প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ১১:১৫
স্বপ্নিল সফর

গতকালকের পর)
গত রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে করা ঐ সব আকাশ-পাতাল চিন্তাকে, উদ্বেগকে অনর্থক প্রমাণ করে নির্ঝঞ্ঝাটে শুভ বিজয়ার সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয় পরের দিন। মায়ের বিসর্জনের সাথে সাথে বিসর্জন হয় শ্রীমান নরেনেরও।
শারদীয় দুর্গা পূজার পরিসমাপ্তিতে ভট্টাচার্য মহাশয় পূজা উদযাপন কমিটির কাছ থেকে যথোপযুক্ত সম্মানী গ্রহণ করলেন। এরপর তাদের যে বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো সেই গৃহকর্তা-কর্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দুপুরের আগেই নিজ গ্রাম নিমতলীর উদ্দেশ্যে রওনা করে তারা। তবে প্রস্থানের আগমুহূর্তে ছন্দার সাথে একান্তে কিছু কথা বলে নেয় স্বপ্নিল। বাড়ি ফেরার সমস্ত পথে স্বপ্নিলের মনের পর্দায় ভেসে উঠতে থাকে মনোহরপুরে কাটানো পঁাচটি চ্যালেঞ্জিং দিনের ঘটনা প্রবাহ।
ঐ পঁাচ দিনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় আনন্দ-বেদনা মিশ্রিত থাকলেও সে জন্যে কোনো দুঃখানুভূতি নেই তার। কিন্তু একটি ব্যাপারে অনুশোচনায় মর্মাহত হয় স্বপ্নিল। তা হলো, পূজার সময় ভট্টাচার্য মহাশয় মাঝে মাঝে তাকে শ্রী শ্রী চণ্ডী পাঠ করতে বলতেন। স্বপ্নিল সব সময় তা শুদ্ধভাবে পাঠ করতে চেষ্টা করতো, তবে যখনই তার উচ্চারণে সমস্যা হতো, তখনই সে তার বাম হাতে রাখা ঘণ্টাটি দ্রুত ও জোরে জোরে বাজাতো, যাতে কেউ তার দুর্বলতা বুঝতে না পারে।
খঁাচা থেকে মুক্তিপ্রাপ্ত বিহঙ্গের ন্যায় ডানা মেলে উড়তে ইচ্ছে করছে স্বপ্নিলের। ব্যাকুল মনের এলোমেলো ভাবনা, বাড়িতে পেঁৗছতে এতো সময় লাগছে কেন? বাড়ি কি তাদের দূরে সরে গেলো? নিজ গৃহ, মা-বাবা, ভাই-বোনের সাথে মিলিত হবার জন্যে স্বপ্নিল যারপরনাই উতলা। তবে নিজ হৃদয়ের বিলে যে প্রেমপদ্মের কলি সে ধারণ করেছে, তাকে পরিপূর্ণতা দিতে কিছুদিন বাদেই তাকে আবার ফিরতে হবে মনোহরপুরে, এ সত্য সে এড়াতে পারে না।
অবিশ্বাস্য একটি সফর শেষে স্বপ্নিল নির্বিঘ্নে নিজ বাড়িতে ফিরলো ঠিকই, কিন্তু রয়ে গেলো তার রেশ।
এই যেমনÑছয়-সাত মাস পরে রমেন বাবু তঁার শ্বশুরালয়ে বেড়াতে আসেন। এক পর্যায়ে তঁার দেখা হয় স্বপ্নিলের সাথে। রমেন বাবু সন্দেহের চোখে নিরীক্ষণ করার পর দ্বিধান্বিত কণ্ঠে স্বপ্নিলকে জিজ্ঞাসা করলেন,“আপনাকে কো-থা-য় যেন দেখেছি?” ধূর্ত স্বপ্নিল একটু অপ্রস্তুত হলেও রমেন বাবুর আমতা আমতা ভাব দেখে মনে শক্তি সঞ্চয় করে সে ঝটপট উত্তর দিলো, “আমার তো সে রকম মনে হয় না। যা হোক, আমি স্বপ্নিল মণ্ডল।” এই বলে রমেন বাবুর দিকে করমর্দনের উদ্দেশে নিজের ডান হাতটা বাড়িয়ে দিলো স্বপ্নিল। (সমাপ্ত)
সুনির্মল দেউরী : উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, হাজীগঞ্জ, চঁাদপুর।