শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫  |   ৩৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৫, ০২:২৭

বাবুরহাট ট্যাক্সি ক্যাব স্ট্যান্ডে চলছে চাঁদাবাজির মহোৎসব!

নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ যাত্রী ও গাড়ি চালকরা

২০ টাকার টোল গাড়ি প্রতি নেয়া হচ্ছে ৫শ' থেকে ১ হাজার টাকা।। মাঠে সেনাবাহিনীর অবস্থানের পরও পরিবহন সেক্টরে প্রকাশ্যে এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় ক্ষুব্ধ এবং হতাশ জনগণ

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট
নিয়ন্ত্রণহীন চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ যাত্রী ও গাড়ি চালকরা
ছবি :বাবুরহাট ট্যাক্সি ক্যাব স্ট্যান্ড

এ যেনো চাঁদাবাজির মহোৎসব চলছে। এই স্ট্যান্ডকে ঘিরে এমন চাঁদাবাজি দীর্ঘদিনের। বিগত সরকারের আমলেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর চাঁদার পরিমাণ আরো বেড়েছে। স্ট্যান্ডের ইজারাদারের বিরুদ্ধে এই মাত্রাতিরিক্ত টোলবাজির নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

সরজমিনে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বাবুরহাট-মতলব রোডের মোড়ের পশ্চিম পাশে চাঁদপুর পৌরসভা থেকে ট্যাক্সিক্যাব ইজারার নির্ধারিত স্ট্যান্ড রয়েছে। এখান থেকে ঢাকাগামী যাত্রী নিয়ে মাইক্রো, হাইস্ এবং প্রাইভেটকার ছাড়া হয়।

এসব গাড়ি থেকেই পৌরসভার নির্ধারিত টোল আদায়ের নামে চলছে ব্যাপক চাঁদাবাজি। পৌরসভা থেকে নির্ধারিত গাড়িপ্রতি দৈনিক একবার ২০ টাকা টোল আদায়ের কথা থাকলেও ইজারাদার নিচ্ছেন গাড়িপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা।

কিছু কিছু গাড়ির ক্ষেত্রে মাথাপিছু যাত্রী প্রতি ১০০ টাকা করে অর্থাৎ ৬ সিটের গাড়ির জন্য ৬০০ টাকা ও ১০ সিটের গাড়ির জন্য ১০০০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।

কম সময়ে চাঁদপুর থেকে ঢাকার যাত্রীদের জন্যে নৌপথের বিকল্প মাধ্যম হচ্ছে বাবুরহাট থেকে মাইক্রো কিংবা প্রাইভেটকারে করে মতলব হয়ে যাওয়া। নৌ পথের চেয়ে অনেক কম সময়ে ঢাকা পৌঁছায় এই রুটটি যাত্রীরা বেছে নেয়।

যাত্রী বাড়তে থাকায় এখানে গাড়ির সংখ্যাও বাড়তে থাকে। আর এতেই যেনো চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের জন্যে সোনায় সোহাগা হয়। বেপরোয়া হয়ে উঠে তারা। চলে নিয়ন্ত্রণহীন টোল আদায়ের নামে চাঁদাবাজি। আর এই চাঁদার ভার গিয়ে পড়ে যাত্রীদের উপর।

যাত্রীদের অভিযোগ : এ পথে ঢাকায় যেতে মাইক্রো কিংবা প্রাইভেটকারে তাদের গুণতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া।

একাধিক যাত্রী বলেন, নৌপথের দ্বিগুণের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে হচ্ছে বাবুরহাট থেকে ঢাকা যেতে। ঈদ, পূজা, পহেলা বৈশাখ, বৈরী আবহাওয়ার দিনগুলোসহ বিশেষ ছুটির দিনগুলোতে এই ভাড়া নৌপথের ভাড়ার তিনগুণ, চারগুণ এমনকি পাঁচগুণও হয়ে যায়।

নন এসি গাড়ি সাধারণত ৪০০-৫০০ টাকা এবং এসি গাড়ি ৬০০-৭০০ টাকা করে যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।

ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই রুটের মাইক্রো এবং প্রাইভেটকার চালকরা বলেন, পৌরসভা থেকে গাড়িপ্রতি দৈনিক একবার ২০ টাকা করে টোল নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কাছ থেকে ইজারাদার প্রতি ট্রিপে ৪০০-৫০০ টাকা এমনকি কিছু গাড়ির ক্ষেত্রে ১০০০ টাকাও নেয়া হচ্ছে।

