প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৩, ০০:০০

বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিংকৃত জেলা হচ্ছে চাঁদপুর। সে হিসেবে চাঁদপুরের নূতন পরিচিতি হচ্ছে 'দি সিটি অব হিলশা' বা 'ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর'। এ পরিচিতিকে অর্থবহ করার জন্যে চাঁদপুরে কতো কিছুই না করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল! এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদীর দু তীরে ওয়াকওয়ে করার পরিকল্পনাও ছিলো। কিন্তু পরিকল্পনার পরি হাওয়া হয়ে গেছে, রয়ে গেছে কেবল কল্পনা। ফলে ব্র্যান্ডিংয়ের আদলে চাঁদপুর শহরসহ পুরো জেলাকে সাজাবার ভাবনা কার্যত ভেস্তেই গেছে। জেলা ব্র্যান্ডিং কমিটির নিয়মিত মাসিক সভা হওয়া দূরের কথা, দৃশ্যমান কোনো তৎপরতাও সাম্প্রতিক সময়ে চোখে পড়ে না।
এমন বাস্তবতায় গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে পাঠকের বিশেষ মনোযোগ আকর্ষণ করার মতো একটি সংবাদ কৌতূহলী পাঠকের নজর কেড়েছে। 'ডাকাতিয়া পাড়ের ওয়াকওয়ে পাল্টে দেবে শাহরাস্তির দৃশ্যপট' শিরোনামের সংবাদটিতে প্রতিবেদক মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল পরিবেশন করেছেন এমন একটি ছবি, যাতে চোখ না জুড়িয়ে পারে না চিন্তাশীল পাঠকের।
সংবাদটিতে কাজল লিখেছেন, চাঁদপুর জেলার পূর্ব সীমানার একটি সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহরাস্তি উপজেলা। হযরত শাহরাস্তি (রঃ)-এর নামে প্রতিষ্ঠিত এই এলাকায় রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্যে বিশ্বের সেরা সিদ্ধপীঠস্থান। শান্তিপ্রিয় এলাকা হিসেবে পরিচিত শাহরাস্তি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তুলনায় শাহরাস্তিতে অপরাধের সংখ্যা অনেক কম। তাই এ এলাকার আইনশৃঙ্খলা থাকে বরাবরই নিয়ন্ত্রণে। সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ এলাকা হলেও শাহরাস্তিতে নেই কোনো বিনোদনের সুবিধা। নির্মল পরিবেশে দেহ-মনকে প্রশান্তি দেওয়ার মতো একটু জায়গা খুঁজে বের করা কঠিন ছিলো শাহরাস্তিবাসীর। বিষয়টি নিয়ে বেশ ক'বার প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিকল্পনা নিয়েও ব্যর্থ হতে হয়। তবে শাহরাস্তিবাসীর অভিভাবক, মহান মুক্তিযুদ্ধের ১নং সেক্টর কমান্ডার, স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম মহোদয় দীর্ঘ দিন ধরে শাহরাস্তি উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভিত্তিতে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। বেশ ক'বার তিনি পর্যটন রিসোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেন। একের পর এক পরিকল্পনা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করেন তিনি। অবশেষে বিআইডব্লিউটিএ'র প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয় ডাকাতিয়া নদীর পাড়। ডাকাতিয়া নদীর পাশে সূচীপাড়া ব্রিজ থেকে চিখটিয়া ব্রিজ পর্যন্ত দু কিলোমিটার এলাকা নিয়ে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজের শুভ উদ্বোধন করেন মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম। ২০২১ সালের ৪ ডিসেম্বর স্বতঃস্ফূর্ত ব্যাপক অংশগ্রহণের মাধ্যমে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রায় দেড় বছর ধরে নির্মাণ কাজ করার পর এ মাসেই এটির কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও পার্কিংয়ের জন্যে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে বিলম্ব হওয়ায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হতে আরো কিছুদিন সময় লাগবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান তানিয়া এন্টারপ্রাইজের সাইট ইঞ্জিনিয়ার দীপক হালদার জানান, ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দু-এক মাসের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। বিআইডব্লিউটিএ'র কারিগরি সহকারী আরিফ হোসেন জানান, জুন মাসে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু উভয় দিকে পার্কিংয়ের জন্যে জায়গা বর্ধিতকরণে জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে কিছুটা সময় লাগবে। তিনি জানান, উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে প্রায় ১৭.৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পার্কিংয়ের জন্যে নতুন করে আরো ২ একর জমি অধিগ্রহণের জন্যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ হয়ে গেলে অল্প সময়ের মধ্যেই নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হবে।
ওয়াকওয়ে নির্মাণ সম্পন্ন হলে শাহরাস্তি উপজেলার দৃশ্যপট বদলে যাবে বলে অনেকের ধারণা। এই ওয়াকওয়েটির সুফল শুধু শাহরাস্তিবাসীই ভোগ করবে না, নদীর দুপাড়ের বাসিন্দারা বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ, নোয়াখালী জেলার চাটখিল ও কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা অল্প সময়েই ওয়াকওয়েটির সুফল ভোগ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে ঘিরে ব্যবসা কেন্দ্র গড়ে উঠবে। জনগণের অবাধ বিচরণের ফলে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠবে শাহরাস্তি উপজেলা। ইতিমধ্যেই ডাকাতিয়া পাড়ে গড়ে উঠেছে বিনোদনকেন্দ্রিক কফি পার্ক। প্রতিদিনই শত শত মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে এ অঞ্চল। ওয়াকওয়েটির কাজ সমাপ্ত হলে বিনোদনপ্রেমী মানুষের যাতায়াত কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
চাঁদপুর শহরে ডাকাতিয়া নদীর দু তীরে ওয়াকওয়ে নির্মাণের পরিকল্পনা এখনও কোনো প্রকল্পভুক্ত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। অথচ চাঁদপুর শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে শহরাস্তিতে ডাকাতিয়ার উত্তর তীরে ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে দু কিলোমিটারব্যাপী ওয়াকওয়ে নির্মাণ সংক্রান্ত প্রকল্প এখন সমাপ্তির দিকে। এটা অবশ্যই স্থানীয় এমপি মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের স্বীয় এলাকার উন্নয়ন বিষয়ে আন্তরিকভাবে লেগে থাকার মানসিকতারই পরিচয় বহন করে। এজন্যে তাঁকে দলমত নির্বিশেষে সকল শাহরাস্তিবাসী অনাগত দিনগুলোতে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করতেই হবে বলে আমাদের অভিমত। আমরা প্রকল্পটির সফল সমাপ্তি প্রত্যাশা করছি। আমাদের বিশ্বাস, এই ওয়াকওয়ে যে শুধু শাহরাস্তিবাসীর জন্যে অনন্য দর্শনীয় স্থানে পরিণত হবে তা-ই নয়, পুরো চাঁদপুর জেলাবাসীর জন্যেও হবে।