প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৭
ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের জীবিকা প্রকল্পে হাজারো পরিবারে স্বনির্ভরতা-সচ্ছলতা

মোসাম্মৎ তাছলিমা বেগম (বয়স ৫৮ বছর, স্বামী মো. নান্নু খান গ্রাম : মধ্য রালদিয়া, পো : আশিকাটি, উপজেলা : চাঁদপুর সদর, জেলা : চাঁদপুর) বললেন, গত ১২-১০-১৯৯৯ তারিখে সংসারে সৌভাগ্য ফেরাতে আমার স্বামী সৌদি আরব গিয়েছিলেন । দীর্ঘ বারো বছর সৌদি আরবে থেকে বাবা-মা, ভাই-বোনদের ভরণপোষণ এবং লেখাপড়ার পেছনে সমস্ত উপার্জন খরচ করে ফেলেন । আয়ের বেশিরভাগ পরিবারের পেছনে খরচ করার ফলে তিনি সামান্য পরিমাণে সঞ্চয় করতে সক্ষম হন এবং পরিবারের মাথা গোঁজার জন্যে তিন শতাংশ জমি ক্রয় করেন। আমার শ্বশুরের তেমন কোনো সম্পদ ছিলো না, যেটুকু ছিলো তা আট ভাই-বোনের মধ্যে ভাগ বন্টন করলে কোনো রকম থাকার জায়গা হয় না। বারো বছরের পুঁজি বলতে ঐ তিন শতাংশ জমি ছাড়া আর কোনো সম্বল ছিলো না আমার স্বামীর। গত ২৫-০২-২০১২ তারিখে শূন্য হাতেই দেশে ফিরে আসেন আমার স্বামী। আমার চার মেয়ে (পান্না, ঝর্ণা, পপি, হীরা) ও দুই ছেলে (সাব্বির আর জুনায়েদ) সহ পরিবারের মোট সদস্য সংখ্যা ৮ জন। আমার সন্তানদের মধ্যে বড়ো দুই মেয়ে পান্না আর ঝর্ণার বিয়ে হয় মধ্যবিত্ত পরিবারে। ছোট দুই মেয়ে পপি আর হীরা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে, আর ছেলে সাব্বির পড়ে মাদ্রাসায় এবং সবার ছোট ছেলের বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর।
আমার স্বামী বিদেশ থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসার পর আট সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের ভরণ পোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিল। এছাড়াও আমি ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়ি। অবশেষে মানুষের কাছে শুনতে পেলাম, ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশন পরিচালিত ‘জীবিকা চাঁদপুর’ প্রকল্পের কথা। নিরূপায় হয়ে আমি গত ১২-০৯- ২০১৮ তারিখে জীবিকা চাঁদপুর-২ প্রকল্পে মাছরাঙা তৃণমূল সংগঠনের সদস্য হই। আমি এ প্রকল্প থেকে আয়বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যে মাছরাঙা তৃণমূল সংগঠন থেকে বিনিয়োগের জন্যে আবেদন করি। প্রথমত ১৪- ১১-১৮ তারিখে কাঁচা মাল (শাক, আলু, শশা, মরিচ, কালাবেগুন, টমেটো, পিঁয়াজ, আদা, রসুন ইত্যাদি) ব্যবসার জন্যে আমাকে বিশ হাজার টাকা বিনিয়োগ প্রদান করা হয়। কাঁচা মাল বিক্রি করে প্রতিদিন আমার স্বামী ৪০০-৫০০ টাকা আয় করে, অর্থাৎ মাসে ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা আয় করেন । ধীরে ধীরে সুখের মুখ দেখতে পায় আমার পরিবার। আমি দলীয় টাকা পরিশোধ করে ১৬-০৬-১৯ তারিখে ঈদুল আযহা উপলক্ষে আমার স্বামীকে ষাঁড় গরু পালনের জন্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা বিনিয়োগে প্রদান করি। আমি পঁয়ষট্টি হাজার টাকা দিয়ে ষাঁড় ক্রয় করি এবং কোরবানিতে ঐ গরুটি নব্বই হাজার টাকায় বিক্রি করি। এছাড়াও আমি আরো কয়েক দফা বিনিয়োগ গ্রহণ করি এবং তা থেকে অনেক ভাল টাকা লাভ করি। পরবর্তীতে আমি ষাঁড় পালনের জন্যে এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা করে দুবার বিনিয়োগ গ্রহণ করি। শুধু তাই নয়, সুদ ছাড়া যেমন টাকা পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি গরুর ঔষধ ও ভ্যাকসিন। করোনাকালীন সময় পেয়েছি খাবার, ডাক্তারি সেবা ও ঔষধ এবং যারা গরীব-অসহায়, কঠিন ও জটিল রোগে ভুগছেন, টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না, জীবিকা চাঁদপুর প্রকল্প তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বিনামূল্যে চিকিৎসা পত্র এবং ঔষধ দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাথীদের ফরম ফিলাপের টাকা পেয়েছি। এভাবেই ভাগ্য পরিবর্তন হতে থাকে আমার পরিবারের, আর এ সবই হয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার কৃপায় ও আমাদের সম্মানিত ড. মো. সবুর খান স্যারের সহযোগিতায়।
