বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০২:১৭

প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকবিহীন জেলার ১২ সরকারি হাই স্কুল

শিক্ষক ও কর্মচারী সংকটে পাঠদান ব্যাহত

মির্জা জাকির
শিক্ষক ও কর্মচারী সংকটে পাঠদান ব্যাহত

চাঁদপুর জেলা সদরের তিনটিসহ সবক'টি উপজেলায় সরকারি হাই স্কুলে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই। এসব প্রতিষ্ঠান চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। জেলায় ১২ টি সরকারি হাই স্কুল রয়েছে। গত কয়েক বছরে এসব স্কুলে গড়ে তোলা হয়েছে বিশাল একাডেমিক ভবন হতে শুরু করে নানা স্থাপনা। অথচ প্রতিটি স্কুলে শুধু প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকেরই সংকট নয়, রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক সংকটও। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী সংকটে পাঠদানসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। দেখা যায়, কম্পিউটার ল্যাবসহ বিজ্ঞানাগার আছে, অথচ কোনো কোনো স্কুলে ওই বিষয়ের শিক্ষক পদ খালি রয়েছে। তাই এসব বিষয়ে পাঠদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। অথচ এসব সমস্যা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না।

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হারে সেরা স্কুল, জেলা সদরের হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মো. মমিনুল হক সর্দার। ডাবল শিফটের এ বিদ্যালয়টিতে সহকারী প্রধান শিক্ষক দুজন থাকার কথা থাকলেও নেই একজনও। এবার জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তিতে সেরা স্কুল মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক শিরিন আক্তার। শূন্য আছে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের দুটি পদই। জেলা সদরের আরেকটি স্কুল গভ. টেকনিক্যাল হাই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) সালমা বেগম।

হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র শিক্ষক মো. বিল্লাল হোসেন পাটোয়ারী, হাইমচর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) প্রবীর চক্রবর্ত্তী। নতুন জাতীয়করণকৃত মতলব জেবি সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. জাভেদ। ছেঙ্গারচর সরকারি মডেল হাই স্কুলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী প্রধান শিক্ষক বেনজীর আহামেদ।

কচুয়া শহীদ স্মৃতি গার্লস হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষিকা রাবেয়া খাতুন। কচুয়া সরকারি পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক মো. মামুনুর রশিদ। হাজীগঞ্জ মডেল পাইলট সরকারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক হোসাইনুল আজম। ফরিদগঞ্জ এ আর পাইলট হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক হাসিনা আক্তার। শাহরাস্তি বহুমুখী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী শিক্ষক মো. ইমাম হোসেন।

এছাড়া প্রতিটি সরকারি হাই স্কুলে সহকারী শিক্ষকেরও অনেক পদ শূন্য রয়েছে। সরকারি হাই স্কুলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী শিক্ষক জানান, প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষক না থাকায় যিনি ভারপ্রাপ্ত প্রধান বা সহকারী প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, তাকে অনেক সহকর্মী মেনে নিতে পারেন না। যে কারণে কোনো কোনো স্কুলে প্রশাসনিক কঠোরতা শূন্য পর্যায়ে রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার হালে অবনতি হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

এসব বিষয়ে জেলা সদরের গভ. টেকনিক্যাল হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা সালমা খাতুন জানান, তাঁর স্কুলে ২৭ জন শিক্ষকের স্থলে ১৯ জন শিক্ষক আছেন। এর মধ্যে অনেকে বদলি হয়ে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ে জয়েন করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকছেন। এ হাই স্কুলের ইংরেজি বিষয়ের একজন শিক্ষক এ রকম ওই স্কুলে যোগদান করে মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে চলে যাওয়ার পর তার নির্ধারিত সময়ের ছুটি শেষ হয়ে গেলেও তিনি আজো স্কুলে যোগদান করেননি। শুধু তাই নয়, ওই শিক্ষকের সাথে ফোনেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ রুহুল্লাহ শিক্ষক সঙ্কট ও তাঁর প্রশাসনিক দফতরে উপজেলা ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের তীব্র সংকটের কথা স্বীকার করেন। তিনি বিষয়টি শিক্ষা অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়