শনিবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:২৭

বর্তমান বিশ্বে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রভাব

মো. জাহিদুল ইসলাম
বর্তমান বিশ্বে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রভাব

কোয়ান্টাম কম্পিউটিং প্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। এটি বিজ্ঞান, চিকিৎসা, অর্থনীতি এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক বিস্ময়কর বিপ্লব ঘটাতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটিং হলো গণনার জগতে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন। এটি এক নতুন ধরনের কম্পিউটিং পদ্ধতি যা প্রচলিত কম্পিউটারের তুলনায় অতি দ্রুত এবং শক্তিশালী। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মূল ভিত্তি হলো কোয়ান্টাম মেকানিক্স, যা পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা। পৃথিবীতে যত কম্পিউটার আছে তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পিউটার হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সাধারণ কম্পিউটারের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের। যে সমস্ত সমস্যার সমাধান এখনও করা যায়নি সেসব সমস্যা সমাধান করবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। সাধারণ কম্পিউটারের তুলনায় এর ডাটা প্রসেসিংয়ের ক্ষমতা কয়েক হাজার গুণ বেশি। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এলগরিদম, কাঠামো সবকিছুই সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কোয়ান্টাম কম্পিউটারে তিনটি বৈশিষ্ট্য থাকতেই হবে। এগুলোর মধ্যে প্রথমটি হলো অনেক দ্রুত যে কোনো তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারা।

দ্বিতীয়টি হচ্ছে যে কোনো সমস্যাকে চিহ্নিত করে সমাধান করা। তৃতীয়টি হলো, কোনোভাবেই এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কার্যক্রম হ্যাক করা সম্ভব হবে না। সাধারণত স্যাটেলাইটের পাঠানো যে তথ্য বিশ্লেষণ করতে এখনও ছয় মাস লাগে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেটাই করে ফেলবে ছয় সেকেন্ডের কম সময়ে। রোবটের প্রোগ্রামিং করতে সময় নেবে ২৫ সেকেন্ডেরও কম। রকেট পাঠানোর আগে তথ্য বিশ্লেষণ করে বলে দেবে, মহাকাশের পথে কী বিপদ আসতে পারে এবং কীভাবে তা এড়ানো যাবে। এই প্রযুক্তির সাহায্যে এমন যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব যা হ্যাক করতে তিন লক্ষ বছর সময় লেগে যাবে। চিকিৎসা, অনলাইন জালিয়াতি, পরিচয়পত্র জাল হওয়ার মতো সমস্যাতেও স্থায়ী সমাধান বের করতে পারবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার। আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

তবে তার চেহারা বা ক্ষমতা কেমন হবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। কোয়ান্টাম কম্পিউটার হলো এমন এক বিশেষ ধরনের কম্পিউটিং ডিভাইস যা প্রচলিত কম্পিউটারের মতো শুধু বিট (০ বা ১) ব্যবহার না করে কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের নীতি (যেমন সুপারপজিশন ও এনট্যাঙ্গলমেন্ট) ব্যবহার করে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ করে। এটি কোয়ান্টাম বিট (কিউবিট) ব্যবহার করে, যা প্রচলিত বিটের চেয়ে অনেক বেশি জটিল তথ্য ধারণ করতে পারে। ফলে এটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা সমাধানে প্রচলিত কম্পিউটারের চেয়ে বহুগুণ বেশি শক্তিশালী এবং দ্রুত। যে সমস্যা সমাধান করতে আগে একশ' বছর লাগতো, সেটা এখন মূহূর্তের মধ্যেই করা যাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে। আগে একটা পাসওয়ার্ড ভাংতে সাধারণ কম্পিউটারের হয়তো ১০ বছর লাগতো। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের লাগবে কয়েক সেকেন্ড।

পৃথিবীর বাইরে প্রাণের খোঁজ, অন্য গ্রহে বসবাসযোগ্যতা নিরূপণ, কৃষ্ণগহ্বরের রহস্য উদঘাটন করা কিংবা সুপারনোভার শক্তিমত্তা পরিমাপে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটাবে। এর ফলে ভবিষ্যতে অনেক অজানা কিছু মানুষ জানতে সক্ষম হবে। এদিকে আলোর নিচে অন্ধকারের মতো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিকও রয়েছে। আর এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আগামী বিশ্বে গোপনীয়তা রক্ষা করা। যেহেতু কোয়ান্টাম কম্পিউটার বহুমাত্রিক উপায়ে সব ধরনের কোডকে ডিকোড করতে সক্ষম, তাই এটি যে কোনো গোপনীয় কোড ডিকোড করে তথ্য ফাঁস করে দিতে পারবে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে এবং এর বাণিজ্যিক ব্যবহার এখনো শুরু হয়নি। বিজ্ঞানীরা এর নির্মাণ নিয়ে কাজ করছেন এবং ভবিষ্যতে এটি প্রযুক্তি দুনিয়াকে বদলে দিতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে IBM, Google, Microsoft, Intel এবং অন্যান্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কোয়ান্টাম কম্পিউটিং নিয়ে গবেষণা করছে। কোয়ান্টাম কম্পিউটার তৈরি এবং পরিচালনা করা খুবই জটিল এবং ব্যয়বহুল। কিউবিটের সুপারপজিশন এবং এনট্যাঙ্গলমেন্ট অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে রাখা কঠিন। এছাড়াও কিউবিটগুলোর ত্রুটিহীন কাজ নিশ্চিত করাও একটি বড়ো চ্যালেঞ্জ। এগুলো অতিক্রম করতে পারলে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং-এর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল এবং সম্ভাবনাময়। আগামী কয়েক দশকে এটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে। ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম কম্পিউটিং আরও উন্নত হবে এবং এটি বিভিন্ন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এটি নতুন নতুন উদ্ভাবনের দরজা খুলে দেবে এবং আমাদের জীবনযাত্রাকে আমূল বদলে দেবে। তবে এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে নৈতিক এবং সামাজিক দিকগুলোও বিবেচনা করা প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়