আমি ভবিষ্যতে যাকাত গ্রহীতা থেকে যাকাত দাতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। এছাড়াও আমি আমার ছেলেদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলতে চাই। এখন আমার শেষ ইচ্ছা হচ্ছে, আমি একটা ষাঁড় গরুর খামার দেবো। সর্বশেষ আমি কৃতজ্ঞতা পোষণ করি ড. মো. সবুর খান স্যারের প্রতি তাঁর এই মহৎ উদ্যোগের জন্যে।
এক কথায় বলতে গেলে এক সময়ের হতাশাগ্রস্ত অসহায় রাহিমা বেগম এখন স্বনির্ভর ও সচ্ছল। শুধু রহিমা বেগমই নয়, বিউটি বেগম, রওশন আরা, কুলসুমা বেগম, পেয়ারা বেগম, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সিদ্দিকুর রহমান মাল, কাজী আদনানসহ চাঁদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর, আশিকাটি, মৈশাদী ও তরপুরচণ্ডী ইউনিয়নসহ চাঁদপুর পৌরসভার ১৪নং ওয়ার্ডের প্রায় ২ হাজার ৫০০ পরিবারের রয়েছে এমন অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার সফলতার কাহিনী। তাদের কেউ কেউ হাঁস-মুরগী-গরুর খামার, কেউ বা সবজি, ফল-ফলাদির বাগান, আবার কেউ বা বাটিক-বুটিক, হস্ত শিল্প ও কুটির শিল্পের প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে নিজেকে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তাদের এই সফলতার পেছনে ছিলো ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের জীবিকা প্রকল্প।
রাহিমা বেগমের মতো এমন হাজার হাজার পরিবারে আশার আলো জ্বালিয়েছে ’জীবিকা’ প্রকল্প। মানবকল্যাণে গৃহীত বাস্তবমুখী যাকাত ভিত্তিক এই উদ্যোগের স্বপ্নদ্রষ্টা চাঁদপুরের কৃতী সন্তান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইটি ব্যক্তিত্ব ড. মো. সবুর খান।
আমরা প্রায়শই শুনতে পাই সমাজে বিদ্যমান যাকাত অব্যবস্থাপনার ও অনিয়মের ফলে শাড়ি, লুঙ্গি সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু মানুষকে পদদলিত হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে। আমার মনে পড়ে, খোদ চাঁদপুর শহরেই মিশন রোডের মাথা সংলগ্ন ডা. ফজলুর রহমান চৌধুরীর বাসায় ১৯৮৮ সালে (সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরীর বড়ো ভাই) একবার যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৩ জন মারা গেছেন এবং বহু হতাহত হয়েছেন। জীবিকা প্রকল্পটি সেই অনিয়ম ও ব্যবস্থাপনা থেকে সমাজকে মুক্ত করে ভিন্ন এক গঠনমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে যাকাত গ্রহীতা থেকে যাকাত দাতা হতে মানুষকে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী করে তুলতে সহায়তা করে।
প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, জীবন মান বিকাশ কর্মসূচি (জীবিকা) প্রকল্পটি বাবুরহাট অঞ্চলে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রকল্পের ১ম, ২য় ও ৩য় ধাপ পেরিয়ে ৪র্থ ধাপ বর্তমানে চলমান। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে এই প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়ে এখনো চলমান। এই সময়ে প্রায় আড়াই হাজার পরিবার প্রকল্পটির সুবিধাভোগী হয়েছে। মোট সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ১১ হাজার ৪৯৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৭৬৭ জন ও মহিলা ৫ হাজার ৭৩২ জন। বর্তমানে প্রকল্পের মূলধন দাঁড়িয়েছে ১০ কেটি ৬০ লক্ষ ৭৩ হাজার টাকা।
এর পুরোটাই পর্যায়ক্রমে সুদমুক্ত বিনিয়োগ হয়ে থাকে। এতে করে একদিকে নিম্নবিত্ত পর্যায় থেকে সুবিধাভোগীরা মধ্যবিত্তের পর্যায়ে উন্নীত হয়ে যাকাত গ্রহীতা থেকে যাকাতদাতার পর্যায়ে উন্নীত হয় এবং নতুন নতুন পরিবার এ যাকাত সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, দারিদ্র্য আসলে আপেক্ষিক সংবেদনশীল আবেগ তৈরি করে, যা জাতির অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত হয়। গরীব মানুষ এই অভিশাপ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে উপায় খুঁজে পায়নি। ইসলাম এমন একটি ধর্ম, যেখানে এটিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়। যাকাতের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা পবিত্র গ্রন্থে নির্দেশ দিয়েছেন। যাকাত হলো এমন একটি পরিভাষা, যা সম্পদ পরিশুদ্ধ করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। এটা মুমিনদের জন্যে সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। এরই ধারাবাহিকতায় ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. মো. সবুর খানের সহযোগিতায় চাঁদপুরের বাবুরহাটে ’জীবিকা-চাঁদপুর’ নামে কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি দারিদ্র্য হ্রাসের লক্ষ্যে প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে যাকাত পরিচালনার অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান।
