প্রকাশ : ০৪ জুন ২০২৩, ০০:০০

নিভৃতচারী লেখক, এককালের তুখোড় ফুটবলার আলহাজ্ব মোঃ আব্দুল হক মোল্লা পরিণত বয়সে স্বাভাবিক মৃত্যুই বরণ করেছেন। বার্ধক্যজনিত রোগে শয্যাশায়ী হয়ে দীর্ঘদিন ভুগে স্ত্রী-সন্তানদের কষ্ট দিয়ে তিনি ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নি। হঠাৎ বেশি অসুস্থতা বোধ করলে তাঁকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সেখানে তিনি ১ জুন রাত ১১টায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরিবারের সদস্য, কাছের-দূরের আত্মীয়, ঘনিষ্ঠজন, বন্ধু, শুভাকাক্সক্ষীদের শেষ দেখা এবং শেষ কথা বলার সুযোগ না দিয়ে তিনি বলা যায় হঠাৎই পরপারে পাড়ি জমালেন। সেজন্যে চাঁদপুর শহরের ষোলঘর এলাকা ও পরিচিত সকল মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে। তাঁর শেষ ইচ্ছা কী ছিলো সেটা জানা না গেলেও তিনি সপ্তাহের সবচে’ বেশি গুরুত্বপূর্ণ দিন, গরীবের ঈদের দিন বলে অভিহিত পবিত্র শুক্রবার বাদ জুমা শত শত লোকের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরশায়িত হলেন।
আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লা বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অধীনে বিভিন্ন ডাকঘরে সততা, স্বচ্ছতা ও সুনামের সাথে পোস্ট মাস্টারের চাকুরিশেষে চাঁদপুর প্রধান ডাকঘর থেকে অবসরে যান এবং ষোলঘরে নিজ বাড়িতে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকেন। অবসর জীবনে নিকটস্থ মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে পড়া, প্রতিটি রমজানে ইতিকাফে বসা, কোরান-হাদিস, ধর্মীয় বই, পত্রিকা পড়া সহ ধর্মীয় বিষয়ে লেখালেখিতে কাটাতেন তিনি সময়। এসব লেখা প্রায়শই ছাপা হতো চাঁদপুর কণ্ঠে, যেগুলো থেকে বাছাইকৃত লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে বইও। তিনি ২০২২ সালের আগস্ট মাসে চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়া প্রতিবেদক চৌধুরী ইয়াসিন ইকরামের সাথে আলাপচারিতায় নিজের বার্ধক্যজনিত জটিলতা ক্রমশ বেড়ে যাওয়ায় বেশি অসুস্থ বোধ করা এবং তারপরও নামাজ যাতে জামাতের সাথে পড়তে পারেন সেজন্যে দোয়া কামনা করেন। এটাকেই তিনি শেষ ইচ্ছা বলে বোঝাতে চেয়েছেন। মহান আল্লাহতা'লা তাঁর সে ইচ্ছা পূরণ করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লা দুর্ঘটনাজনিত ও শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে খেলোয়াড়ি জীবনের সুন্দর পরিসমাপ্তি নয়, অকাল সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। অর্থাৎ পায়ের শৈলী প্রদর্শনের সক্ষমতা হারিয়েছেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে তিনি লিখনশৈলী তথা কলমে হাতের দক্ষতা আশাব্যঞ্জকভাবে দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি চাঁদপুরের প্রখ্যাত সাংবাদিক গোলাম কিবরিয়া জীবনের সাপ্তাহিক চাঁদপুরে সাম্প্রতিক ভাবনা কলামে ছড়া লিখে দারুণ আলোড়ন সৃষ্টিতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ এবং সাপ্তাহিক ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে ছড়া-কবিতা ও প্রবন্ধ-নিবন্ধ-গল্প লিখে লেখক হিসেবে এতোটা পরিচিতি পান যে, তাঁর খেলোয়াড়-পরিচিতির কথা অনেকে ভুলে যেতে বসেন। তিনি নিজ এলাকায় অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ধার্মিক প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে সবার শ্রদ্ধার পাত্রে পরিণত হন। এমনটি সমাজে বিরলই বটে। আমরা চাঁদপুর কণ্ঠের ২৯ বছরের ভক্ত পাঠক ও লেখক আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লার মৃত্যতে চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবারের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি, তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি। বাহুল্য হলেও বলতে হয় যে, আমাদের সমাজে আলহাজ্ব আব্দুল হক মোল্লারা অগণিত জন্মায় না। দুঃখ হলো এই যে, তারা বেশিদিন বাঁচে না।