বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৪১

রাজাপুরের বিষখালীতে ভাটির টানে হঠাৎ ভাঙ্গন

বিলীন হচ্ছে মানকি-সুন্দর ও বাদুরতলা গ্রাম

ঝালকাঠি প্রতিনিধি
রাজাপুরের বিষখালীতে ভাটির টানে হঠাৎ ভাঙ্গন

ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী মানকি ও সুন্দর গ্রামজুড়ে বিষখালী নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে প্রতিনিয়ত বিলীন হচ্ছে মানুষের বসতভিটা, কৃষিজমি ও স্মৃতিবিজড়িত ভিটেমাটি। ভাটির টানে গত ক'দিনে কয়েক একর এলাকা নদীর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। বহু বছর ধরে ভাঙ্গনে গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে গেছে। অথচ নেই কোনো কার্যকর প্রতিরোধ-উদ্যোগ।

মানকি গ্রামের হৃদয়, সোহাগ ও সজল জানান, উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের আওতাধীন সুন্দর গ্রামটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, বিদ্যালয়সহ স্থাপনা। এখন মাত্র একটি বাড়ি টিকে আছে, সেটিই গ্রামের অস্তিত্বের শেষ চিহ্ন। উপজেলার নাপিতেরহাট ফকিরবাড়ি এলাকার বহু মানুষ ইতোমধ্যে বসতভিটা হারিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। খালেক হাওলাদার নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত জানান, নদী ভাঙ্গনের ফলে মানকি গ্রামের শত শত পরিবার এখন চরম দুর্ভোগে। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি কিংবা অস্থায়ীভাবে অন্যত্র। জীবিকার অনিশ্চয়তায় হতাশ হয়ে পড়েছেন দিনমজুর ও কৃষিজীবীরা।

ইয়াসিন মোল্লা, রাকিব ও আকাশ হাওলাদার জানান, খরস্রোতা বিষখালী নদীর ভাটির টানে প্রতিদিন ভেঙ্গে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। গত ক'দিন ধরে মানকি, সুন্দর ও বাদুরতলা এলাকায় ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করেছে। নদী তীরের মানুষ আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন যে কোনো মুহূর্তে ভিটেমাটি নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বারবার প্রশাসনকে জানালেও এখনো নদী রক্ষা বাঁধ বা জিও ব্যাগ ফেলার মতো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। ফলে তাদের মনে হতাশা আর ক্ষোভ দুটোই বাড়ছে।

মানকি গ্রামের ইকবাল হোসেন নয়ন জানান, মানকি লঞ্চঘাটের রাস্তার পূর্ব পাশে হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে রক্ষা করা না গেলে পুরো রাস্তা ও ঘাট বিলীন হয়ে যাবে। ওই এলাকার শিপন খলিফা জানান, নদীতীরের মাটি ইট ভাটায় কেটে নিয়ে যাওয়ায় নদীতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। মাটি কাটা বন্ধ করতে প্রশাসনের নজরদারি জরুরি। ক্ষতিগ্রস্তরা বলেন, নদীভাঙ্গনে জমি-ঘর সব গেছে, এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো বুঝতে পারছি না। সরকার যদি কিছু না করে, সামনে হয়তো পুরো মানকি গ্রামটাই নদীতে মিলিয়ে যাবে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে নদী রক্ষা প্রকল্প না নিলে রাজাপুরের মানকি ও সুন্দর অঞ্চল মানচিত্র থেকেই হারিয়ে যাবে।

ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম নিলয় পাশা বলেন, ভাঙ্গন-কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে শিগগিরই সরকারের কাছে চাহিদা পাঠাবো। আর যত দ্রুত সম্ভব জিও ব্যাগ বা বাঁধ পুনরায় নির্মাণসহ ভাঙ্গন রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার চেষ্টা করা হবে। স্থায়ী বাধ নির্মাণের জন্যে অনেক আগেই প্লান পাঠিয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আরা মৌরি জানান, ভাঙ্গন কবলিত জায়গাগুলোর বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ভাঙ্গনরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। মাটি কাটার বিষয়েও আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়