তারা আরো জানান, জীবিকা-চাঁদপুর হলো একটি সামাজিক উদ্যোগ, যার লক্ষ্য একটি দারিদ্র্যমুক্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠন, যেখানে দরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার উন্নয়ন সহ সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে এবং তাদের উন্নততর নৈতিক গুণাবলি ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ হবে। পাশাপাশি সর্বশক্তিমান আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত জাকাতের বাধ্যবাধকতাকে উন্নীত করা এবং প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা, গরীবদের সমৃদ্ধি আনার জন্যে একটি অর্থনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে। জীবিকা-চাঁদপুর বিভিন্ন প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে যাকাতের সংগঠিতকরণ এবং যথাযথ বন্টন নিয়ে কাজ করে।জীবিকা-চাঁদপুর সঠিক গণনা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করার পাশাপাশি যাকাত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও নিযুক্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যাকাত তহবিলের সাথে জীবিকা-চাঁদপুর বেশ কয়েকটি সুসংগঠিত প্রকল্প পরিচালনা করছে এবং অনেক ব্যক্তি ও পরিবারের জীবন পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছে। ইতোমধ্যে জীবিকা-চাঁদপুর এই জেলায় যাকাতের নিখুঁত ব্যবহারের মাধ্যমে কিছু উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে এবং দারিদ্র্য বিমোচনের জন্যে যাকাত ব্যবহারের সাথে পরিবর্তনের তত্ত্ব দেখাতে সক্ষম হয়েছে। সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক শক্তিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে, জীবিকা-চাঁদপুর প্রকল্পের লক্ষ্য, দারিদ্র্য হ্রাস করা এবং চাঁদপুরের ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের জন্যে নির্বাচিত এলাকায় উদ্যোক্তা তৈরি করা।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানান, জীবিকা কর্মসূচির লক্ষ্য এমন একটি দারিদ্র্যমুক্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠন, যেখানে দরিদ্র ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার উন্নয়নসহ সার্বিক উন্নয়ন ঘটবে এবং তাদের উন্নততর নৈতিক গুণাবলি ও মানবিক মূল্যবোধের বিকাশ হবে। কর্মসূচির সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ হলো : ১. একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে দুঃস্থ, বিধবা, অতি দরিদ্র এবং ইয়াতিম ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে দক্ষতা প্রশিক্ষণ, পুঁজি সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনা, স্থানীয় সম্পদ ও সেবায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর স্থায়িত্বশীল কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও আয়বৃদ্ধি করা; ২. স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পুষ্টির উন্নয়ন, সরকারি ও স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর ন্যূনতম স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা; ৩. জীবন দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়নে বয়স্ক শিক্ষা এবং শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে লক্ষিত জনগোষ্ঠীর নিরক্ষরতা দূরীকরণ, সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নৈতিক মান উন্নত করা; দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা এবং পারিবারিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানবিক বিপর্যয় রোধে প্রতিবন্ধী, বিধবা, ইয়াতিম, বয়স্ক ও বিপদাপন্নদের সহায়তা প্রদান করা।
