বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২:০৮

শারদীয় দুর্গোৎসব

মাটির কাজ শেষে রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার মৃৎশিল্পীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক।।
মাটির কাজ শেষে রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার মৃৎশিল্পীরা

আসন্ন শারদীয়া দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন কুমিল্লার মৃৎশিল্পীরা। বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এ উৎসব উপলক্ষে কুমিল্লা জেলায় এ বছর সাতশত চুরানব্বইটি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গা মায়ের অর্চনা। আর মাত্র ক'দিন বাকি, স্বর্গলোক হতে মর্ত্যে আসছেন দেবীদুর্গা। তারই ধারাবাহিকতায় দুর্গা প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মৃৎশিল্পীরা।

গেলো ২১ সেপ্টেম্বর (রোববার) মহালয়া এবং আসছে ২৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) পঞ্চমী তিথিতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গা পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। কাশফোটা শরতের শারদীয় দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ রূপ দিতেই মন্দিরগুলোতে চলছে পূজার প্রস্তুতি। প্রতিমা শিল্পীর সুনিপুণ ছোঁয়া আর রং তুলির আঁচড়ে দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে দিন ও রাতভর চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। ইতোমধ্যে প্রতিমার কাঠামোর মাটির কাজ শেষ। চলছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে জেলার প্রতিটি উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাজুড়ে আগাম শারদীয় উৎসবের আমেজ লক্ষণীয়। উঁচু-নিচুর বিভেদ ভুলে সমাজের সকল স্তরের মানুষকে একত্র করে মহাসম্মেলন হয় বলে এ পূজাকে বলা হয় সার্বজনীন পূজা। আর শরৎকালে হয় বলে বলা হয় শারদীয় উৎসব।

আসন্ন দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জেলার ১৬ উপজেলার ৮০৫টি মণ্ডপের পূজা উদযাপন কমিটি ব্যস্ত সময় পার করছে। এর মধ্যে কুমিল্লা নগর ও আদর্শ সদর উপজেলায় ১৩১টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। কোনো কোনো মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি সাজসজ্জার প্রস্তুতিও চলছে।

আসছে ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার দেবী দুর্গার বোধন পূজা ও অধিবাসের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে পাঁচদিনব্যাপী সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড়ো ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। স্থানীয় কারিগর ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে কারিগররা কুমিল্লায় এসে তৈরি করছে মাটির প্রতিমা। প্রতিটি পূজা মণ্ডপের জন্যে তৈরি করা হচ্ছে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা, হাঁস ও সর্পসহ বিভিন্ন প্রতিমা। মাটির কাজ শেষে রং তুলির আঁচড়ে ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৃৎশিল্পীরা এবং মণ্ডপ সাজসজ্জার কাজে মহাব্যস্ত ডেকোরেটরের কর্মচারী ও কারিগররা। দেবীকে বরণ করে নিতে ঢাক, ঢোল ও বাদ্যকররা বাদ্যযন্ত্র ঠিকঠাক করে নিচ্ছেন। দেবীকে স্বাগত জানাতে সর্বত্র আনন্দঘন পরিবেশ বিরাজ করছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের আবালবৃদ্ধবনিতা নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ এ সর্ববৃহৎ শারদীয় উৎসবকে সার্থক করতে প্রহর গুণছে।

মুন্সিগঞ্জ হতে আগত মৃৎশিল্পী রমেশ পাল বলেন, প্রতিমা তৈরির কাজ শেষ, চলছে রং ও সাজসজ্জার কাজ। তিনি আরও বলেন, এ বছর ১০টি পূজা মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছি। বংশ পরম্পরায় এই কাজ করে আসছি। এ বছর প্রতিটি প্রতিমা তৈরির খরচ ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিলেও আমাদের পোষাবে না। কারণ প্রয়োজনীয় উপকরণের মধ্যে রঙ, কাপড়, পুঁতির মালা, পরচুলা, চুমকি, শোলা ও কারিগরের মজুরিসহ সবকিছুর দাম বেড়ে গেছে। শুধু পেশাটাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে এ কাজ করতে হচ্ছে। মৃৎশিল্পীদের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় এই কাজ করে আর পোষায় না।

পূজা উদযাপন কমিটির এক নেতা বলেন, বর্তমানে বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে দুর্গা পূজা অর্চনা, প্রসাদ কেনার খরচ--সবমিলিয়ে কমিটির সদস্যরা হিমশিম খাচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কুমিল্লা জেলা শাখার সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস চন্দ্র সরকার বলেন, শরতের কাশফুল আর নীল আকাশে শুভ্র মেঘ বলে দেয় বিপদনাশিনী দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। হিন্দু সম্প্রদায়ের আবালবৃদ্ধবনিতা নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষ দেবীর আশীর্বাদ পাওয়ার আশায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণছে পূজার এই শুভ লগ্নে। তিনি আরও বলেন, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এ বছর মা দুর্গা গজে (হাতি) আগমন করবেন। এর অর্থ শস্যপূর্ণ বসুন্ধরা। আর ২রা অক্টোবর বিজয়া দশমীতে গমন করবেন নৌকায়। এর অর্থ শস্যবৃদ্ধি আশানুরূপ হলেও বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসে কিছু শস্য নষ্ট হবে।

কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেছেন, আসন্ন দুর্গাপূজায় যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে জেলার প্রতিটি পূজামণ্ডপে থাকবে গোয়েন্দা নজরদারি। যেসব পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীর সংখ্যা বেশি থাকবে সেসব পূজামণ্ডপে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হবে। পূজায় জেলা শহরে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি ঠেকাতে মাঠে থাকবে সাদা পোশাকধারী পুলিশ। এ ছাড়াও মাদক, কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাস, ইভটিজিং ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ প্রতিরোধে নিরলসভাবে কাজ করবে কুমিল্লা জেলার পুলিশ টিম। যে কোনো অন্যায় রুখতে আমরা পিছপা হবো না। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে যা যা প্রয়োজন তা-ই করবে কুমিল্লা জেলা পুলিশ।

কুমিল্লা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আমিরুল কায়ছার জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয়া দুর্গাপূজাকে বাঙালির সার্বজনীন উৎসবে রূপ দিতে আমরা বদ্ধপরিকর। দুর্গাপূজায় যে কোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে জেলার অধিক গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে থাকবে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারি। এছাড়াও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে থানা পুলিশের পাশাপাশি পূজা মণ্ডপে থাকবে আনসার ও গ্রামপুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়