প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৫, ১১:৪১
লালসার ঘোড়া : পাললিক জীবন ও আক্ষেপের প্রতিবিম্ব

জাগতিক প্রয়োজনে আমরা ছুটে চলেছি রেসের ঘোড়ার মতো। সভ্যতার চূড়া বেয়ে উঠতে উঠতে অবলীলায় পায়ের নিচে দলে যাচ্ছি মানবীয় বসতি। আমাদের দানবীয় নিশ্বাসের তোড়ে বিলোপ হয়ে যাচ্ছে যাবতীয় সুখ ও স্বপ্নের আস্ফালন। এভাবেই লালসার ঘোড়া দিন দিন বেড়ে ওঠে, প্রবল গ্রাসের নেশায় মত্ত হয়।
তরুণ কবি শাদমান শরীফের প্রথম কাব্যগ্রন্থ লালসার ঘোড়ায় কবি চিত্রায়িত করেছেন সেই ছুটন্ত আগ্রাসী ঘোড়াকেই। সমাজ, সংসার, রাষ্ট্রÑ সবখানেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বার্থপরতার মিছিল। ঐশ্বর্য আর ভোগের পৃথিবীতে নষ্টদের আনাগোনার মধ্যেও কবি মাটিতেই “ঘুমোতে চান, নিতে চান বৃষ্টির ঘ্রাণ। জীবন পাঠে তিনি লিখেছেনÑ
‘মাটি থেকে বৃষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে শুয়ে পড়েছি মাটিতে
ভাবছি এ বেলা মাটিতেই ঘুমাবো।”
আবার কখনোবা কবি আসক্ত প্রেমিকের মতো নৈমিত্তিক পথ চেয়ে থাকেন কারো অপেক্ষায়। অনন্তকাল ধরে বটবৃক্ষ হয়ে শেকড়বাকড়সহ তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়াসে মত্ত হন তিনি। অজস্র মেকি অভিনয়ের প্রতিযোগিতায় মত্ত পৃথিবীতে তিনি একান্ত উপাস্য কারো জন্য দাঁড়িয়ে থাকেন একা। জীবন নামক অভিনয়ের নাট্যমঞ্চে দাঁড়িয়ে তিনি উচ্চারণ করেনÑ
“সমস্ত পূজারী ফিরে গেলে প্রতীক্ষার
মন্দিরে তুমি এক একান্ত ঈশ্বর
তোমার তপস্যায় মগ্ন হবো অনাদিকাল।”
জীবন পরিক্রমার স্রোত আমাদের নিয়ে যায় নানা অজানা গন্তব্যে, অজানা ঘটনার মুখোমুখি। ক্রমহ্রাসমান জীবনের বাঁকে বাঁকে খুন হতে থাকে আমাদের স্বপ্ন কিংবা চেতনার অঙ্কুর। এমন পাললিক জীবনের ভেতরে থেকে কবির কন্ঠে আক্ষেপ প্রতিধ্বনিত হয়Ñ “হায়! আমাদের আগামী জন্মগ্রহীতারা যদি জানতো/ খুন হওয়ার চেয়ে বেঁচে থাকাটা কতোটা কঠিন।”
দিন শেষে কবিতার কাছেই ফিরে যায় কবি। পারিপার্শ্বিক সমূহ অপ্রাপ্তি আর হতাশার খতিয়ান অনিশ্চিত হিসাবের খাতাতেই থেকে যায় বারবার। চিৎকার করে তিনি বলেনÑ
“মেজাজটা বিগড়ে যায়। ইচ্ছে করে
ইহজগৎ ছেড়ে চলে যাই। মুনকার-নাকীরের
ডাকাডাকি প্রশ্ন-উত্তর, বেহেশত-দোযখ
কোলাহল আর কোলাহল।”
লালসার ঘোড়া আমাদের যাপিত জীবন ও বাস্তবতার এক ধারাবাহিক দিনলিপি। ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে থাকা তিক্ততার কথা বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে কবিতার কলমে। শাদমান শরীফের কবিতা কখনো প্রেম নিয়ে আসে, কখনো বিরহ অথবা নাগরিক জীবনের মুখরিত বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে থাকা কদর্য রুপের পর্দা উন্মোচিত হয়ে বাস্তব প্রতিবিম্ব হিসেবে ধরা দেয় আমাদের চোখে।
যারা কবিতায় দিন যাপন করেন, কবিতায় খুঁজে বেড়ান বিচিত্র অনুভূতির সম্ভার, তারা বইটি পড়তে পারেন। বইটিতে মোট ৫০ টি কবিতা রয়েছে। ৫৬ পৃষ্ঠার এ বইটি প্রকাশ করেছে চৈতন্য প্রকাশন। প্রচ্ছদ করেছেন নির্ঝর নৈঃশব্দ্য। মুদ্রিত মূল্য ১৮০ টাকা।