প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৪:০৯
মাইগ্রেন দূর করার ঘরোয়া উপায়

মাইগ্রেন মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের এক বিশেষ ধরনের রোগ, যার প্রধান উপসর্গ তীব্র ও বারবার মাথাব্যথা। একবার ব্যথা শুরু হলে তা ৪-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে এবং সময়-সময় ফিরে আসে। মাথাব্যথার পাশাপাশি মাইগ্রেন হলে দেখা দিতে পারে বমি ভাব, বমি, আলো ও শব্দে অতিসংবেদনশীলতা। কিছু ঘরোয়া উপায় মেনে চললে এই ব্যথা উপশম হতে পারে। পাশাপাশি প্রতিরোধ করাও সম্ভব। মাইগ্রেন থেকে উপশম পাওয়ার কিছু ঘরোয়া উপায় জেনে রাখুন।
প্রচুর পানি খান
মাইগ্রেনের অন্যতম কারণ শরীরে পানির ঘাটতি, অর্থাৎ পানিশূন্যতা। এতে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়, মাথায় চাপ বাড়ে এবং ব্যথা শুরু হয়। মাইগ্রেনের সময় অনেকের ঘাম বা বমি হয়, ফলে শরীর আরও বেশি পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে ব্যথা উপশম হয় এবং নতুন করে মাইগ্রেন প্রতিরোধ করাও সম্ভব।
ঠাণ্ডা সেঁক দিন (কোল্ড কমপ্রেস)
মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে কপাল, মাথার তালু বা গলায় বরফের প্যাক ব্যবহার করুন। এতে ব্যথায় কমে ও আরাম মেলে। আপনি চাইলে বরফ দেওয়া জেল প্যাক বা ঠাণ্ডা পানিতে ভেজানো একটি কাপড়ও ব্যবহার করতে পারেন।
পুদিনা তেল বা পেপারমিন্ট অয়েল
পেপারমিন্ট অয়েল বা পুদিনার তেল বহুল ব্যবহৃত এসেনশিয়াল অয়েলগুলোর একটি, যা মাথাব্যথা ও মাইগ্রেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এতে থাকে মেনথল, যা পেশি শিথিল করতে এবং ব্যথা উপশমে সাহায্য করে। পাতলা করে নেওয়া পেপারমিন্ট অয়েল ত্বকে লাগালে টেনশন হেডেক ও মাইগ্রেনÑদুই ধরনের ব্যথা থেকেই আরাম পাওয়া যায়। পেপারমিন্ট অয়েলকে নারকেল তেলের মতো অন্য তেলের সঙ্গে মিশিয়ে কপালের দুই পাশে লাগান। এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে ত্বক স্পর্শকাতর হলে আগে পরীক্ষা করে নেওয়া ভালো।
অন্ধকার ও শান্ত ঘরে বিশ্রাম নিন
মাইগ্রেনের সময় তীব্র আলো ও উচ্চ শব্দ মাথাব্যথা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ব্যথা শুরু হলে একা ও শান্ত কোনো ঘরে চলে যান। ঘরের জানালার পর্দা টেনে দিন, আলো কমিয়ে দিন। নিরিবিলি পরিবেশে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকলে মাথাব্যথা অনেকটা কমে যেতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে
পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবেনিয়মিত ভালো ঘুম মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে। কম বা অতিরিক্ত ঘুমÑদুটোই মাথাব্যথা বাড়াতে পারে এবং ব্যথা সহ্য করার শক্তি কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আদা চা খান
আদা মাথাব্যথা, বমি ভাব ও গা গোলানো কমাতে সাহায্য করে। মাইগ্রেনের সময় এসব উপসর্গ প্রায়ই দেখা যায়। এক কাপ গরম পানিতে কয়েক টুকরা আদা দিয়ে চা বানিয়ে দিনে ১-২ বার খান। আদা-চা স্নায়ু শান্ত করে, রক্তসঞ্চালন ভালো করে এবং দ্রুত আরাম দিতে পারে।
ভিটামিন বি২ (রিবোফ্ল্যাভিন) খান
ভিটামিন বি২-কে রিবোফ্ল্যাভিনও বলা হয়। এটা পাওয়া যায় দুধ, চিজ, মাছ আর মুরগির মাংসে। চাইলে সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও খাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এটা মাইগ্রেনের ব্যথা কমাতে বা রোধে সাহায্য করতে পারে।
যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন করুন
যোগব্যায়াম ও শ্বাসপ্রশ্বাসের অনুশীলন মানসিক চাপ কমায় এবং শরীরকে শান্ত করে। এতে পেশির টান কমে যায়, যা মাইগ্রেন কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত যোগব্যায়াম করলে মাথাব্যথার ঝুঁকিও কমে। তাই প্রতিদিন কয়েক মিনিট যোগব্যায়াম করলে উপকার পাবেন।
অ্যালকোহল বর্জন করুন
অনেকের অ্যালকোহল খেলে বা কিছু খাবার খেলে মাইগ্রেন বেড়ে যায়। যেমন চকলেট, অতিরিক্ত চিজ বা ক্যাফেইন। তাই এসব খাবার বর্জন করা ভালো। এতে মাইগ্রেন কম হতে পারে।
ম্যাগনেশিয়ামযুক্ত খাবার খান
ম্যাগনেশিয়াম একধরনের খনিজ, যা পাওয়া যায় গাঢ় সবুজ শাকসবজি, গোটা শস্য আর বাদামে। এটা মাইগ্রেন হলে তেমন কাজ করে না, কিন্তু কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটা মাইগ্রেনের ব্যথা হওয়ার আগেই তা রোধ করতে সাহায্য করতে পারে। সাপ্লিমেন্ট হিসেবেও খাওয়া যায়, তবে খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আকুপ্রেশার নিতে পারেন
আকুপ্রেশার প্রাচীন চীনা পদ্ধতি, যেখানে শরীরের নির্দিষ্ট পয়েন্টে চাপ দিয়ে ব্যথা কমানো হয়। মাইগ্রেন উপশমে এল আই-ফোর পয়েন্ট কার্যকর, যা বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর মাঝখানে থাকে। এই জায়গায় ২-৩ মিনিট আঙুল দিয়ে চাপ দিন বা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যাসাজ করুন। এতে মাথার রক্তচাপ কিছুটা স্বাভাবিক হয় এবং ব্যথা হালকা হতে পারে। প্রতিদিন কয়েকবার করলেও কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
মনে রাখবেন ঘরোয়া উপায় শুধু সাময়িক স্বস্তি দিতে পারে। মাইগ্রেন যদি নিয়মিত হয় বা তীব্র হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।