যে গাড়িগুলো ঢাকা থেকে চাঁদপুরে ভাড়া নিয়ে আসে এবং চাঁদপুরের বাহিরের গাড়িগুলোকে গুণতে হয় যাত্রীপ্রতি মাথাপিছু ১০০ টাকা করে।

টোল আদায়ে পৌরসভা নির্ধারিত যে হার রয়েছে এবং দৈনিক একবার আদায়ের বিধান রয়েছে, তা যদি ইজারাদাররা মানে তাহলে ভাড়া কমাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

ড্রাইভারদের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'আপনারা প্রতিবাদ করছেন না কেন?' উত্তরে তারা জানান, ইজারাদাররা অনেক প্রভাবশালী। প্রতিবাদ করলে পরের দিন হতে এখান থেকে আর কোনো ট্রিপ নিতে পারবো না।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার কর শাখার প্রধান তৌহিদুল ইসলাম চপল বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাবুরহাট ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ড ইজারা দেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করে চাঁদপুর পৌরসভা।

গত বছর এই ইজারা মূল্য ছিলো ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। ১০% আয়কর, ১৫% ভ্যাট ও ৫% জামানতসহ যা ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ৮১ হাজার টাকা।

কিন্তু এ বছর ২৮টি সিডিউল বিক্রি হয় এবং ইজারাদারদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিযোগিতায় শেষ পর্যন্ত ২৬ লক্ষ ৫৫ হাজায় টাকায় (সাথে আয়কর ১০%,ভ্যাট ১৫% ও জামানত ৫% সহ) বাবুরহাট ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ডটি ইজারা নেন হাবিবুর রহমাল মাল।

ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ডটির ইজারা নীতিমালা সম্পর্কে তৌহিদুল ইসলাম চপল বলেন, দিনে একবার গাড়িপ্রতি ২০ টাকা টোল আদায় করবে ইজারাদাররা।

গাড়িপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা করে টোল আদায় হওয়ার বিষয়ে চপল বলেন, পৌরসভার বিধানের বাইরে টোল আদায়ের সুযোগ নেই।

গাড়িপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা করে টোল নেয়া হচ্ছে এমন কোনো অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।

শুধু বাবুরহাট নয়, শহরের ওয়্যারলেস মোড়েও ঢাকাগামী মাইক্রো-প্রাইভেটকার থেকে চাঁদা নেয়া হচ্ছে।

ওয়্যারলেস এলাকায় পৌরসভার কোনো স্ট্যান্ড আছে কিনা জানতে চাইলে চপল বলেন, ওয়্যারলেস এলাকায় আমাদের কোনো স্ট্যান্ড নেই।

‘তাহলে কারা তুলছেন প্রাইভেটকার-মাইক্রো থেকে গাড়িপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা, কিছু গাড়ি থেকে তারও অধিক চাঁদা’ এমন প্রশ্নের জবাবে চপল বলেন, কারা তুলছেন চাঁদা তা আমাদের জানা নেই।

তবে বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। পৌরসভার প্রশাসক মহোদয় এ বিষয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেবেন।

এ বিষয়ে চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক গোলাম জাকারিয়া বলেন, পৌরসভার নির্ধারিত যে টোল আছে তা আমরা চার্ট আকারে বাবুরহাট ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ডে লাগিয়ে দিয়েছি।

পৌরসভার নির্ধারিত যে টোল রয়েছে প্রতি গাড়ি দিনে একবার ২০ টাকা। তার চেয়ে বেশি নেয়ার সুযোগ নেই।

আমি ড্রাইভার ভাইদের বলবো, আপনারা ২০ টাকার বেশি দিবেন না। টোল আদায়ে অনিয়ম হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। শীঘ্রই জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পৌর প্রশাসক আরো বলেন, ওয়্যারলেস এলাকায় ট্যাক্সিক্যাব স্ট্যান্ডের আমরা কোনো ইজারা দেইনি। আমরা শুনেছি কিছু অসাধু লোক সেখান থেকে চাঁদা তুলছে। তাদের বিরুদ্ধেও জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মাঠে সেনাবাহিনীর অবস্থান থাকার পরও পরিবহন সেক্টরে প্রকাশ্যে এমন চাঁদাবাজিতে হতাশ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সচেতন মহল।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়