রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৫, ০৯:২৩

চাঁদপুরে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে পহেলা বৈশাখ ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া

মইনুদ্দিন লিটন
চাঁদপুরে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের নেতৃত্বে পহেলা বৈশাখ ও সংস্কৃতির ব্যক্তিদের প্রতিক্রিয়া

বৈশাখ নতুন বছরের সূচনা করে। এক সময় বৈশাখের প্রথম দিনে ঘরে ঘরে মিঠাই-পায়েস-মিষ্টি ছিলো। বাড়ির ছেলেমেয়েদের গায়ে নতুন জামা ছিলো। বৃদ্ধ রিটায়ার্ড বাবার জন্যে নতুন লুঙ্গি আর মায়ের ঢাকাই শাড়ি ছিলো। দোকানে-গদিঘরে হাল খাতা ছিলো। এখন তার অনেক কিছুই বদলে গেছে। দল বেঁধে হকার্স মার্কেটের ঘামঝরা ভিড়ে অতীতের কতো কিছুই তো ঝরে গেলো। এই শহরের পাড়া-মহল্লায় মেলা বসতো। ছোট্ট রং করা হাতি-ঘোড়া আর হাত-চরকায় কতো স্বপ্ন মাখা থাকতো। তার কতো কিছু তো হারিয়ে গেছে। একদম হারিয়েই গেছে। তবুও শিল্পীরা মানুষের সেই হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো তাদের অনুষ্ঠানে গানে-নাচে-নাটকে-কবিতায় বাঁচিয়ে রাখে। এটা রাখা খুবই জরুরি। এটা না থাকলে মানুষের স্বপ্নই বেঁচে থাকে না। আর যখন মানুষের কোনো স্বপ্ন থাকে না তখন সেই সমাজে অতীত-ভবিষ্যৎ কিছুই থাকে না। থাকে শুধুই বর্তমান!!

বর্তমানে আমাদের সময়টা নিয়ে যে কথাটা বলতে হয়, সেটা হলো একটা অস্থিরতার মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি। সাধারণত কোনো বড়ো ধরনের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একটা দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটা যে কোনো দেশের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। আমরা এখন সেরকম একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। ঠিক এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন, কোন্ দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ? প্রশ্নটা অযৌক্তিক আমি তা বলছি না। কিংবা এমন প্রশ্ন মাথায় আসা ঠিক না, এটাও বলছি না। তবে এ রকম পরিবর্তনের পরের পরিস্থিতিতে এই ধরনের প্রশ্নগুলো একটু বেশি কঠিন মনে হয়। মানুষ তো তার পরিস্থিতির বাইরে নয়। তাই এ ধরনের পরিস্থিতির মধ্য থেকে জেগে ওঠা প্রশ্নগুলোর মধ্যেও চরম অস্থিরতা থাকে। থাকতেই পারে। থাকাটাই স্বাভাবিক। কখনো কখনো এই ধরনের অস্থিরতা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কেটে যায়। আবার কখনো অনেক সময় লেগে যেতে পারে। আবার এই ধরনের পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আমাদের ইতিবাচক দিকগুলো দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। কেবল নেতিবাচক দিকগুলো বারবার চোখের সামনে স্পষ্ট হতে থাকে। এর ফলে আমাদের ভাবনার মধ্যেও চরম অস্থিরতা কাজ করতে থাকে। তখন আমরা ভাবি, এর শেষ কোথায়? ঠিক এমনই যখন পরিস্থিতি তখন সমাধানের সবকিছু সঠিক নেতৃত্বের উপরে নির্ভর করে। আর নেতৃত্বে যদি থাকে শেকড়ের টান, তখন সমাজ তার শেকড়কে ধারণ করে এগিয়ে যায়। এবারের পহেলা বৈশাখ নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার যে উদ্যোগ ও আয়োজন আমরা দেখতে পেয়েছি তা থেকে বোঝা যায়, আমরা নিজের শেকড়ের উপরে দাঁড়িয়ে নতুন দিগন্তের দিকে এগিয়ে যেতে চাইছি। কথাটা একটু বেশি মনে হতে পারে। কিন্তু যদি আমরা নির্মোহভাবে এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে দেখি তাহলে এই কথার যথার্থতা খুঁজে পাবো।

