত্বহীনতা প্রদর্শন করে। ব্যক্তিগত স্তরে, এটি একাকীত্বের কারণ হয়। এটা সত্য যে, আত্মীয়তার অভাবে যুবকদের মধ্যে বিষণ্নতার হার ৩০% বেশি। উদাহরণস্বরূপ, একজন যুবক যে ছোটবেলায় চাচা-মামাদের সাথে সময় কাটায়নি, সে বড় হয়ে তার নিজের সন্তানদেরও আত্মীয়দের থেকে দূরে রাখবে। ফলে পরিবারের ঐতিহ্য বিচ্ছিন্ন হয়।
পারিবারিক স্তরে, এটি সম্পর্কের ভাঙন ঘটায়। যেমন, সম্পত্তি বিবাদ বা সঙ্কটকালে আত্মীয়রা সাহায্য না করলে পরিবার ছত্রভঙ্গ হয়। আনুমানিক ধারণা যে, ৪০% পরিবারে আত্মীয়তার অভাবে বয়স্কদের যত্নের সমস্যা দেখা দিয়েছে। শিশুরা এ ভুল থেকে শিখে না, তাই তারা নিজেরাই একই উদাসীনতা দেখায়। সামাজিকভাবে, এটি সহযোগিতার অভাব সৃষ্টি করে। প্রাচীন সমাজে আত্মীয়রা একে অপরকে সাহায্য করত, যা’ সমাজকে মজবুত করতো। কিন্তু আজ এর অভাবে অবিশ্বাস বাড়ছে, ফলে সমাজে অপরাধ বা সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়।
আরো গুরুত্বপূর্ণ, এটি একটি প্রজন্মান্তরণ চক্র সৃষ্টি করে। আজকের শিশুরা যদি না শেখে, তারা কালকের বাবা-মা হয়ে সন্তানদেরও একই শেখাবে। ফলে নামমাত্র আত্মীয়তা একটি স্থায়ী সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে, শিশুরা সহানুভূতি শিখতে না পারলে তারা বড় হয়ে সম্পর্কের জটিলতা মোকাবিলা করতে অক্ষম হয়। এ চক্র ভাঙতে না পারলে সমাজের মূল্যবোধ ধ্বংস হয়।
এ সমস্যা বোঝার জন্যে কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক। প্রথমত, কলকাতার একটি পরিবারে রাহুল নামের একটি শিশুকে বিবেচনা করুন। তার বাবা-মা ব্যস্ত চাকরির কারণে আত্মীয়দের সাথে মিলিত হতেন না। ফলে রাহুল বড় হয়ে তার দাদু-ঠাকুমাকে একা রেখে বিদেশ চলে যায়। সঙ্কটে দাদু-ঠাকুমার কেউ ছিলো না, এবং রাহুলের নিজের সন্তানরাও একই ভুল করছে। এটি একটি সাধারণ কেস, যা’ দেখায় কীভাবে অশিক্ষা চক্র সৃষ্টি করে।
অন্য একটি উদাহরণ বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকা থেকে। ফাতেমা নামের একটি মেয়ে শহরে পড়াশোনা করতে গিয়ে আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ হারায়। বিয়ে করার পর তার শ্বশুর-শাশুড়ির সাথে সম্পর্ক নামমাত্র হয়। ফলে তার সন্তানরা আত্মীয়তার মূল্য না জেনে বড় হয়েছে। এ কেসগুলো দেখায় যে, শিশুকালীন অভাব ভবিষ্যতের জন্যে বিষাক্ত বীজ বপন করে।
সাহিত্যে এ থিম প্রতিফলিত হয়েছে। শরৎচন্দ্রের "পরিণীতা" উপন্যাসে আত্মীয়তার অভাব দেখা যায়, যা’ পরিবারের ধ্বংস ঘটায়। আধুনিক সিনেমায় "পিকু" তে বাবা-মেয়ের সম্পর্ক দেখিয়ে আত্মীয়তার গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এর অভাবের পরিণতি দেখানো হয়। এ উদাহরণগুলো প্রমাণ করে যে, শিশুরা না শিখলে চক্র অব্যাহত থাকে।