কর্তৃপক্ষ আরো জানান, প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যাশিত ফলাফলও অর্জিত হচ্ছে। আয় তহবিল স্থানান্তর, দক্ষতা উন্নয়ন, বাজারে অ্যাক্সেসযোগ্যতা, তহবিল ব্যবস্থাপনা, তৃণমূল সংগঠন গঠন, মূলধন প্রতি আয় বেড়েছে ২ হাজার দরিদ্র ও চরম দরিদ্র পরিবারের, আয় বেড়েছে ১৫০%। মানুষের ক্ষমতা উন্নয়ন, বর্ধিত জীবন দক্ষতা, বর্ধিত সংহতি, স্বউন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অবকাঠামো উন্নয়ন, এমবিবিএস ডাক্তার দ্বারা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান, স্বাস্থ্য শিক্ষা, গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মাকে জোর দেওয়া, নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সহায়তা লক্ষ্যকৃত সুবিধাভোগীদের জন্যে উন্নত ও মানসম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা, রোগের হ্রাস, অপুষ্টি হ্রাস, ১০০% স্যানিটেশন এবং নিরাপদ পানি, হ্রাসকৃত এনএমআর (নিও নেটাল মর্ট্যালিটি রেট), এমএমআর (মাতৃমৃত্যুর হার), উন্নত সুস্থ সমাজ সহজতর হয়েছে। শিক্ষা ও ক্ষমতায়নে শিশুদের জন্যে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্যে মানসম্মত শিক্ষা, জীবন দক্ষতা উন্নয়ন শিক্ষা ১০০% তালিকাভুক্তি, সমস্যা সমাধানের জন্যে সম্মিলিত পদক্ষেপ, কুসংস্কার হ্রাস, উন্নত সামাজিক সংহতি উন্নত হয়েছে। জরুরি এবং মানবিক সহায়তা, বয়স্ক, অক্ষম, বিধবা, দুর্যোগ ঝুঁকি প্রশমন কৌশলকে আর্থিক ও সম্প্রদায় সহায়তা বয়স্ক, অক্ষম, বিধবার আর্থিক দুর্বলতা হ্রাস পাচ্ছে। সার্বিকভাবে এ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের অসহায়-দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নত হচ্ছে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে স্বনির্ভর করা হচ্ছে। এর মধ্যে গ্রুপ লিডারদের গ্রুপ গতিবিদ্যা এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ৩৯জন, গ্রুপ লিডারদের অ্যাকাউন্টস এবং ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ৩৪জন, হাঁস-মুরগি পালনে ৬১জন, মোড়া তৈরিতে ১৩জন, আয় উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে ১ হাজার ৫০০ জন, হস্তশিল্পে (মাদুর) ২০জন, টিকা (মুরগি পালন) বিষয়ে ২৮জন, গরু মোটাতাজাকরণ ৩৫৯জন, গাভী পালনে ৩১১জন, কৃত্রিম প্রজনন এবং ভ্রণ স্থানান্তরে ৬ জন, দর্জি প্রশিক্ষণে ২৫জন, বেসিক কম্পিউটার প্রশিক্ষণে ২০ জনসহ মোট ২ হাজার ৭৪১জন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন।
প্রকল্পটি সুবিধাভোগীদের জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সুবিধাভোগী বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ পেয়েছেন এবং তারা এই অর্থ বিনিয়োগ করেছেন এবং তাদের আর্থিক ক্ষমতায়ন পরিবর্তন করেছেন। তাদের আয় গড়ে ১০ হাজার টাকা বেড়েছে এবং এটি প্রয়োজনীয় ভোক্তা টেকসই ও পছন্দসই খাদ্য আইটেমের ওপর বৃহত্তর ব্যয়ের অনুমতি দিয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের আওতাভুক্ত পরিবারগুলো শিক্ষাবৃত্তি, স্বাস্থ্যসেবাসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা পেয়ে আসছে।
প্রকল্পের কর্মকর্তা মো. রুবেল খান বলেন, ড্যাফোডিল ফাউন্ডেশনের ‘জীবিকা প্রকল্প’ হলো দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বৃদ্ধি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ এবং স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্যে একটি উদ্যোগ, যা চাঁদপুরসহ অন্যান্য অঞ্চলে স্কিল ডেভেলপমেন্ট বা দক্ষতা প্রশিক্ষণ, মূলধন সহায়তা, বাজারজাতকরণের সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, পুষ্টি কর্মসূচি, সচেতনতামূলক প্রচারণা, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা এবং সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। তিনি আরো জানান, জীবিকা প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে : দারিদ্র্য বিমোচন, স্বাস্থ্য ও কল্যাণ বৃদ্ধি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ, স্থিতিশীলতা অর্জন, বাজারজাতকরণ ও উদ্যোক্তা উন্নয়ন।
লেখক : মোঃ আনোয়ার হাবিব কাজল, ঊর্ধ্বতন সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ), ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।