বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫

প্রভাবশালী হলেই কি মধ্যযুগীয় কায়দায় অন্যকে নির্যাতন করতে পারে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রভাবশালী হলেই কি মধ্যযুগীয় কায়দায় অন্যকে নির্যাতন করতে পারে?

মতলব উত্তর উপজেলার রায়েরকান্দি গ্রামে এক নিরীহ কাঠমিস্ত্রিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গোয়ালঘরে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে মধ্যযুগীয় কায়দায় অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ভুক্তভোগী কাঠমিস্ত্রির নাম লোকমান হোসেন ভুইয়া। অভিযুক্ত ব্যক্তি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার প্রভাবশালী মো. মাসুদ। পুলিশ অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযান চালিয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মো. মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে মতলব উত্তর উপজেলার রায়েরকান্দি এলাকায় বসবাস করে আসছেন। এই সময় তিনি অবৈধভাবে ধনাগোদা নদীতে জাগ তৈরি করে মাছ চাষ করে আসছিলেন। সম্প্রতি ওই জাগে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারার সন্দেহে গত ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ রাতে কাঠমিস্ত্রি লোকমান হোসেন ভুইয়াকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় মাসুদ ও তার সহযোগীরা। পরে তাকে একটি গোয়ালঘরে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনের সময় লোকমানের কাছে দোষ স্বীকার করতে চাপ দেয়া হয় এবং বলা হয় দোষ স্বীকার করলে ছেড়ে দেয়া হবে। একপর্যায়ে ভুক্তভোগীর মা জাহানারা বেগম ছেলেকে উদ্ধার করতে গেলে অভিযুক্ত মাসুদ ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। নিরূপায় হয়ে তিনি রোববার (২১ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুরে মতলব উত্তর থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত অভিযান চালিয়ে লোকমানকে উদ্ধার করে এবং অভিযুক্ত মাসুদকে গ্রেপ্তার করে। ভুক্তভোগী কাঠমিস্ত্রি লোকমান হোসেন জানান, আমি গরিব মানুষ। কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। কারো সঙ্গে আমার কোনো শত্রুতা নেই। আমাকে জোর করে ধরে এনে গরু ঘরে বেঁধে অনেক মারধর করেছে। আমাকে বলেছে, আমি যেন স্বীকার করি যে তার জাগ ভেঙ্গেছি। কিন্তু আমি কিছুই জানি না। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সুশীল সমাজের ব্যক্তিরা একে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ আখ্যা দিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে মতলব উত্তর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সুমন চন্দ্র দাস জানান, লোকমানকে অমানুষিকভাবে শিকল দিয়ে হাত-পা বেঁধে রেখে মারধর করা হয়েছে। প্রায় ৪ দিন ধরে এই নির্যাতন চালানো হয়। তার মা থানায় খবর দিলে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করি এবং অভিযুক্ত মাসুদকে গ্রেপ্তার করি। এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় পাওয়া, ধনে-জনে শক্তিশালী কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ হওয়া ব্যক্তিরাই নিজেদের প্রভাবশালী ভাবে। তারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজেকে আইনের ঊর্ধ্বে ভেবে যে কোনো অন্যায় করে, জোরজবরদস্তিমূলকভাবে কিছু করে পার পেতে চায়। মতলব উত্তরের রায়েরকান্দিতে বসবাসকারী মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার স্থায়ী বাসিন্দা মাসুদ নিজেকে কীভাবে প্রভাবশালী হিসেবে অন্য জেলার অন্য উপজেলায় পরিচিত করে তুললো সেটা আমাদের মাথায় ঢোকে না। তারপরও এ তথাকথিত প্রভাবশালীকে মতলব উত্তর থানার পুলিশ ধরে ফেললো কোনো মহলের চাপ উপেক্ষা করেই। যেজন্যে তাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। এই মাসুদ নদীতে অবৈধভাবে মাছ ধরার ফাঁদ (জাগ) বানিয়েছে। সেই জাগে বিষ দিয়ে মাছ ধরার প্রমাণহীন অভিযোগে সন্দেহ বশত লোকমান হোসেন ভূইয়া নামে এক কাঠমিস্ত্রীকে তুলে দিয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় মাসুদ তার নিজের গোয়ালঘরে আটকে রেখে শিকল দিয়ে বেঁধে চারদিন ধরে অমানুষিক নির্যাতন ও মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করার সাহস কোত্থেকে পেলো সেটা তাকে রিমান্ডে নিয়ে জানা দরকার। আশা করি পুলিশ এ কাজটি করবে এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মাসুদের উপযুক্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিষয়টি নিশ্চিত করবে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে কারণে হয়তো মাসুদের জন্যে নিজেদের ভাবমূর্তির প্রশ্নে কোনো রাজনৈতিক নেতা তদবির করেন নি। দেখার বিষয়, নির্বাচনের পর মাসুদ কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজেকে প্রভাবশালী প্রমাণের কোশেশ করে কিনা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়