সামাজিকভাবে, এটি সমাজের সহযোগিতা কমায়। প্রাচীনকালে আত্মীয়রা একে অপরকে সাহায্য করতেন, যা’ সমাজকে মজবুত করতো। কিন্তু এখন, এ নামমাত্রতা সমাজে অবিশ্বাস বাড়ায়। অর্থনৈতিকভাবে, এটি সমস্যা সৃষ্টি করে। যেমন, কোনো ব্যক্তি অসুস্থ হলে আত্মীয় না থাকলে তাকে সরকারি সাহায্যের উপর নির্ভর করতে হয়, যা’ সমাজের বোঝা বাড়ায়। মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে একাকীত্ব একটি মহামারী হয়ে উঠেছে এবং নামমাত্র আত্মীয়তা এর একটি কারণ। বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গে এ সমস্যা আরও তীব্র। এখানে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে আত্মীয়তা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আধুনিকতার চাপে এটি হারিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বড়দিন উৎসবে আত্মীয়রা মিলিত হয়, কিন্তু বছরের অন্য সময় যোগাযোগ নেই। এটি সামাজিক বন্ধনকে দুর্বল করে।
উদাহরণ-এ বিষয়টি বোঝার জন্যে কয়েকটি উদাহরণ দেখা যাক। প্রথমত, একটি পরিবারের কথা যেখানে দুই ভাই আলাদা হয়ে গেছেন সম্পত্তি বিবাদে। তারা নামমাত্র ভাই, কিন্তু কোনো সাহায্য করে না। দ্বিতীয়ত, বিদেশ প্রবাসী আত্মীয়রা যারা শুধুমাত্র টাকা পাঠান কিন্তু মানসিক সমর্থন দেন না। তৃতীয়ত, বৈবাহিক আত্মীয় যেমন শ্বশুর-শাশুড়ি যারা শুধুমাত্র নামে
আত্মীয় কিন্তু সম্পর্কে দূরত্ব।
একটি কেস স্টাডি: কলকাতার একটি পরিবারে, একজন বয়স্ক মহিলা তার সন্তানদের সাথে থাকেন না কারণ তারা ব্যস্ত। তিনি একা থাকেন, এবং আত্মীয়রা শুধুমাত্র ফোনে খোঁজ নেন। এটি তার মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট করেছে। অন্য একটি উদাহরণ বাংলাদেশ থেকে, যেখানে গ্রাম থেকে শহরে চলে আসা লোকেরা আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ হারান।
সাহিত্যে এ থিম প্রচুর। রবীন্দ্রনাথের "নষ্টনীড়" এ আত্মীয়তার নামমাত্রতা দেখা যায়। আধুনিক সিনেমায় যেমন "পিকু" তে বাবা-মেয়ের সম্পর্কে আত্মীয়তার গভীরতা দেখানো হয়েছে, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এটি নামমাত্র।
সমাধানের উপায়
নামমাত্র আত্মীয়তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যে কয়েকটি উপায় রয়েছে। প্রথমত, যোগাযোগ বাড়ানো। নিয়মিত ফোন কল, ভিডিও কল বা মিলনের মাধ্যমে সম্পর্ক মজবুত করা যায়।
দ্বিতীয়ত, সহানুভূতি বিকাশ। আত্মীয়দের সমস্যা বুঝে সাহায্য করা।
তৃতীয়ত, পরিবারের মূল্যবোধ শিক্ষা। শিশুদের ছোটবেলা থেকে আত্মীয়তার গুরুত্ব শেখানো।
চতুর্থত, সামাজিক প্রচারণা। সরকার বা এনজিওর মাধ্যমে পরিবারের ঐক্য নিয়ে ক্যাম্পেইন চালানো।
আধুনিক প্রযুক্তি এখানে সাহায্য করতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ তৈরি করে আত্মীয়রা যোগাযোগ রাখতে পারেন। এছাড়া, কাউন্সেলিং সেশন নিয়ে পুরনো অভিমান দূর করা যায়। সমাজে যৌথ পরিবারের ধারণা পুনরুদ্ধার করা দরকার, যাতে আত্মীয়তা নামমাত্র না হয়ে বাস্তব হয়।
নামমাত্র আত্মীয়তা একটি আধুনিক সমস্যা যা’ আমাদের সমাজকে দুর্বল করছে। কিন্তু সচেতনতা এবং প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আত্মীয়তা শুধুমাত্র নামে নয়, কর্মে প্রকাশ পাক, এটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। কেননা আত্মীয়তা হলো জীবনের ভিত্তি, এটিকে নামমাত্র করে ফেললে আমরা সকলে একা হয়ে পড়বো।








