প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৬
শাহনাজ বেলীর সাথে আটলান্টায় একদিন

‘’আইলায় না; আইলায় নারে বন্ধু
করলায় রে দিওয়ানা
আইলায় না; আইলায় নারে বন্ধু
করলায় রে দিওয়ানা
সুখ বসন্ত সুখের কালে
শান্তি তো দিলায় নারে বন্ধু
আইলায় নারে; ও বন্ধু আইলায় নারে”
যাঁকে নিয়ে আজকের লেখা তাঁর প্রিয় একটি গান দিয়েই শুরু করলাম। তিনি হলেন শ্রোতাপ্রিয় লালন ও লোকজ সংগীতশিল্পী শাহনাজ বেলী। কুষ্টিয়ার এ শিল্পীর শুরুটা হয়েছে বাবার সাথে লালনের গান করার মধ্য দিয়ে। ১৯৮৯ সালে প্রথম ঢাকায় অনুষ্ঠান করতে আসা তাঁর। সেখান থেকে আনসার বাহিনীর অর্কেস্ট্রায় গান শেখার সুযোগ পান তিনি। ১৯৯০ সালে ঢাকার মঞ্চে গেয়ে প্রাথমিক পরিচিতি তৈরি হয়। এরপর তিনি নিজের প্রথম অ্যালবাম ‘একবার পাইলে’ প্রকাশ করেন ২০০৫ সালে। এখন পর্যন্ত একক, ডুয়েট, মিশ্র মিলে ১০০-এর বেশি অ্যালবামে গান গেয়েছেন তিনি। এছাড়াও কণ্ঠ দিয়েছেন চলচ্চিত্র, নাটক ও বিজ্ঞাপনে।
মা-বাবার প্রতি পরম শ্রদ্ধাশীল তিনি। নিজ দায়িত্বেই তিনি মা-বাবাকে হজ্ব করিয়েছেন। আবার তাঁর নিজের একমাত্র কন্যা মোবাশ্বিরা কবির আভাকেও মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করছেন। শাহনাজ বেলী যে শুধু নিজের পরিবার আর নিজের গান নিয়েই ভাবেন— এমনটি একদমই নয়। তিনি শ্রোতা-দর্শকের কথা ভেবে যেমন ভালো ভালো গান প্রকাশের চেষ্টায় যেমন মত্ত থাকেন, ঠিক তেমনই আগামী প্রজন্মের মাঝে লালন সংগীতের আরও প্রসার ঘটাতে তিনি নিজ উদ্যোগে কুষ্টিয়াতে তাঁর নিজ গ্রামে পশ্চিম আবদালপুরে ‘শাহনাজ বেলী সংগীত একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন। গত ৩ এপ্রিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসে একাডেমিটির যাত্রা শুরু হয়েছে। একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শাহনাজ বেলী। একাডেমিতে বর্তমানে ৫০ শিক্ষার্থী গান শিখছেন। নিজের একাডেমি নিয়ে স্বপ্ন প্রসঙ্গে শাহনাজ বেলী বলেন, ‘বিশেষত লালন সংগীত নিয়েই একাডেমি ঘিরে আমার স্বপ্ন। লালনের গানের আরও অনেক বেশি প্রসারের ক্ষেত্রেই এই একাডেমি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। যেহেতু আমি লালনের গানে নিজেকে মগ্ন করেছি। আমি চাই এই গানের আরও প্রসার ঘটাতে। আমার একাডেমিতে যারা গান শিখবে, তারা মূলত লালন গানেই নিজেকে দক্ষ করে তুলবে। আমি চাই সত্যিকারের শিল্পীরা বেরিয়ে আসুক। লালনের গানের আরও প্রসার হোক। লালন সংগীতে আগ্রহীরা এখানে তালিম নিতে আসেন। এর চেয়ে বড়ো স্বপ্ন আর কী হতে পারে আমার। আমার সৌভাগ্য আমার মাথার ওপর আমার মা-বাবা ছায়া হয়ে আছেন। এটাও আমার জন্যে অনেক বড়ো আশীর্বাদ।’
শাহনাজ বেলী এসেছিলেন আটলান্টা, জর্জিয়া ৩৯ তম ফোবানায় গান করতে। চমৎকার গান পরিবেশন করলেন। সময় শেষ হবার পরেও দর্শকদের অনুরোধে দুটি গান করেন। অনুষ্ঠান শেষে সাধারণ মানুষের মতো অডিটোরিয়ামের বাইরে হাঁটছিলেন আর অনেকের অনুরোধে ছবি তুলছিলেন। আমিও সামনে যেয়ে কুশল বিনিময় করে কিছুটা সময় কথাবার্তা বলে একটি ছবি নিলাম। ছবি নেওয়ার সময় বলেছি, আপনাকে নিয়ে কিছু লিখবো এবং প্রচার করবো। এই গুণী শিল্পীকে নিয়ে লিখে শেষ করা যাবে না। শাহনাজ বেলী সত্যি একজন ভালো মনের মানুষ। তাঁর কণ্ঠ ও সুরের মূর্ছনা যেমন হৃদয়ে নাড়া দেয় তেমনি তাঁর স্বভাবসুলভ ব্যবহার চমৎকার ও শাহনাজ বেলী আপনি ভালো ও সুস্থ থাকুন এবং আপনার সব স্বপ্ন পূর্ণ হোক--এই প্রত্যাশায়।
ড. আব্দুস সাত্তার : লেখক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডি সি। ০৯/১১/২৫।