প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০১:২০
জেল থেকে বাঁচতে সন্তান বিক্রি!
লক্ষ্মীপুরের নাজমার আকুতি, "জরিমানার টাকা নেই, ছেলেকে বিক্রি করব"

লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। অসুস্থ স্বামী এবং নিজেকে জেল থেকে বাঁচাতে আদালতের ২০ হাজার টাকার জরিমানা পরিশোধের জন্যে নিজের সাড়ে চার বছরের সন্তানকে বিক্রি করতে চান এক গৃহবধূ—তার নাম নাজমা বেগম।
|আরো খবর
রামগঞ্জ উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের হরিশ্চর গ্রামের তেতিয়ালা বাড়ির বাসিন্দা এই নাজমা বেগম শনিবার স্থানীয় সাংবাদিকদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জরিমানার টাকা দিতে না পারলে আগামী ৭ অক্টোবরের পর তাকে ও তার স্বামীকে জেলে যেতে হবে।
গৃহবধূ নাজমা বেগম বলেন, “আমার স্বামী নাজমুল হুদা (লোকমান) বয়সে অনেক বড় হয়ে পড়েছেন, এখন আর কাজ করতে পারেন না। আমি ঘরে খাবার জোটাতে পারি না। আদালত আমাদের দুইজনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছে। আমি না দিলে জেলে নিতে বলেছে। আমি কারও কাছে ধার চাইতে গিয়েও ব্যর্থ হয়েছি। তাই বাধ্য হয়েই আমার একমাত্র সন্তান নাইমুল হুদাকে বিক্রি করে দিতে চাই।”
জানা গেছে, পারিবারিক সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে তার দেবর মো. হানিফ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রামগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ করেন। থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া অভিযোগটির তদন্ত করে প্রসিকিউশন দেন এবং গত ১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে তা আদালতে প্রেরণ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে লক্ষ্মীপুর আদালত গৃহবধূ নাজমা বেগম ও তার স্বামী নাজমুল হুদা প্রকাশ লোকমানকে ১০ হাজার টাকা করে মোট ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে ৭ দিনের জেল সাজা দেওয়া হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ৭ অক্টোবরের মধ্যে জরিমানা পরিশোধ না হলে তাদের জেলে পাঠানো হবে।
অসহায় নাজমা জানান, “আমার আত্মীয়স্বজন কেউ সাহায্য করছে না। প্রতিবেশীরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। ছেলে নাইমুল হুদা মাত্র সাড়ে চার বছরের, তাকে বিক্রি করা ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা নেই।”
স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী ও সমাজসেবকরা এ ঘটনাকে “চরম দারিদ্র্য ও অব্যবস্থাপনার মর্মান্তিক চিত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তারা প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে কান্নাজড়িত কণ্ঠে নাজমা বলেন, “আমি সন্তান বিক্রি করতে চাই না। কিন্তু আমি যদি জেলে যাই, আমার ছেলেটা কোথায় যাবে? আমি তাকে বাঁচাতে চাই।”
এদিকে, ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ভাইরাল হলে অনেকেই শিশুটি ও তার মায়ের সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
মানবিক আবেদন হিসেবে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসীর দাবি, জরিমানার অর্থ পরিশোধে যেন সরকারি বা সামাজিক সহায়তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়—যাতে একটি পরিবার ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায়।
ডিসিকে/এমজেডএইচ