বৃহস্পতিবার, ০১ মে, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০১ মে ২০২৫, ১৬:১২

'যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে চীন'

কাশ্মীর উত্তপ্ত: চীন পাশে থাকার বার্তা দিল পাকিস্তানকে, যুদ্ধ নয় সংলাপেই সমাধান চায় বেইজিং

বিশেষ প্রতিবেদন : মো. জাকির হোসেন
'যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে চীন'
ছবি : সংগৃহীত

চীনের কৌশলগত বার্তা: ‘পাকিস্তানের পাশে আছি, কিন্তু চাই শান্তি’

কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। সীমান্তে টানা সাতদিন ধরে গোলাগুলির ঘটনা, কূটনৈতিক বিবৃতি, নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগে কার্যত যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। এমন এক জটিল পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছে তাদের চিরবন্ধু চীন।

চীনের লাহোর কনসাল জেনারেল ঝাও শিরেন বৃহস্পতিবার (১ মে) পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) কেন্দ্রীয় পাঞ্জাব শাখার নেতাদের সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বলেন, “যেকোনো পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের পাশে থাকবে বেইজিং। তবে যুদ্ধ নয়, সংলাপই শান্তির পথ।”

উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে কী হলো?

বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় পিপিপির কেন্দ্রীয় পাঞ্জাব শাখার অর্থ সম্পাদক আহমাদ জাওয়াদ রানার লাহোরস্থ বাসভবনে। প্রায় আড়াই ঘণ্টাব্যাপী এই আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা, কূটনীতিক এবং চীনা প্রতিনিধিরা। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং দ্বিপাক্ষিক কৌশলগত সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

ঝাও স্পষ্টভাবে বলেন, “পাকিস্তান শুধু প্রতিবেশী বা রাজনৈতিক মিত্র নয়, বরং চীনের কাছে এক পরীক্ষিত বন্ধু। পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আস্থা এবং সমন্বিত কৌশলগত উদ্যোগই আমাদের সম্পর্কের ভিত্তি গড়ে তুলেছে।”

“যুদ্ধ কখনোই সমাধান নয়। ভারত ও পাকিস্তানের উচিত সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা।”

— ঝাও শিরেন, কনসাল জেনারেল, চীন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পেছনে কী আছে?

ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনীর কনভয়ের ওপর সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ৭ জন সেনা সদস্য নিহত হন। ভারত এ হামলার পেছনে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি সংগঠনের হাত রয়েছে বলে দাবি করে, যদিও ইসলামাবাদ তা অস্বীকার করেছে। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রণরেখা (LoC) বরাবর টানা সাতদিন গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। ভারত পাকিস্তানের বিভিন্ন পণ্য আমদানি বন্ধ করে, কূটনৈতিক স্তরে প্রতিবাদ জানায়।

অন্যদিকে পাকিস্তানও পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। নিষিদ্ধ করে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার, কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করে এবং কূটনৈতিক বার্তা পাঠায় জাতিসংঘ ও ওআইসি’র (OIC) কাছে।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে চীন কেবল শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বানই জানায়নি, বরং তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র পাকিস্তানকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছে—যা কৌশলগত দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা।

চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক: কৌশলগত মেরুকরণের গভীর বন্ধন

চীনা কনসাল ঝাও শিরেন বলেন, “চীন-পাকিস্তান সম্পর্ক শুধু রাজনীতি বা অর্থনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটা এক হৃদয়ের সম্পর্ক। চীনের প্রতিটি নাগরিক পাকিস্তানকে ভালোবাসে এবং পাকিস্তানিরাও চীনকে সম্মান করে।”

তিনি আরও জানান, “সিপিইসি (CPEC) প্রকল্পের মাধ্যমে দু’দেশের কৌশলগত, অবকাঠামোগত এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয়েছে। এ ধরনের প্রকল্প শুধু পাকিস্তানের নয়, পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে।”

বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে কী বার্তা দিচ্ছে চীন?

বিশ্লেষকদের মতে, এমন সময় চীনের পক্ষ থেকে এমন বার্তা আসা কেবল বন্ধুত্বপূর্ণ সমর্থন নয়, বরং ভারতের প্রতি একটি কৌশলগত ইঙ্গিত। দক্ষিণ চীন সাগর, হিমালয়ের সীমান্ত এবং কাশ্মীর নিয়ে চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। ফলে পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়ে চীন নিজের আঞ্চলিক প্রভাব ধরে রাখার কৌশল নিচ্ছে।

পিপিপির অবস্থান: কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে

বৈঠকে পিপিপি নেতারাও জানান, “আমরা বিশ্বাস করি, শান্তি ছাড়া উন্নয়ন সম্ভব নয়। পাকিস্তান সবসময় চায়, প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ বজায় রেখে বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ গড়ে উঠুক। চীনের এই সমর্থন ও পরামর্শ আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে

আঞ্চলিক রাজনীতি বিশ্লেষক ড. ফজলুল করিম বলেন, “চীনের এই সময়োপযোগী অবস্থান দুই কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এক, এটা পাকিস্তানকে মানসিক ও কৌশলগত সান্ত্বনা দিচ্ছে। দুই, ভারতের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও বলেন, “এই পরিস্থিতিতে ভারতের উচিত হবে উত্তেজনা না বাড়িয়ে সংলাপের পথে অগ্রসর হওয়া।”

কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এশিয়ার দুই শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আবারো দানা বাঁধছে সংঘাত। এমন সংকটকালে চীনের স্পষ্ট বার্তা—'পাকিস্তানের পাশে আছি, কিন্তু শান্তি চাই'—এই অঞ্চলের নিরাপত্তা কাঠামোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। যুদ্ধ নয়, কূটনৈতিক সংলাপই হতে পারে এই সমস্যার একমাত্র স্থায়ী সমাধান।

ডিসিকে/ এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়