প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩, ০০:০০

চাঁদপুর জেলার উপজেলাগুলোর মধ্যে ফরিদগঞ্জে যে তুলনামূলক উন্নয়ন কম হয়েছে, সেটি শাসকদল তথা সরকারি দলের লোকজনই বলাবলি করেন। এমন বলাবলির অন্যতম সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়, যখন পরিত্যক্ত ভবনে কোনো অফিসের কার্যক্রম চলতে দেখা যায়। চাঁদপুর কণ্ঠে মঙ্গলবার প্রকাশিত 'ফরিদগঞ্জে পরিত্যক্ত ভবনে চলছে রেজিস্ট্রি কাজ ॥ আতঙ্ক নিয়ে চলছে কার্যক্রম' শীর্ষক সংবাদে এমরান হোসেন লিটন লিখেছেন, গণপূর্ত বিভাগ কর্তৃক পরিত্যক্ত ঘোষিত ভবনে চলছে সমস্যায় জর্জরিত ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রারের অফিস। রাজস্ব আয়ের বড় উৎস এই অফিসটি অযত্ন, অবহেলা, সংস্কার ও নতুন ভবনের অভাবে একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পরিত্যক্ত ভবনটিতে আতঙ্ক নিয়েই চলছে নিয়মিত অফিসের কার্যক্রম। একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েও নতুন ভবনের জন্যে বরাদ্দ করানো সম্ভব হয়ে উঠেনি। চরম ঝুঁকির মধ্যে অফিসের কাজ চললেও প্রতিনিয়তই থাকতে হয় আতঙ্কে। দেশ স্বাধীনের আগে দ্বিতলবিশিষ্ট বর্তমান ভবনটি নির্মাণ করার পর মাঝে মধ্যে মেরামত ছাড়া বড় ধরনের কোনো কাজ করা হয়নি। অতি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড রুমে অল্প বৃষ্টিতেই ছাদ চুঁইয়ে পানি পড়ে। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথিপত্র ভিজে নষ্ট হয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কক্ষগুলোও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দোতলায় সাব-রেজিস্ট্রারের ব্যবহৃত কক্ষটির ছাদের পলেস্তরা উঠে রডগুলো বের হয়ে আছে। ভবনটিতে প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে পলেস্তরা--কখনও দলিলের উপর, কখনও আসবাবপত্রের ওপর, আবার কখনও কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাথার ওপর। মোট কথা, এ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আতঙ্ককে সামনে রেখে দিনের কার্যক্রম অতিবাহিত করতে হয়। যে কোনো মুহূর্তে ছাদ ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সকলে। অফিসে বিদ্যমান কক্ষগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না থাকার কারণে অফিস চলাকালীন সময়ে অফিস সহকারী, নকলনবিশ, পিয়ন, দলিল লেখক, জমির দাতাণ্ডগ্রহীতারা গা ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয়। পাবলিক টয়লেট তো দূরের কথা, অফিসে কর্মরতদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটানোর মতো সুব্যবস্থা নেই। চরম দুর্দশার মধ্যেই চলে অফিসটির কার্যক্রম।
আমাদের দেশে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রতিমাসে উন্নয়ন সভা হয়। ফরিদগঞ্জেও নিশ্চয় হয়। কথা হলো, এমন কতোটি সভায় ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসটি যে পরিত্যক্ত ভবনে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে? সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নূতন ভবন যদি অর্থ বরাদ্দের অভাবে করে দিতে না-ই পারে, তাহলে পরিত্যক্ত ভবনে জীবনহানির আশঙ্কা এড়াতে বেসরকারি মালিকানাধীন কোনো ভবন ভাড়া করে তাতে রেজিস্ট্রী অফিস চালানোর অনুমোদন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে কি আদায় করে দিতে পারে না?
এ ক্ষেত্রে জেলা রেজিস্ট্রার কতোটা ভূমিকা পালন করে চলছেন সে বিষয়েও কিন্তু কথা উঠবে, যদি ফরিদগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা আল্লাহ না করুক ঘটেই যায়। আমরা এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করছি।