ঐ যে বলছিলাম, একটি সঠিক নেতৃত্বই পারে সমাজকে তার শেকড়ের দিকে নিয়ে যেতে। এবারের পহেলা বৈশাখে আমরা তেমনই নেতৃত্ব খুঁজে পেয়েছি আমাদের চাঁদপুরের জেলা বিএনপি’র সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের ভূমিকায়। তিনি চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষগুলোকে নিয়ে বেশ কয়েকটি বৈঠক করেন। যাতে সবাই নির্বিঘ্নে এবং নিঃসংকোচে নিজেদের আয়োজন নিয়ে পহেলা বৈশাখের ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’য় অংশ নিতে পারে, সেজন্যে সব ধরনের ব্যবস্থা রেখে জেলা বিএনপি আয়োজিত ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’টি পরিচালিত করেন। সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক এই শোভাযাত্রায় সশরীরে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দেন। এবারের শোভাযাত্রার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, সবাই একত্রে মিলে এই ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’টি করেছে। স্ব স্ব সংগঠনের ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড নিয়ে এদেশের ঐতিহ্যের নানান উপকরণের মটিফ সহ বিভিন্ন সংগঠন এই ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ করতে পেরেছে। সবাই মিলেমিশে এমন আনন্দ করাটা ছিলো স্মরণাতীত কালের অন্যতম। তার ক’দিন পরেই স্থানীয় হাসান আলী স্কুল মাঠে বিএনপি সবাইকে নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানেও চাঁদপুরের প্রায় সবক’টি সংগঠন অংশ নেয়। শিল্পীরা তাদের পছন্দের নাচ-গান পরিবেশন করে মঞ্চ মাতিয়ে রাখে। এই অনুষ্ঠানেও শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক উপস্থিত থেকে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এ বিষয়ে চাঁদপুরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সাথে কথা হয়েছে। তারা এ নিয়ে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

চাঁদপুরের একটি প্রাচীনতম ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন শতবর্ষ ছুঁইছুঁই সঙ্গীত নিকেতনের অধ্যক্ষ স্বপন সেনগুপ্ত বলেন, ‘এবারের আয়োজনটা ছিলো ব্যতিক্রমধর্মী। সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। সবাই একত্রিত হতে পেরেছে, এটা অনেক বড়ো ব্যাপার। এতে করে চাঁদপুরে শিল্পসংস্কৃতিতে যে স্থবিরতা ছিলো সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে’। তিনি তারেক জিয়ার বর্তমান সেন্টিমেন্টগুলোকে পজিটিভ বলে আরো বলেন, ‘তার প্রতিনিধি হিসেবে আমাদের মানিক যথার্থ উদ্যোগ নিয়েছে’। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত নাচের সংগঠন নৃত্যাঙ্গনের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ রুমা সরকার বলেন, যদিও এবার পহেলা বৈশাখ নিজেরা যেভাবে করি সেভাবে হয়নি। কিন্তু বিএনপি’র সভাপতি আয়োজিত এবারের আয়োজন শতভাগ সফল হয়েছে’। তিনি আরো বলেন, ‘এর মাধ্যমে চাঁদপুরের সংস্কৃতির স্থবিরতা কেটে গেছে’। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সুরধ্বনির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ অনিতা নন্দী জানান, ‘খুবই আনন্দঘন পরিবেশে এই ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ হয়েছে। পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সকল সংগঠনের প্রতি আয়োজকদের সমান দৃষ্টি ছিলো। তাই বেশ প্রাণবন্ত অনুষ্ঠান হয়েছে’। বিশিষ্ট শিল্পী শুভ্র রক্ষিত বলেন, নিজের ব্যান্ডের বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান নিয়ে এবারের বৈশাখ তার ব্যস্ততার মধ্যে কেটেছে। ‘তবে বিএনপি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে কোনো রাজনীতি হয় নাই’। তিনি আরো বলেন, এই আয়োজনের অনুষ্ঠানটিতে এতোগুলো সংগঠন একত্রিত হয়ে কাজ করেছে, তার জানা মতে ‘এটা সত্যিই একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে’। ৩৬ বছরের পুরোনো রংতুলি সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইখতিয়ার উদ্দিন শিশু বলেন, ‘নিজের রাজনৈতিক দলের আয়োজনে নিজের সাংস্কৃতিক সংগঠনের অনুষ্ঠান করে আমি সত্যিই একটু আলাদা ধরনের আনন্দ অনুভব করেছি। চাঁদপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইয়ের এমন পজিটিভ রাজনীতি অনেকের জন্যে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে’।

