প্রকাশ : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:২৩
চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে মোহনা শিল্পীগোষ্ঠীর কাওয়ালী সন্ধ্যা

চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনে আবারো প্রাণের ছোঁয়া দিলো মোহনা শিল্পীগোষ্ঠী। গত ১৫ আগস্ট ২০২৫ সালে বিকেলে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় ‘দ্রোহের গান ও কাওয়ালী সন্ধ্যা’। জুলাই শহীদদের স্মরণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠান ছিলো এক অনন্য সাংস্কৃতিক মিলনমেলা।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে সম্মিলিত সংগীত দিয়ে। তাদের সরল কণ্ঠে উঠে আসে দেশপ্রেম, মমতা আর নতুন দিনের স্বপ্ন। এরপর মঞ্চে পরিবেশিত হয় ছোট্ট নাটিকা ‘জুলাই’। নাটকের সংলাপ আর দৃশ্য বিন্যাস দর্শকদের মনে করিয়ে দেয় শহীদদের আত্মত্যাগ ও দ্রোহের জাগরণ। নাটকের পরপরই শুরু হয় ধারাবাহিক গানের পরিবেশনা। যদি আগামীর দিনটাকে পেতে চাও আলোয় ভরা, বইছে বাতাস বৈরী, তৈরি থেকো তৈরি, আয় তারুণ্য আয় আয়--এসব গান উপস্থিত দর্শকদের আবেগের ভেতর টেনে নেয়। এছাড়া ইসলামিক গানের সুর সম্রাট বিশিষ্ট কণ্ঠশিল্পী মশিউর রহমান ছিলেন অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ।
কাওয়ালী সন্ধ্যায় সংগীত পরিবেশন করতে একে একে মঞ্চে আসেন মোহনা শিল্পী গোষ্ঠীর কণ্ঠশিল্পী আব্দুস সালাম, ফরহাদ আলম, শিফাত মাহমুদ, জি. এম. ইকবাল ও জুবায়ের আল মাহমুদ। দলীয় ও একক পরিবেশনায় তারা তুলে ধরেন ইসলামি গান, আধ্যাত্মিক সুর আর দ্রোহের অনুরণন। সুরের মূর্ছনায় দর্শক-শ্রোতারা বিমুগ্ধ হয়ে উঠেন। প্রতিটি কাওয়ালী গানের মধ্যে ভেসে আসে একদিকে বিশ্বাস ও ভক্তির শক্তি, অন্যদিকে মানবতার বার্তা ও প্রজন্মকে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান।
শিল্পীরা শুধু গানই গেয়েছেন তা নয়, তারা তাদের পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সংগ্রামের ইতিহাস, দ্রোহের চেতনা এবং এক নবজাগরণের অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে তরুণ শিল্পীদের অংশগ্রহণ দর্শকদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। সংস্কৃতিপ্রেমীদের মতে, এই আয়োজন প্রমাণ করেছে চাঁদপুরে সংগীত ও নাট্যচর্চা এখনো কেবল টিকে নেই, বরং নতুনভাবে বিকশিত হচ্ছে।
অনুষ্ঠানের শেষ অংশে বক্তব্য রাখেন অতিথিরা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদ (সসাস)-এর নির্বাহী পরিচালক এইচ এম আবু মুসা। তিনি বলেন, সংস্কৃতি চর্চা ছাড়া একটি জাতি পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। মোহনা শিল্পীগোষ্ঠীর এই আয়োজন আমাদের মনে করিয়ে দেয়, কীভাবে শিল্প-সংস্কৃতি দ্রোহ, মুক্তি ও মানবতার বার্তা বহন করতে পারে।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহনার চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টা মাও. বিল্লাল হোসেন মিয়াজি, অ্যাডভোকেট শাহজাহান খান, আবদুস শুক্কুর মস্তান, খাজা মাকসুদুল আলম ও সাবেক পরিচালক আ. সালাম তামিম। এছাড়া বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে দর্শকদের মধ্যে ছিলেন জনপ্রিয় সংগীত শিল্পী সুর সম্রাট মশিউর রহমান এবং নাট্যজগতের পরিচিত মুখ মিজানুর রহমান মিজান।
অনুষ্ঠান শেষে অতিথিরা মোহনা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এ ধরনের আয়োজনে শুধু সংস্কৃতি চর্চাই নয়, প্রজন্মের ভেতর দেশপ্রেম ও মানবিকতার শিক্ষা বেঁচে থাকে। চাঁদপুরের সংস্কৃতি অঙ্গনের জন্যে এই আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।