প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২০:৫৬
চিতোষী ডিগ্রি কলেজে কর্তৃত্বের দ্বন্দ্ব
সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অনিয়মে নাজেহাল নিয়মিত অধ্যক্ষ

শাহরাস্তি উপজেলার চিতোষী ডিগ্রি কলেজে সম্প্রতি প্রশাসনিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা বর্তমান উপাধ্যক্ষ কামরুল আহসান চৌধুরী নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছেন। গায়ের জোরে তিনি একাধিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা কলেজের নীতিমালা ও পরিচালনা পর্ষদের নির্দেশনার পরিপন্থী।
|আরো খবর
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত অধ্যক্ষ দীর্ঘদিন ধরে নানা উপায়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাঁকে অফিসে প্রবেশে বাধা দেয়া, নথিপত্রে স্বাক্ষর না করা এবং মিথ্যা অভিযোগে প্রশাসনিকভাবে কোণঠাসা করার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ ও আতঙ্ক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নিয়মিত অধ্যক্ষের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে ইচ্ছাকৃতভাবে। উপাধ্যক্ষ (সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ) প্রভাব খাটিয়ে কলেজ পরিচালনা করছেন নিজের মতো করে।
স্থানীয় অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, কলেজের শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে, আর এর ফলে কলেজের সুনাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বক্তব্য নেয়ার চেষ্টা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে নিয়মিত অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই, কিন্তু নানা বাধা ও হয়রানির কারণে তা করতে পারছি না।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, চিতোষী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদটি গত ৩১/১২/১৯ খ্রি. হতে শূন্য হয়। ফলে কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তথা উপাধ্যক্ষ হতে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ১০/০৬/২০২০ তারিখে মৃত্যুবরণ করায় কলেজের সিনিয়র শিক্ষক দক্ষিণা রঞ্জন ভৌমিককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করে গভর্নিং বডি। তিনি ৩১/১২/২০ খ্রি. তারিখে অবসরগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ কামরুন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। গত ৩১/০১/২১ খ্রি. তারিখে মো. কামরুল আহসান চৌধুরী কলেজের কারিগরি শাখার উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পান। তারপর ০১/০৩/২১ খ্রি. তারিখে তাকে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি গত ১৫/০৭/২২ খ্রি. পর্যন্ত কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। গত ০৮/০৭/২২ খ্রি. তারিখে গভর্নিং বডির সভাপতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯/০৬/২০২২ তারিখে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের আলোকে মো. কামরুল আহসান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব হতে অপসারণ করে সহকারী অধ্যাপক কামরুন নাহারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেন। এদিকে মো. কামরুল আহছান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ হতে অপসারণ অবৈধ দাবি করে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে ১০৩৮৬/২০০২ ও ১২৮৪৫/২০০২ রিট পিটিশন দায়ের করলে মহামান্য হাইকোর্ট পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরকে নির্দেশ দেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৯/০৩/২০২৩ খ্রি. তারিখে নিম্ন মতামতে তা নিষ্পত্তি করেন যে, চিতোষী ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় মো. কামরুল আহসান চৌধুরীর আবেদনটি অকার্যকর এবং তার আবেদনের মেরিট নেই। সেজন্যে আবেদনটি বিবেচনা করা গেল না