শনিবার, ০৫ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৫, ১২:৫৬

নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি

চাঁদপুরসহ ২১ জেলার জেলা প্রশাসক পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত

অনলাইন ডেস্ক
চাঁদপুরসহ ২১ জেলার জেলা প্রশাসক পরিবর্তনের নীতিগত সিদ্ধান্ত

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তনের প্রস্তুতি শুরু করেছে সরকার। এর মধ্যে মাঠ প্রশাসনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত জেলা প্রশাসক (ডিসি) পর্যায়ে আগামী কিছুদিনের মধ্যে কিছু রদবদল করা হতে পারে। আর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময় এ পদে ব্যাপক রদবদল হবে। এ লক্ষ্যে এখন যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই (ফিট লিস্ট) করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো বলছে, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পাওয়া ২১ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাইয়ের কাজটি শেষ হলেই তাঁদের পরিবর্তন করা হতে পারে। বাছাইয়ের কাজটি শেষ হতে পারে এই মাসের মধ্যে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, যেহেতু সামনে জাতীয় নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আয়োজন রয়েছে, তাই মাঠ প্রশাসনের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ‘যোগ্য’ কর্মকর্তাদের পদে আনার চেষ্টা চলছে। এবার নতুন করে ২৮তম বিসিএসের প্রশাসন ক্যাডারের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তাকে ডিসি পদে নিয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। বাছাই তালিকা তৈরির জন্যে ২১ জুন ২৮তম ব্যাচের বেশ কিছুসংখ্যক কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে ২৪তম, ২৫তম এবং ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা ডিসি পদে দায়িত্বে আছেন। এর মধ্যে ২৪ ও ২৫তম বিসিএসের কর্মকর্তারা বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের (২০০১-০৬) আমলে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। এক-এগারোর পটপরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (২০০৭-০৮) ২৭তম বিসিএসের কর্মকর্তারা চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।

সরকারি ভাষ্য—বদলি, পদায়ন ও পদোন্নতি একটি নিয়মিত প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ। যদিও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বদলির সময় ও প্রেক্ষাপট স্পষ্টভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতিরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে আলোচনা আছে তাতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে পারে, এমনটি ধরে নিয়েই এ প্রস্তুতির কাজ চলছে।

বিগত সরকারও নির্বাচনের কয়েক মাস আগে অনেক জেলায় ডিসি পদে পরিবর্তন এনেছিলো। অবশ্য গত বছর গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের ডিসিদের প্রত্যাহার করে পর্যায়ক্রমে সব জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেয় সরকার। তবে এ নিয়োগ নিয়ে সচিবালয়ের ভেতরে কর্মকর্তারা হাতাহাতি, হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। তখন ৯ জন ডিসির পদায়ন বাতিল করা হয়েছিল। রদবদল করা হয়েছিল চার জেলার ডিসিকে।

যেসব জেলায় পরিবর্তন হতে পারে

২১ জেলায় বর্তমানে যাঁরা ডিসির দায়িত্বে আছেন, তাঁরা গত মার্চে উপসচিব থেকে পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়েছেন। তবে ডিসির পদটি উপসচিব পদমর্যাদার। ফলে এই জেলাগুলোতে বদলির সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

এই জেলাগুলো হলো : হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, কক্সবাজার, ঝিনাইদহ, পঞ্চগড়, মাগুরা, সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, নোয়াখালী, চাঁদপুর, পিরোজপুর, চুয়াডাঙ্গা, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, ঢাকা, মাদারীপুর, গাইবান্ধা, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাট। এসব জেলার ডিসিরা ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তা। ডিসি পদে এই ব্যাচের ২৬ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের পদোন্নতি হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বলছে, ২৪তম বিসিএসের কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে সেখানে নতুন ডিসি নিয়োগের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত আছে। একই সঙ্গে আরও কিছু জেলায়ও পরিবর্তন আসতে পারে।

এ ছাড়া আপত্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় শরীয়তপুরের ডিসিকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। ফলে এই জেলায় নিয়মিত ডিসি নেই। স্বাভাবিকভাবে এই জেলাতেও পরিবর্তন আসবে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান গত বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসক পর্যায়ে পরিবর্তনের প্রক্রিয়া চলছে। যখন যে জেলায় প্রয়োজন হবে সেখানে ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। সামনে হয়তো ৪-৫ জন ডিসি বদল হতে পারে। এর মধ্যে শরীয়তপুরে অবিলম্বে একজন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এ ছাড়া বাছাই তালিকা হয়ে গেলে যাঁরা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন তাঁদের জায়গায় নতুন ডিসি দেওয়া হবে।

জনপ্রশাসন সচিব বলেন, যাতে বিতর্কের সুযোগ না থাকে সে জন্যে খুব নিবিড়ভাবে বাছাই করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যাঁদের বিরুদ্ধে অতীতে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পেশাদার ও সর্বোচ্চ যোগ্য লোককে বাছাই করা হচ্ছে। যোগ্য কর্মকর্তা বাছাই করাও একটি কঠিন কাজ। এ জন্যে একটু সময় লাগছে। তবে জুলাইয়ের মধ্যেই বাছাই কাজ শেষ করা হবে।

আগামী নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকবেন কি না সে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানায়নি।

এরই মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র স্থাপনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) প্রধান করে কমিটি করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। এই সংশোধনী এনে সম্প্রতি ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন এবং ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০২৫’ গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইসির নিজস্ব কর্মকর্তারাই ভোটকেন্দ্র স্থাপন করবেন। আগে ইসির কর্মকর্তারাই এ কাজটি করতেন। কিন্তু গত নির্বাচনে ইসি প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের এই কাজে যুক্ত করেছিল, যা নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছিল। এবার সেই ক্ষমতা ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে ইসির কর্মকর্তাদের হাতে।

অবশ্য বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রশাসন ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তাই নির্বাচনী দায়িত্বে থাকতে অনিচ্ছুক। তাঁরা মনে করেন, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের পর অনেক সময় বিশেষ করে সরকার পরিবর্তন হলেই ঢালাওভাবে ওএসডি বা বাধ্যতামূলক অবসরের মতো সিদ্ধান্তের মুখে পড়তে হয়। অথবা কম গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি করা হয়। পদোন্নতিতেও অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে অনেকেই নির্বাচনী দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চান। তবে সরকারি সিদ্ধান্ত হলে দায়িত্ব পালন ছাড়া উপায়ও থাকে না।

আগে বিরোধী দলগুলো অভিযোগ করতো, ক্ষমতাসীন সরকার নির্বাচনের সময় পছন্দের কর্মকর্তাদের ডিসি পদে বসিয়ে প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। যদিও এবার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন যারা মাঠে আছে তার মধ্যে প্রায় সব রাজনৈতিক দল গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি। গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম (জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নিবন্ধনও স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর ফলে আগামী নির্বাচনে দলটিকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।

বিশ্লেষকদের মতে, এখন নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই জেলা প্রশাসকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচন ছাড়াও জেলায় ডিসিদের অনেক ধরনের দায়িত্ব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয়সহ জেলার প্রায় সব সরকারি কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকেন ডিসিরা। এসব পদের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন, তাঁদের ওপরই জেলার অনেক কিছু নির্ভর করবে। ফলে কেবল নির্বাচন নয়, সব সময়ের জন্যেই ডিসি ও এসপির মতো পদগুলোতে নিরপেক্ষ ও দক্ষ কর্মকর্তা থাকা জরুরি। সূত্র : প্রথম আলো।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়