রবিবার, ১১ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩, ০০:০০

চিংড়িতে জেলি-পুশ বন্ধ হতে পারে কীভাবে?
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌরুটের হরিণা ফেরিঘাট থেকে বিষাক্ত জেলি পুশকৃত আড়াই হাজার কেজি চিংড়ি মাছ জব্দ করেছে চাঁদপুর কোস্টগার্ড। ১১ জুন রোববার বিকেলে কোস্টগার্ড ঢাকা জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওইদিন আনুমানিক ভোর ৪টার সময় বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ঢাকা জোন অধীনস্থ বিসিজি স্টেশন চাঁদপুর কর্তৃক লেফটেন্যান্ট মাশহাদ উদ্দিন নাহিয়ানের নেতৃত্বে চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর হরিণা ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে একটি যাত্রীবাহী বাস তল্লাশি করে আনুমানিক ২৫০০ কেজি অবৈধ জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ জব্দ করা হয়। চিংড়ির প্রকৃত মালিক খুঁজে না পাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে চাঁদপুর সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলামের উপস্থিতিতে জব্দকৃত চিংড়ি মাছগুলো মাটিতে পুঁতে বিনষ্ট করা হয়।

চাঁদপুরে প্রায়শই কোস্ট গার্ড অবৈধ জেলিযুক্ত চিংড়ি মাছ জব্দ করছে। এজন্যে অবশ্যই তারা অনেক ধন্যবাদ পাওয়ার দাবিদার। এই চিংড়ি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা সহ সন্নিহিত জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থান থেকে চট্টগ্রাম সহ দেশের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে বিক্রির জন্যে পাচার করা হয় বিভিন্ন পরিবহনযোগে। গোপনে সংবাদ পেলে কোস্ট গার্ড বা অন্য কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা জেলিযুক্ত চিংড়ির চালান ধরতে সক্ষম হয়। অন্যথায় এগুলো বাজারে বিক্রির সুযোগ নেয় এক শ্রেণির অসাধু বিক্রেতা। আর এগুলো কিনে সহজ সরল ক্রেতারা আর্থিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি ভেজাল খাবার খেয়ে শারীরিকভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

চাঁদপুরের বাজারগুলোতে বিষাক্ত জেলি পুশকৃত চিংড়ি বিক্রির বিষয়টি সাংবাদিকদের নজরে বিশেষভাবে আনেন সাবেক সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ রায়। এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠসহ অন্যান্য গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশ নড়েচড়ে বসে। তারা অভিযান চালিয়ে জেলি পুশকৃত চিংড়ি জব্দ করার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলছে। কিন্তু সরকারের মৎস্য বিভাগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কিংবা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারার সংবাদ আমাদের জানা নেই। ফলস্বরূপ ভোক্তারা স্থানীয় বাজার থেকে সরল মনে জেলিযুক্ত চিংড়ি কিনে প্রতারিত হচ্ছে।

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে চিংড়ি রপ্তানি করে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করার কারণে বাংলাদেশে চিংড়ি একসময় 'সাদা সোনা'র উপাধি লাভ করে এবং রপ্তানিকারীদের কেউ কেউ রাতারাতি অনেক ধনী হয়ে যায়। এক সময় বাংলাদেশ থেকে চিংড়ি আমদানিকারকরা টের পান যে, বেশি মূল্যে কেনা চিংড়ির ভেতরে ছোট ছোট লোহার টুকরো কিংবা পেরেক জাতীয় কিছু ঢুকিয়ে ওজন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এতে তারা সতর্ক হলে রপ্তানিকারকদের একটি অসাধু চক্র সাদা জেলি ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা অন্য কিছু দিয়ে চিংড়ির মাথায় বা মাংসে পুশ করে ওজন বৃদ্ধির প্রয়াস চালানো শুরু করে। সেটিও ধরা খেলে দেশের অভ্যস্তরীণ বাজারে কীভাবে জেলি পুশকৃত চিংড়ি বাজারজাত করা যায়, সে প্রয়াস দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে অসাধু চক্রটি। সেই প্রয়াসের কিছু চিংড়ি মাঝেমধ্যে ধরা পড়ে, আর বেশির ভাগই ধরা পড়ার বাইরে থেকে যায়। চিংড়িতে জেলি পুশ করার চক্রটি সন্তর্পণে চলে বিধায় তাদেরকে ধরা কঠিন বলে কেউ কেউ মনে করেন। আমরা এতে দ্বিমত পোষণ করছি। কারণ, প্রযুক্তির উৎকর্ষতার যুগে খুন-ডাকাতি-ছিনতাই সহ অন্যান্য বড়ো অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধরা যেখানে পূর্বের তুলনায় সহজ হয়ে গেছে, সেখানে চিংড়িতে জেলি পুশের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধরা অসাধ্য কাজ নয়। এতে সর্ষের ভূত কিংবা কারো রহস্যজনক ব্যর্থতা রয়েছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখার অবকাশ তৈরি হয়েছে বলে আমরা মনে করি। সাথে সাথে বাজারে সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগের নিয়মিত অভিযান, আর সেটি সম্ভব না হলে বাজার কমিটি কর্তৃক বড়ো বড়ো চিংড়ি বিক্রেতাদের প্রতি নজরদারি/পর্যবেক্ষণের নির্দেশ জারির বিষয়টি বিবেচনায় রাখার ব্যাপারে মৎস্য মন্ত্রণালয় বা স্থানীয় প্রশাসনকে ভেবে দেখতে অনুরোধ জানাচ্ছি। আমরা যে কোনো উপায়ে চিংড়িতে অবৈধ বিষাক্ত জেলি-পুশ বন্ধ করতে সরকার কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করুক--ভোক্তা/ক্রেতাদের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়