বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:৫৯

আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে অল্প বয়সী ধূমপায়ীদের সংখ্যা-শেষ

আশা জাগানিয়া কর্মসূচি নিতে হবে ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ।।
আশা জাগানিয়া কর্মসূচি নিতে হবে ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে
ধূমপান এবং মাদক থেকে ফিরতে একজন ধূমপায়ী ও মাদকসেবী মমতার হাত বাড়ানোর প্রতি ইঙ্গিত করেছেন ছবিতে।

এই দেশ এই জাতি এই সমাজ এই পরিবার আমার আমাদের। আমাদের সামগ্রিক সদিচ্ছা এবং সামাজিক সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিনির্মাণে সুস্থ পরিকল্পনা ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়তে সহায়তা করবে। সেজন্যে ধূমপানের উপকরণ সীমিতকরণের প্রচেষ্টা সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। পর্যায়ক্রমে ধূমপানের মতো বৈধ নেশাকে নিরুৎসাহিত করতে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। এর পাশাপাশি অবৈধ নেশা মাদকের সরবরাহ শূন্যের কোঠায় পৌঁছাতে যথাযথ আইনের ব্যবহার এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা কার্যকরভাবে সাজাতে হবে। সিগারেটের প্রচারণামূলক পোস্টার প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে। এমনটাই মনে করেন সমাজের ভুক্তভোগী পিতা-মাতা, পরিবার এবং বাসযোগ্য সমাজ তৈরিতে চেষ্টারত ব্যক্তিবর্গ।

ধূমপান ও মাদকের কুফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের সকল সেবামূলক প্রতিষ্ঠান, রেডিও, টেলিভিশন, সকল প্রকার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারণা এবং সেমিনার সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে ধূমপান ও মাদকের ক্ষতিকর বিষয়গুলো জনসম্মুখে ব্যাপকভাবে প্রচারের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে সচেতনতামূলক সংবাদ বুলেটিন, তথ্য নির্ভর ডকুমেন্টারি, পোস্টার, ফেস্টুন, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত ধূমপান ও মাদকের বিভিন্ন নেতিবাচক তথ্যের রঙ্গিন প্রচারণা,

স্বাস্থ্যঝুঁকির বাস্তব চিত্র, আর্থিক ক্ষতির প্রভাব, ধূমপান ও মাদকের ধর্মীয় বিধিনিষেধ, সামাজিক সম্মানের অবস্থান ইত্যাদি প্রচারণায় থাকতে পারে।

ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ে তুলতে তরুণদের ব্যাপক কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসতে কর্মবান্ধব পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। সে জন্যে কারিগরি প্রশিক্ষণের পরিবেশ সহজতর করে তরুণদের দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি এবং প্রশিক্ষণের অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে। এর পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার পর্যাপ্ত সুযোগ থাকতে হবে।  

পারিবারিক বন্ধন, অভিভাবকদের নজরদারি, পিতা-মাতা এবং সন্তানের মাঝে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, ভালো বন্ধু নির্বাচন ইত্যাদি একজন ধূমপায়ী ও মাদকসেবীকে ধূমপান এবং মাদকের করালগ্রাস থেকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করতে পারে। সমাজের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ সকল কাজে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগকে সহায়তা করে এর সফল বাস্তবায়ন করতে পারে। তাহলে ধাপে ধাপে ধূমপায়ী এবং মাদকসেবী সমাজের মূল ধারায় ফিরে আসবে। আমাদের প্রজন্ম হবে প্রাণচঞ্চল, কর্মমুখী এবং নিরাপদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন চেইন স্মোকার বলেন, ধূমপান অভ্যাস বা নেশায় পরিণত হলেও এটা পরিহার করা বা বাদ দেয়া কঠিন কাজ নয়, সিদ্ধান্তের ব্যাপার। আমাদের প্রতি সমাজের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দরকার। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রমজানে যেভাবে সারাদিন ধূমপান ছাড়া থাকতে পারি, সেটা সিদ্ধান্ত নিলে সারা বছরই থাকতে পারবো।

এ ব্যাপারে মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিলাতলী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ এমএ বাশার বলেন, মহান রবের দেয়া এই সুন্দর ঠোঁটে মাদক এবং সিগারেট নেয়ার মতো নিষিদ্ধ বাজে অভ্যাস একদিনে তৈরি হয়নি। এর জন্যে আমাদের সামাজিক কাঠামো এবং রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ বিষয়ে যে আইন রয়েছে তার যথাযথ প্রয়োগ দরকার। তিনি আরও বলেন, মহান আল্লাহ মাদক নিষিদ্ধ করেছেন চারটি ধাপে। আমাদের প্রজন্মকেও আমরা সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে ধূমপায়ী ও মাদকসেবীদের সমাজের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে দায়িত্ব পালন করতে পারি। সে জন্যে ব্যক্তি পর্যায়ে আত্মশুদ্ধি, তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে চারিত্রিক পরিশুদ্ধতার পরিবেশ দিতে হবে তরুণ প্রজন্মকে। এর পাশাপাশি মাদকের সরবরাহ বন্ধে সীমান্ত সীলগালা করার পরামর্শ রাখেন তিনি।

  

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চাঁদপুর-এর সহকারী পরিচালক মু. মিজানুর রহমান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে বলেন, মূলত তামাক গ্রহণের মাধ্যমে একজন ধূমপায়ী মাদকের জগতে প্রবেশ করে। আমরা ধূমপান এবং মাদক প্রতিরোধে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত সচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করে থাকি। এর মাধ্যমে তরুণদের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা তৈরি হচ্ছে বলে আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতা নিয়ে এ আন্দোলনে সফল হবো ইনশাআল্লাহ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়