রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

নিষিদ্ধ সব উপকরণ ঠেকান, মৎস্য বিভাগ শক্তিশালী করুন

অনলাইন ডেস্ক
নিষিদ্ধ সব উপকরণ ঠেকান, মৎস্য বিভাগ শক্তিশালী করুন

নিয়ন্ত্রণহীন অসাধু জেলেরা পদ্মা-মেঘনা নদীতে জাটকা, বাইলা ও পাঙ্গাশের পোনা নিধন করে চলছে। এ ব্যাপারে মির্জা জাকির চাঁদপুর কণ্ঠে পরিবেশিত সংবাদে লিখেছেন, জাটকাসহ বিভিন্ন প্রজাতির রেণু ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে কোনোভাবেই নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না জেলেদের। প্রতিদিন নদীতে অভিযানে আটক করা হচ্ছে এবং জাল পোড়ানোও হচ্ছে। তারপরও আসাধু জেলেরা অনেকটা বেপরোয়া হয়ে জাটকা শিকারে নদীতে নামছে। এক শ্রেণীর জেলে আইন না মেনে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই জাটকাসহ অন্য রেণু মাছও ধরছে। জাটকার সাথে এখন বাইলা ও পাঙ্গাশের পোনাও নিধন চলছে ফ্রি স্টাইলে। চাঁদপুর থেকে সড়ক ও নৌ রূটে ট্রলার, পিকআপ এবং কাভার্ড ভ্যানে করে শত শত মণ জাটকা, বাইলার পোনা ও ছোট ছোট পাঙ্গাশ পোনা ঢাকাসহ বিভিন্নস্থানে পাচার হচ্ছে। গত তিনদিন আগে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া থেকে মতলব উত্তরে সিএনজি অটোরিকশাযোগে পাচারকালে ২ হাজার ৬০ কেজি জাটকা জব্দ করেছে কোস্টগার্ড। এখন প্রতিদিন কম্বিং অপারেশন টিম জাটকা ধরাকালে জেলেদের আটক করছে। চাঁদপুর শহরসহ উপজেলা সমূহের গ্রামে-গঞ্জে হকারি করে বিভিন্ন বাজারে জাটকা প্রকাশ্যে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন শত শত নৌকা ও ট্রলার নদীতে নামছে এবং নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরছে। এর জন্যে কর্তৃপক্ষের তদারকি ও পর্যাপ্ত প্রচারণার অভাবকে দায়ী করছেন মৎস্য পেশাজীবী, সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। তবে জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র বলছে, তাদের কম্বিং অপারেশন টিম প্রতিনিয়ত নদীতে অপারেশন কার্যক্রম চালাচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জাটকা অধ্যুষিত মতলব-চাঁদপুর-হাইমচরের মেঘনা নদীতে অবাধে জাটকা ধরছে জেলেরা। শুধু তাই নয়, পাঁচণ্ডসাত ইঞ্চি সাইজের পাঙ্গাশের পোনাও নিধন করছে। আর অসাধু ব্যবসায়ীরা কৌশলে বিভিন্ন বাজারে এসব জাটকা, পাঙ্গাশের পোনা ও বাইলার পোনা বিক্রি করছে। এছাড়া চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের আশপাশের মেঘনা নদীতে কিছু জেলে বড়শি দিয়ে মাছ ধরছে। তাদের বড়শিতে ছোট ছোট পাঙ্গাশ পোনা ধরা পড়ায় সেই মাছ শহর এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে বিক্রি করতেও দেখা যাচ্ছে। পর্যবেক্ষক মহলের মতে, জাটকা বড় হলে পূর্ণাঙ্গ ইলিশে এবং পাঙ্গাশের পোনাগুলো বড় হবার সুযোগ পেলে বড় আকৃতির পাঙ্গাশে পরিণত হতো। পাশাপাশি বাইলার পোনাগুলোও অনেক বড় হতো। অথচ মৎস্য বিভাগের নজর নেই সেই দিকে-এমনটি বললেন মেঘনা নদীর কাছে বসবাসকারী রামদাসদীর কালাম ছৈয়াল।

জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার একলাশপুর থেকে শুরু করে বোরোচর, আমিরাবাদ, চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর, তরপুরচণ্ডী, কল্যাণপুর, রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের নদী এলাকা, শহরের যমুনা রোড, টিলাবাড়ি, পুরাণবাজার হরিসভা রনাগোয়াল, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দোকানঘর, রামদাসদী খাল, বহরিয়া লক্ষ্মীপুর, হরিণা ফেরি ঘাট সংলগ্ন খাল, আখনের হাট, মেঘনার পশ্চিমে ইব্রাহিমপুর চর এলাকা এবং হাইমচর উপজেলার বিস্তীর্ণ নদী জুড়ে অগণিত জেলে নদীতে নামছে এবং জাটকাসহ অন্য মাছের রেণু নিধন করেছে।

সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মৎস্য বিভাগ তথা টাস্কফোর্সের অভিযানের ফাঁক-ফোকরে যারাই নির্বিচারে জাটকাসহ অন্য প্রজাতির রেণু মাছ নিধন করে চলেছে, মূলত তারাই ইলিশসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ উৎপাদন হ্রসের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে নভেম্বর থেকে আট মাস নদীতে জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে জাটকা ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় বা মজুদ করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসবের তোয়াক্কা না করে নদী তীরবর্তী রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী কতিপয় নেতার যোগসাজশে জেলেদের দিয়ে নদীতে জাটকা নিধন করার অভিযোগ ওঠেছে। দেখা যাচ্ছে, রাতভর জাটকা ধরার পর চিহ্নিত কিছু লোক রাত দশটার পর এবং ভোরবেলায় জাটকা ক্রয়-বিক্রয়ে মেতে রয়েছে। জাটকার পরিমাণ বেশি হলে ট্রলারে নদী পথে ও গাড়ি দিয়ে সড়কযোগে পাচার করছে। এই জাটকা মাছ ক্রয়-বিক্রয় করে কিছু লোক ইতোমধ্যে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গত বছর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা ধরার অপরাধে রেকর্ড পরিমাণে জেলে আটক হয়ে কারাগারে গেছেন। বিপুল পরিমাণ জাল নৌকা ও জাটকা মাছ জব্দ হয়েছে গেল বছর। এসব বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসানের সাথে। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, জাটকা নিধনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কম্বিং অপারেশন অব্যাহত আছে। তবে ভাটি অঞ্চল থেকে ধৃত বেশি জাটকা এখানে নৌপথে আসে বলে তিনি দাবি করেন। জাটকাসহ অন্যান্য রেণুু নিধনের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রজাতির জাল ব্যবহারের বিষয়ে এখানে চারটি ধাপে কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।

আমাদের জানা মতে, কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা, মশারি জাল দিয়ে বাইলার পোনা এবং চায়না চাঁই ও বড়শি দিয়ে পাঙ্গাশের পোনা নিধন করা হচ্ছে। মৎস্য নিধনের এসব উপকরণ মৎস্য আইনে নিষিদ্ধ। তারপরও অবৈধভাবে আমদানি ও উৎপাদন হচ্ছে এবং বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। এই পাওয়া যাওয়াটাকে পুরোপুরি ঠেকাতে না পারলে নদীতে জাটকা, বাইলা ও পাঙ্গাশের পোনা নিধনবিরোধী অভিযান পঞ্চাশ ভাগ সফল হবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। আর এই অভিযান স্বাবলম্বিতার সাথে জোরদার করার জন্যে মৎস্য বিভাগকে স্পীড বোট, রেসকিউ বোট সহ প্রয়োজনীয় নৌযান ও উপকরণ, নিরস্ত্র ও সশস্ত্র জনবল দিয়ে শক্তিশালী করতে হবে। অন্যথায় নদীর মৎস্য রক্ষার কাজটা ফুটো কলসিতে পানি ঢালার মতোই ব্যর্থ প্রয়াস হবে বলে আমরা মনে করি।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়