শনিবার, ০৭ জুন, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২৫, ০০:৫১

খাইট্টা কেনার ধুম শ্রীনগরে!

-কুরবানিকে ঘিরে জমজমাট মৌসুমি ব্যবসা

আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী
খাইট্টা কেনার ধুম শ্রীনগরে!

ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ ঘিরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলায় রীতিমতো খাইট্টা কেনার উৎসব চলছে।

গরু, ছাগল কেনার পর এবার কোরবানির জন্য দরকারি একটি অনিবার্য উপকরণ হয়ে উঠেছে খাইট্টা

রাস্তাঘাটের পাশে, বাজারের মোড়ে, এমনকি পুরাতন ভাঙ্গারি দোকানের সামনেও জমজমাট হয়ে উঠেছে এই মৌসুমি সরঞ্জামের বিকিকিনি।

“দা-বটি-ছুরি না হলে চলে, কিন্তু খাইট্টা তো লাগবেই!”

শুধুমাত্র কোরবানির পশু জবাই নয়, তা কেটে, টুকরো করে সংরক্ষণের জন্য খাইট্টার গুরুত্ব অপরিসীম। স্থানীয় হাটে গিয়ে দেখা গেল, কেউ এক হাজার টাকায় নতুন ঝকঝকে খাইট্টা কিনছেন, কেউবা চারশ টাকা দিয়ে পুরোনো একটা ভালো মানের খাইট্টা তুলে নিচ্ছেন।
হাবিবুর রহমান, যিনি ঢাকার গাবতলী হাট থেকে দেড় লক্ষ টাকায় একটি ষাঁড় কিনেছেন, জানান:
“মাংস কাটতে তো খাইট্টা লাগবেই। আমি ৫০০ টাকা দিয়ে একটা মাঝারি খাইট্টা কিনেছি। ওজন ভালো, হাতেও সুবিধা।”

ভাঙ্গারির দোকানেও ঈদের হাওয়া

ঢাকা-দোহার সড়কের পাশের পুরনো ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্দুস সালাম খান জানালেন,
“আমি ভাঙ্গারির ব্যবসা করি। তবে ঈদ এলে খাইট্টা নিয়ে বসি। মানুষ প্রচুর নিচ্ছে। সারা পাচ্ছি ভালোই।”

তিনি জানান, প্রতি বছরই ঈদের ক'দিন আগে তিনি কিছু ভাঙারি খাইট্টা রিফার্বিশ করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রাখেন।

রাস্তার পাশে ছোট্ট দোকান, বড় বিক্রি

শ্রীনগর উপজেলার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দোকানের পাশে, চায়ের দোকানের সামনে অস্থায়ী খাইট্টা বিক্রির দোকান বসেছে।

হাতে ধরা রুস্ট করা লোহা, কিছু হাতে তৈরি, কিছু পুরোনো গাড়ি বা রেললাইনের লোহার অংশ কেটে বানানো।

কেন এত চাহিদা খাইট্টার?

স্থানীয় একজন মৌসুমি বিক্রেতা বললেন,
“মানুষ তো এখন ঝুঁকি নিতে চায় না। বাজারে যারা গরু কিনেছে, তারাই চায় একবারেই ভালো খাইট্টা। আমাদেরও বিক্রি বেড়েছে। দিনে কমপক্ষে ২০-৩০টা খাইট্টা বিক্রি হচ্ছে।”

খাইট্টা বাজারে মূল্য তালিকা:

খাইট্টার মান দাম (টাকা) উৎস
নতুন হাতলসহ ঝকঝকে খাইট্টা ৮০০-১০০০ স্থানীয় কারিগর
মাঝারি মান ৪০০-৬০০ পুনর্ব্যবহৃত লোহা
ভাঙ্গারির পুরোনো খাইট্টা ২০০-৩৫০ রিফার্বিশড

স্থানীয় কারিগরদের হাত ধরে রুজি

শুধুমাত্র ব্যবসায়ী নয়, খাইট্টা তৈরি করে দিন আনে দিন খায় এমন অনেক কারিগর এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।

উপজেলার দক্ষিণ পাইকপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান,
“আমরা তিন ভাই মিলে ৫০টা খাইট্টা বানিয়েছি। সব বিক্রি হয়ে গেছে। ঈদের আগে আবার বানাতে বসেছি।”

কেনার পাশাপাশি সার্ভিসও

বাজারে এখন দেখা যাচ্ছে, অনেক দোকানদার খাইট্টা শান দিতে শান মেশিনও নিয়ে বসেছেন। খরচ ৫০ থেকে ১০০ টাকা।

যারা পুরোনো খাইট্টা ব্যবহার করেন, তারাও ভিড় করছেন শান দিতে।

শেষ কথা

শ্রীনগরের খাইট্টা বাজার কেবল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়, বরং এটি ঈদের প্রস্তুতির এক আবশ্যিক অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে। এই মৌসুমি ব্যবসা শুধু বিক্রেতাদেরই নয়, ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে এক ধরনের লোকজ উৎসবের চেহারা নিয়েছে।

"খাইট্টা ছাড়া কোরবানি কল্পনাই করা যায় না!"

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়