প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৫, ১৯:০২
সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয় : নাহিদ

সংস্কার ছাড়া জাতীয় নির্বাচন নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান মানেই মুজিববাদী সংবিধান। দেশের সংস্কার ও উন্নয়নে সেই সংবিধানের সংস্কার প্রয়োজন। আমরা বলেছি, আমাদের একটি নতুন সংবিধান প্রয়োজন। সেই সংবিধানে বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকারের কথা থাকবে, বাংলাদেশের যে ঐতিহাসিক ১৯৪৭-এর আজাদির লড়াই, ১৯৭১- এর স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ২০২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতি থাকবে। এই সংবিধানে সকল জাতি ও ধর্মের সমানাধিকার থাকবে। কিন্তু ’৭২-এর সংবিধানকে রক্ষা করার জন্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী রাজপথে নেমেছে। ’৭২- এর সংবিধান ছিলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে, স্বাধীনতা সংগ্রামের আকাঙ্ক্ষাকে নষ্ট করে মুজিববাদী সংবিধান প্রতিষ্ঠা করার চক্রান্ত। আমরা সেই চক্রান্তের মধ্যে ৫৪ বছর ছিলাম। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সেই চক্রান্ত থেকে আমরা বের হয়ে আসতে চাই।
দেশব্যাপী এনসিপির জুলাই পদযাত্রা কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার (২৬ জুলাই ২০২৫) মৌলভীবাজারে আয়োজিত পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ কথাগুলো বলেন। এর আগে মৌলভীবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা বের হয়।
পথসভায় মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলমের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মারুফ আল হামিদ, জাকারিয়া ইমন, এনসিপি কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ, মৌলভীবাজার এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক এহসান জাকারিয়া প্রমুখ।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সেই জুলাই-আগস্ট থেকে এই জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত একবছর হয়ে গেছে। আমরা বলেছিলাম, একটি নতুন বাংলাদেশ লাগবে, একটি নতুন বন্দোবস্ত লাগবে। পুরোনো সিস্টেমে, পুরোনো আইনে আমরা আর এই বাংলাদেশকে পরিচালিত হতে দেবো না। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরে দালাল শক্তি আবারও চেষ্টা করছে পুরোনো সিস্টেমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার। বিচার, সংস্কার এবং একটি নতুন সংবিধানের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই। তরুণরা কর্মসংস্থানের দাবিতে রাজপথে নেমেছিলো। বাংলাদেশের জনগণ অর্থনৈতিক বৈষম্য বিলোপের দাবি, মানবিক মর্যাদা ও নিজেদের স্বাধীনতার জন্যে রাজপথে নেমেছিলো। আমরা সেই স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র পেলেও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের দাবি এখনো পূরণ করতে পারি নি।
তিনি আরো বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে আমরা অনেক স্বপ্ন দেখেছিলাম, আমাদের অনেক দাবি ছিলো। কিন্তু আমাদের সব স্বপ্নকে নির্বাচনের সাথে একমাত্র দাবিতে রূপান্তর করে ফেলা হয়েছে। আমরা নির্বাচন চাই। আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে লড়াই করার শক্তি। কিন্তু বিচার সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন হয়ে যাবে। এই নির্বাচনকে জনগণ গ্রহণ করবে না। ফলে বিচার সংস্কারে যতোটুকু আমরা এগিয়েছি তার পক্ষে ঐক্যমত হয়ে আমাদেরকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
পথসভায় এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আরো বলেন,
মৌলভীবাজারে বাংলাদেশের সর্বাধিক চা বাগান আছে। তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ রয়েছে। কিন্তু মৌলভীবাজারের যে সম্পদ রয়েছে তার সুষ্ঠু ব্যবহার আমরা কখনো করতে পারি নি। তিনি বলেন, মৌলভীবাজারে চা শ্রমিকরা রয়েছেন। কয়েকদিন পরপরই ন্যায্য মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলন করেন। শ্রীলঙ্কায় চা শ্রমিকরা সাড়ে ৫শ' টাকা মজুরি পায়। ভারতে ৪শ' টাকার মতো মজুরি পায়। কিন্তু বাংলাদেশে চা শ্রমিকরা ১৭৯ টাকা মজুরি পায়। ১৭৯ টাকায় একজন শ্রমিক কীভাবে তার দিনযাপন করবে, কীভাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবারের ভরণপোষণ করবে! আমরা চা শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে চাই।