ঐতিহ্যবাহী বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠীর সভাপতি শুকদেব রায় বলেন, ‘এবার সব আয়োজন অনেক ভালো হয়েছে। এর অনেকটা কৃতিত্ব জেলা বিএনপি’র সভাপতি মানিক ভাইয়ের, তাঁর প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ’। ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত জয়ধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তনের অধ্যক্ষ শিল্পী সুদীপ কর জানান, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ মোটামুটি ভালোই হয়েছে। বিএনপি এবার সঠিক উদ্যোগ নিয়েছে। এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ’। আনন্দধ্বনি সঙ্গীত শিক্ষায়তনের প্রতিষ্ঠা ২০১০ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ বিশিষ্ট সঙ্গীত প্রশিক্ষক রফিক আহমেদ মিন্টু বলেন, ‘নিজেদের বৈশাখের আয়োজন খুব ভালো কাটেনি। অন্যান্য বারের মতো বাবুরহাটে নিজেদের নিয়মিত আয়োজন করতে পারেননি। কিছু সংকোচ ছিলো। ‘তবে জেলা বিএনপি’র এমন আয়োজন অনেকটা পজিটিভ হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের সংস্কৃতি চর্চার অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা কাটাতে পেরেছে’।

চাঁদপুরের প্রাচীনতম নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তরূপা নৃত্য শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল ১৯৮৭ সালে। এর অধ্যক্ষ অনিমা সেন চৌধুরী জানান, ‘সবাই অংশগ্রহণ করায় এবারের বৈশাখের আয়োজন শিল্পীদের মিলন মেলায় রূপ নিয়েছে। স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজ করতে পেরেছি’। চাঁদপুর পুরাণবাজারের একটি প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ‘বঙ্গজ’-এর অধ্যক্ষ স্বজন সাহা তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘এবারের পহেলা বৈশাখ বেশ ভালোভাবেই কেটেছে। মানিক ভাইকে সাধুবাদ জানাই, কারণ তিনি এমন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে চাঁদপুরের সব শিল্পীদের এক প্লাটফর্মে এনেছেন। এতে শংকা কেটে গেছে’। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত আবৃত্তি সংগঠন বহুবচন একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক বিশিষ্ট আবৃত্তিকার এম আর ইসলাম বাবু বলেন, ‘পুরো আয়োজন, আনন্দ শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান খুবই গর্জিয়াস হয়েছে। শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক ভাইকে ধন্যবাদ’।

নৃত্যধারা নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্ম ২০০১ সালে। এই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সাধারণ সম্পাদক শিল্পী সোমা দত্ত বলেন, ‘পুরো আয়োজনটাই ছিল ভীষণ আনন্দঘন, প্রাণবন্ত। এ যেন শিল্পীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়ে উঠেছিল। এমন আরো উদ্যোগ মানিক ভাইয়ের কাছে প্রত্যাশা করছি’।

চাঁদপুর সরকারি কলেজ নাট্য মঞ্চের সভাপতি সিয়াম খান তার প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘মানিক ভাইয়ের এমন উদ্যোগ চাঁদপুরের শিল্পাঙ্গনের স্থবিরতাকে কাটিয়ে সবাইকে আবার জাগ্রত করতে পেরেছে। চাঁদপুরবাসী এই আয়োজনকে চিরকাল মনে রাখবে’।

এবারের পহেলা বৈশাখ উদযাপন সত্যিই চাঁদপুরের ইতিহাসে এক বিরল দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেলো। এরপরে জেলা বিএনপি’র সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক জেলা জাসাসের উদ্যোগে চাঁদপুরের সকল শিল্পী ও সংগঠকদের নিয়ে বেশ খোলামেলা মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে তিনি শিল্পীদের বক্তব্য শুনেন। শিল্পীদের বক্তব্যে চাঁদপুর সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের অচলাবস্থার বিষয়টি উঠে আসে। সেই প্রেক্ষিতে তিনি চাঁদপুর সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র পরিদর্শনের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। শিল্পী সংগঠকরাও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এইতো ঈদের ছুটি কাটিয়ে সবাই আবার নিজ নিজ কাজে ফিরতে শুরু করেছে। খুব শিগগিরিই তারা তাদের প্রিয় নেতাকে নিয়ে আসবেন চাঁদপুর সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রে। সব বৈষম্য দূর করে, সব অনিয়ম ও দুর্বৃত্তায়ন মুছে ফেলে তারা নিজেদের স্বপ্নকে তাদের অতি আপনজন তাদের নেতা, তাদের ভাই শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের স্বপ্নের সাথে মেলবন্ধন ঘটাতে চান। তবেই তো স্বপ্ন একদিন বাস্তবে রূপ নিবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়