প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:০৫
দারিদ্র্যকে জয় করতে চায় অদম্য লামিয়া

প্রতিদিন ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বিদ্যার অন্বেষণে ছুটে চলে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লামিয়া। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত পরিবার। তবুও প্রতিদিন ১৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করা এক অদম্য সাহসী অগ্নিকন্যা সে। একটাই উদ্দেশ্য, দারিদ্র্যকে জয় করে সে ডাক্তার হতে চায়। তার পুরো নাম ইসরাত জাহান লামিয়া। বয়স মাত্র ১৩ বছর। লেখাপড়া করে রামগঞ্জ উপজেলার ৯ নং ভোলা কোট ইউনিয়নের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ফরিদ আহমদ ভূঁইয়া একাডেমিতে। প্রতিষ্ঠানটি লক্ষ্মীপুর জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নানার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে লামিয়া। বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায়। ৩ বছর বয়সেই বাবাকে হারিয়ে আশ্রয় নেন নানার বাড়ি। তার নানার বাড়ি রামগঞ্জ উপজেলার ২নং নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ডোমনদী গ্রামে। লামিয়ার মা ইয়াসমিন আক্তার জানান, সেলাইয়ের কাজ, পার্টি ও চাটাই বুনন করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাড় করেন। একমাত্র মেয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আর কোনো বিয়েও করেননি তিনি। এক বুক আশা নিয়ে ২০২৪ সালে ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমির ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হয় লামিয়া। বাড়ি দূরে হওয়ায় সে বছর সিএনজি অটোরিক্সায় করে আসা-যাওয়া করতো লামিয়া। কিন্তু পারিবারিক দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে অটোরিকশার ভাড়া দেওয়ার মতো অবস্থা নেই তাদের। লেখাপড়া তো আর বন্ধ করা যায় না। তাই লামিয়ার মা মেয়েকে একটি পুরাতন বাইসাইকেল কিনে দেন স্কুলে আসা-যাওয়ার জন্যে। সেই থেকেই প্রতিদিন ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে ১৬ কিলোমিটার রাস্তা আসা-যাওয়া করে লামিয়া। লামিয়া জানান প্রতিদিন সে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করতে অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু স্কুল মিস দেওয়া যাবে না। তাই তাকে প্রতিদিন আসতে হয়। তার ইচ্ছে সে বড় হয়ে একজন ডাক্তার হবে, বাবার মত বিনা চিকিৎসায় অসময়ে মাকেও যেন হারাতে না হয়।
ফরিদ আহমেদ ভূঁইয়া একাডেমীর প্রবীণ শিক্ষক ইসমাইল বিন শহীদুল্লাহ জানান, লামিয়া প্রতিদিনই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসে। এবার সে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে, তার রোল নং ৭২২০। আমরা যতটুকু জানি, সে খুব অসহায়। গত বছর স্কুল থেকে তাকে সহায়তা করা হয়েছিল। এ বছর সে দরখাস্ত না করার কারণে সহায়তা পায়নি।
রামগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও রামগঞ্জ ব্লাড ডোনার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহমুদ ফারুক বলেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যখন শত শত শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, তখন লামিয়ার লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে খুব ভালো লাগছে। আমি আশা করবো, সমাজের বিত্তবানরা লামিয়ার মত অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়িয়ে সমাজকে আলোকিত করবেন। লামিয়া হতে পারে আমাদের দেশের হাজার হাজার শিশুর অনুপ্রেরণা।