রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭

হাইমচরের অর্থকরী ফসল পান, দুর্যোগে প্রণোদনা নেই কেন?

অনলাইন ডেস্ক
হাইমচরের অর্থকরী ফসল পান, দুর্যোগে প্রণোদনা নেই কেন?

চাঁদপুরের উপকূলীয় উপজেলা হাইমচরের অর্থকরী ফসলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পান। প্রতিবছর এখানকার পান বিক্রি হয় প্রায় ৫০ থেকে ৫২ কোটি টাকায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এই পান সরবরাহ করা হয় পাশের উপজেলা ও জেলার বাজারেও। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাইয়ে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পানচাষিরা সরকারের কাছ থেকে কখনো কোনো প্রণোদনা বা সহায়তা পাননি-এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।

ভৌগোলিকভাবে হাইমচরবাসী মেঘনা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম দুই পাড়ে বিভক্ত। পূর্বপাড়ের লোকজন মূলত কৃষিকাজ এবং পশ্চিমের চরাঞ্চলের বাসিন্দারা মাছ ধরা ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যুগ যুগ ধরে এ অঞ্চলে মহানলী, চালতা কোঠা, নল ডোগ, সাচি জাতের পান চাষ করে পরিবার চালাচ্ছেন হাজারো মানুষ। অনেকেই বংশপরম্পরায় যুক্ত এই আবাদে। উপজেলা ঘুরে এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীত মৌসুম ছাড়া বছরের বাকি সময়জুড়ে প্রতিদিনই চলে পান সংগ্রহ ও বিক্রি। আগে পানের বাজার ছিলো জেলা শহরের বাইরে, এখন হাইমচর উপজেলা সদরের কাছেই গড়ে উঠেছে পানের আড়ত, যেখানে প্রতিদিন চলে পাইকারি বেচাকেনা। উত্তর আলগী ইউনিয়নের মহজমপুর গ্রামের চাষি ফারুকুল ইসলাম গাজী দেড় একর জমিতে পান চাষ করেন। প্রতিদিন তার বরজে কাজ করেন তিন-চারজন শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগে মাঝেমধ্যে বড়ো ধরনের ক্ষতি হয়। তবে যখন দাম ভালো থাকে, তখন ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে আসে। কিন্তু কোনো দুর্যোগে কখনো সরকারি সহায়তা পাইনি।’

পানের বরজের একাধিক শ্রমিক জানান, অল্প বয়সেই তাঁরা পান চাষের কাজ শিখেছেন এবং এ কাজ দিয়েই চলে তাদের সংসার। একই গ্রামের আরেক চাষি মোহাম্মদ হারুন বলেন, ‘আমাদের বাবারা এই বরজ রেখে গেছেন। এখন আমরাই আবাদ করছি। পানে রোগ দেখা দিলে উৎপাদন কমে যায়, শিকড় পচে নষ্ট হয়, আবার নতুন করে শিকড় লাগাতে হয়। কোনো প্রশিক্ষণ পাই না, আগেরদের দেখে কাজ শিখে নিচ্ছি।’

হাইমচরের পান বেপারী মো. রাসেল দুই দশক ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত। তিনি বলেন, ‘হাইমচরের বরজ থেকে পান কিনে স্থানীয় বাজারে পাইকারি ও খুচরা বিক্রি করি। বাবুরহাট, মহামায়া, চান্দ্রা বাজারসহ আশপাশের শতাধিক ব্যবসায়ী এ পেশায় যুক্ত।’ হাইমচরের পার্শ্ববর্তী ফরিদগঞ্জ উপজেলার কামতা গ্রামের চেরাগ আলী ৩০ বছর ধরে পান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘প্রতি শুক্র ও মঙ্গলবার আমি বিভিন্ন বাজারে পান বিক্রি করি। হাইমচর থেকে প্রতিবার অর্ধলাখ টাকার পান কিনি। এই ব্যবসার ওপরই আমার সংসার চলে।’

হাইমচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাকিল খন্দকার জানান, ‘চলতি বছর হাইমচরে ২৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে। ছোট-বড় বরজের সংখ্যা ১ হাজার ৭২। প্রতি বছর প্রায় ৫০-৫২ কোটি টাকার পান বিক্রি হয়। দুর্যোগ বা রোগ দেখা দিলে কৃষকদের পাশে থাকি, পরামর্শ দিই। প্রণোদনার প্রয়োজন হলে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত পান চাষে কোনো সহায়তা পাওয়া যায়নি।’

হাইমচরের উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল পান। বছরে ৫০-৫২ কোটি টাকা বিক্রি হয়, যেমনটি বাংলাদেশের সাবেক প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আঁশ পাটও কোনো কোনো উপজেলায় বছরে এতো টাকায় বিক্রি হয় না। অথচ এই পান প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কৃষকদের পুনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনা দেয়া হয় না। এটা নিয়ে গণমাধ্যমে গত বেশ ক’বছর ধরে অদ্যাবধি ব্যাপক লেখালেখি হলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের একবিন্দু টনক নড়ছে না। এটা খুবই দুঃখজনক। আমরা এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের দৃষ্ট আকর্ষণ করছি। আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে হাইমচর উপজেলা সফর করে সরেজমিনে পানচাষ প্রত্যক্ষ করা, চাষিদের কথা শোনা এবং তারপর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখার অনুরোধ জানাচ্ছি। যে চিঠিতে তিনি হাইমচরে পান চাষের অর্থকরী দিক, এর সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে ধরে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হলে যাতে চাষিরা প্রণোদনা পেতে পারেন সে যৌক্তিকতা তুলে ধরবেন। আমাদের বিশ্বাস, জেলা প্রশাসকের এমন চিঠিতে অবশ্যই কাজ হবে। কেননা ইতোমধ্যে প্রমাণ মিলেছে তাঁর চিঠিতে কেমন কাজ হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়