মর্মে রিট পিটিশন নাম্বার ১২৮৪৫/২০২২-এর মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে মো. কামরুল আহছান চৌধুরী ১০/১০/২০২২ তারিখের আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়। এছাড়াও মো. কামরুল আহসান চৌধুরী কলেজ গভর্নিং বডি কর্তৃক তার অপসারণ অবৈধ, অকার্যকর ও যোগসাজশি মর্মে ঘোষণা ডিক্রির প্রার্থনা করে কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ সহকারী জজ, শাহরাস্তি, চাঁদপুর আদালতে ০৪/২৩ মামলা দায়ের করেন এবং উক্ত মামলার রায় মো. কামরুল আহসান চৌধুরীর বিপক্ষে যায়। এমতাবস্থায় তিনি তার রিট মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট, হাইকোর্ট বিভাগ থেকে উত্তোলন করে নেন।
এ প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মারক নং-৫৫৯২৮, ১৬/১০/২২ খ্রি. মূলে মো. আনোয়ার হোসেন ভূঁইয়াকে চিতোষী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদানের অনুমতি প্রদান করা হয়। তিনি কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নেয়ার পর কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামরুল আহসান চৌধুরী কর্তৃক ৭০ লাখ ৭০ হাজার ১৪৩ টাকা আত্মসাতের বিষয়ের কথা উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালতের অনুমতিক্রমে কলেজের লেনদেন সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যাংক হতে স্টেটমেন্ট সংগ্রহ পূর্বক পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বিবাদী কামরুল আহসান চৌধুরী চিতোষী ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালে অর্থাৎ ০১/০৩/২১ খ্রি. হতে ১৫/০৭/২২ খ্রি. পর্যন্ত সোনালী ব্যাংক পিএলসি, কালিয়াপাড়া বাজার, চাঁদপুর শাখা হতে ২,৫২,৬৪০/-টাকা, অগ্রণী ব্যাংক, শাহরাস্তি শাখা, চাঁদপুর হতে ৪,৯৯,৩০০/-টাকা, রূপালী ব্যাংক, শাহরাস্তি বাজার শাখা, চাঁদপুর হতে ৬৭৭/-টাকা এবং মার্কেন্টাইল ব্যাংক, চিতোষী ব্যাংক, শাহরাস্তি, চাঁদপুর হতে ৬৫,৩১,৫৮৭/-টাকাসহ সর্বমোট ৭২ লাখ ৮৪ হাজার ২০৪ টাকা উত্তোলন করেন। মামলায় মো. কামরুল আহসান চৌধুরীর উপস্থাপিত কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, তিনি উল্লেখিত সময়ে ব্যাংক থেকে ৭২,৮৪,২০৪/- উত্তোলন করেছেন এবং কলেজের স্টাফদের বেসরকারি বোনাস, ডিডি, পরীক্ষা, পিএফ, বকেয়া বেতন, স্টাফদের সম্মানী, অফিস স্টেশনারী, বিবিধ, উন্নয়ন, আসবাবপত্র, ভর্তি ফি, আপ্যায়ন, মেরামত, যাতায়াত, বিদ্যুৎ বিল, বিজ্ঞাপন ব্যানার, অনার বোর্ড ও নেট বিল খরচ বাবদ মোট ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৮৮ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। বাকি ৪,০৮,৬১৬/- টাকার কোনো হিসাব পাওয়া যায় নি এবং মো. কামরুল আহসান চৌধুরীও উল্লেখিত টাকার বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেন নি। তিনি ৬৮,৭৫,৫৮৮/- টাকা কলেজের স্টাফদের মাঝে কীভাবে বণ্টন করেছেন এবং কলেজের উন্নয়ন কাজে কীভাবে খরচ করেছেন ও কলেজের আয়-ব্যয় ইত্যাদি বিষয়ে কলেজের নিয়মকানুন অনুযায়ী রেজিস্টারপত্র রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট তথ্য প্রমাণ দিতে পারেননি। কলেজের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত কাগজপত্র উপস্থাপন করতে বললে তিনি দায়সারাভাবে কিছু কাগজপত্র উপস্থাপন করেন। উল্লেখিত টাকার বিষয়ে কলেজ কমিটির সভাপতিসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, কলেজের বিভিন্ন কাজে এবং স্টাফদের মাসিক সম্মানি ও ভাতাদি প্রদানের পূর্বে মিটিং করে রেজুলেশনের মাধ্যমে কমিটির স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলন করার নিয়ম থাকলেও মো. কামরুল আহছান চৌধুরী কমিটির নামমাত্র ২/১ জনের স্বাক্ষর নিয়ে রেজুলেশন পাস করে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উল্লেখিত টাকাগুলো উত্তোলন করেন। কলেজ কমিটি টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিবাদী যথাযথ হিসাব দিতে পারেন নি। মামলাটির তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে এবং উভয়পক্ষের উপস্থাপিত কাগজপত্র পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, বিবাদী মো. কামরুল আহছান চৌধুরী (৫১)-এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৮/৪২০/৫০৬(২) ধারার অপরাধের সত্যতা পাওয় যায়। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তকালে গৃহীত সাক্ষ্য প্রমাণে, দালিলিক সাক্ষ্য পর্যালোচনায়, প্রাপ্ত উপাত্ত এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিচার বিশ্লেষণে বাদীর আনীত অভিযোগের ব্যাপারে নিম্নোক্ত মতামত প্রদান করেন :
মামলার বিবাদী মো. কামরুল আহছান চৌধুরী (৫১)-এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ৪০৮/৪২০/৫০৬ (২) ধারার অপরাধের সত্যতা পাওয়া যায়। এতে
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. কামরুল আহছান চৌধুরীকে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে দায়িত্বে বুঝিয়ে দিতে নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে গত ০১/০৩/২১ খ্রি. সকাল অনুমান ১০ টা হতে ১৫/০৭/২২ খ্রি. বিকেল ৪টা পর্যন্ত
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাবস্থায় নিজ স্বার্থ হাসিল করার উদ্দেশ্যে কলেজের শিক্ষক কর্মচারী পি.এফ. ফান্ডের ৩,১৫,০০০/-টাকা জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেন এবং সভাপতিকে না জানিয়ে ও স্বাক্ষর না নিয়ে চিতোষী ডিগ্রি কলেজের ক্যাশ বহি, চেক রেজিস্টার বিতরণ বহি, ভাউচার ইত্যাদি সংরক্ষণ না করে ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে ২৯,১৭,২৮৯/-টাকা সহ কলেজের শিক্ষার্থীদের বেতন, ভর্তি ফি মিলে সর্বমোট ৭০,৭০,১৪৩/-টাকা আত্মসাৎ করে নিয়ে যান। উক্ত খরচের কোনো হিসাব নিকাশ কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নিকট প্রদান করে নি। বাদী ১৭/১২/২২খ্রি. তারিখ উক্ত কলেজের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে যোগদান করার পর বাদীকে কলেজের হিসাব নিকাশ বুঝে নেওয়ার সময় বিবাদী কলেজের ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎসহ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। কলেজের ভবিষ্যতের কথা ও শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে ২৫/০১/২৩ খ্রি. তারিখ অফিসে বিবাদীকে একাধিকবার হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে চিঠি প্রদান করা হলেও বিবাদী প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাদীর চিঠি গ্রহণ না করে অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার বিঘ্ন ঘটানোসহ বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েন। উক্ত বিবাদী কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের বেতনসহ কলেজের বিভিন্ন পাওনা নিজে স্বয়ং রসিদ ছাড়া সংগ্রহ করে আসছেন এবং কলেজের কেরানীর নিকট থেকে টাকা গ্রহণ করে কোনো বিল ভাউচার দেন না।
০১/০৩/২১খ্রি. হতে ১৫/০৭/২২খ্রি. তারিখ পর্যন্ত বিভিন্ন মালামাল জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিয়ে যান। এ বিষয় নিয়ে বাদী (অধ্যক্ষ) বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, চাঁদপুরে দরখাস্ত নাম্বার ১৩৩২/২০২৩ ধারা-ফৌ. কা. বি. ৯৮ দায়ের করেন। এতে বিবাদী বিগত ২৪/০৫/২৩ খ্রি. তারিখে বাদীকে অতর্কিত মারধর করে এবং জীবননাশের হুমকি প্রদান করে। এ বিষয়ে বাদীর শাহরাস্তি থানায় ননএফআইআর নং-৭৭১, তারিখ-১৭/০৬/২৩খ্রিঃ, যা বর্তমানে ননজিআর-৯৯/২৩, যারা-৩২৩/৫০৬ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালতে চলমান আছে। বিগত ৩০/০৯/২০২৩ খ্রি. তারিখে ১নং সাক্ষী (কামরুজ্জামান)কে তার মেয়ের সামনে হামলাসহ অতর্কিতভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। বিগত ৩০/০৯/২৩ খ্রি. তারিখ ১নং সাক্ষী বিবাদীর বিরুদ্ধে শাহরাস্তি থানায় সাধারণ ডায়েরি নং-১৫১৭/২৪ লিপিবন্ধ করেন, যা ১নং সাক্ষী ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাউদকান্দি থানার গৌরিপুর এলাকায় বিবাদী স্বয়ং ও তার ভাড়া করা সন্ত্রাসী দিয়ে বেআইনীভাবে অতর্কিত হামলা করে চিতোষী কলেজের সভাপতির গাড়ি ভাংচুর এবং ত্রাসের রাজত্ব ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। এ বিষয়ে দাউদকান্দি থানায় ০৪/১০/২৩ খ্রি. তারিখ ২৫৭০/২৩ জিডি করা হয়। পরে বাদী (অধ্যক্ষ) বিজ্ঞ আদালতে অত্র মামলা দায়ের করেন।
অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের বিষয়সমূহ ছিলো : বিবাদী কলেজের টাকা আত্মসাৎ করেছে কিনা, বিবাদী বাদীকে হুমকি প্রদান করেছে কিনা। বিজ্ঞ আদালত সিআর মামলা নং-১০৩/২৪ (শাহরাস্তি), তারিখ-১৬/০৪/২৪খ্রিঃ, ধারা-৪০৮/৪০৯/৩৮০/৪২০/৫০৬(২) /১০৯ পেনাল কোড বিজ্ঞ আদালত হতে জেলা গোয়েন্দা শাখা, চাঁদপুর কর্তৃক তদন্তপূর্বক প্রতিবেদনের নির্দেশ দেন। নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে অফিসার ইনচার্জ, জেলা গোয়েন্দা শাখা, চাঁদপুর মামলার তদন্তভার গ্রহণ করেন। প্রকাশ্য ও গোপন তথ্যের আলোকে বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক নিম্নোক্ত প্রতিবেদন প্রদান করেন। ওসি তদন্তকালে ঘটনাস্থলের আশপাশের নিরপেক্ষ সাক্ষীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের জবানবন্দি সিআরপিসি ১৬১ ধারা মোতাবেক লিপিবদ্ধ করেন এবং সাক্ষীদের মুচলেকা সিআরপিসি ১৭০(২) ধারা মোতাবেক গ্রহণ করেন। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ঘটনার বিষয়ে তিনি ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনকে প্রকাশ্যে ও গোপনে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।
এ ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তাদের মতে, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত না করলে কলেজের একাডেমিক পরিবেশ আরও নষ্ট হবে এবং শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এছাড়াও গত ৪/১২/২০২৪ তারিখে শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুল আহসান চৌধুরীকে তথ্য জালিয়াতির জন্যে পত্র দেন। ২৪/০৭/২০২৫ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরাস্তি ও কলেজের সভাপতি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুল আহসানকে কলেজের কাগজপত্র (এমপিওভুক্ত শিক্ষক) অধ্যক্ষ আনোয়ার হোসেন ভূঞার নিকট বুঝিয়ে দেয়ার জন্যে পত্র দেন। ০৫/০৮/২০২৫ তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহরাস্তি ও কলেজের সভাপতি ভাইস চ্যান্সেলর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ করেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামরুল আহসানের জালিয়াতির নানা অপরাধের জন্যে পত্র দিতে।
গত ১৬/১০/২০২৫ কামরুল আহসানের যোগসাজশে কলেজ পরিদর্শক কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতি ও শাহরাস্তি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পরিবর্তে তদস্থলে মোহাম্মদ মনসুর উল আজিমকে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন। এ বিষয়ে জানতে কলেজ পরিদর্শককে ফোন করলে তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গভর্নিং বডি গঠন সংক্রান্ত অধিভুক্ত কলেজসমূহের গভর্নিং বডি (সংশোধিত) সংবিধি ৭নং ধারার ক্ষমতাবলে অত্র কলেজে গভর্নিং বডির সভাপতি পরিবর্তন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক’জন শিক্ষক জানান, উপাধ্যক্ষ সম্পূর্ণ পেশীশক্তি ও ক্ষমতার জোরে, বেআইনিভাবে কলেজে শৃঙ্খলাবিরোধী কাজ করছেন। তার নানা রকম অনিয়ম ঢাকতেই তিনি এসব পন্থা অবলম্বন করছেন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী কারিগরি শাখা থেকে জেনারেল শাখায় যেতে পারে না। তিনি ক্ষমতার জোরে কারিগরি শাখা থেকে জেনারেল শাখায় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন।








