প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৫, ০১:২৯
রোগীর চাপে বেসামাল চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতাল!
২৫০ শয্যার হাসপাতালে রোগী পাঁচ শতাধিক || বারান্দা-ফ্লোরেও চলছে চিকিৎসা সেবা || হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২৫০ শয্যার চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। হাসপাতালটি আড়াই শ' শয্যার হলেও এখন প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে গড়ে পাঁচ শ'।
|আরো খবর
রোগীর চাপে হাসপাতালের অবস্থা বেসামাল। ডায়রিয়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও বিভিন্ন পানিবাহিত রোগসহ মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে।
ফলে ওয়ার্ডের শয্যা ফুরিয়ে বারান্দা, করিডোর ও ফ্লোরেই চলছে চিকিৎসা সেবা। অবস্থা এমন যে, হাঁটার জায়গা নেই! হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও পড়েছেন বাড়তি চাপের মুখে।
এই বিপুল সংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
২০ জুলাই ২০২৫ (রোববার) দুপুরে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীর চাপে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কোথাও ঠাঁই নেই।
পুরুষ ওয়ার্ড, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের সবক'টি বিছানা পরিপূর্ণ হয়ে ফ্লোরেও রোগীদের জন্যে বিছানা পাতা হয়েছে। তাতেও সামাল দিতে না পেরে বারান্দা ও করিডোরে বাড়তি সিট বসানো হয়েছে।
চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, এসব রোগী জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, খিঁচুনি এবং নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসার জন্যে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়াও অনেক বৃদ্ধ ও শিশু রোগীকে অভিভাবকরা হাসপাতালে নিয়ে এসে ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করে চলে যান।
তিনদিনের তথ্য অনুযায়ী, হাসপাতালের পুরুষ, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডে গড়ে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন। এই সংখ্যা হাসপাতালের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে স্বাস্থ্যসেবায় তৈরি হয়েছে অচলাবস্থার মতো পরিস্থিতি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়,
- ১৮ জুলাই পুরুষ ওয়ার্ডে ভর্তি ছিল ১১১ জন, নতুন ২৫ জন।
- ১৯ জুলাই: ১২৩ জন, নতুন ৪৮ জন।
- ২০ জুলাই: ১২৩ জন, নতুন ২৪ জন।
- ১৮ জুলাই মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি: ১২৫ জন, নতুন ৪৫ জন।
- ১৯ জুলাই: ১৫১ জন, নতুন ৫৫ জন।
- ২০ জুলাই: ১৩০ জন, নতুন ২৬ জন।
- ১৮ জুলাই শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি: ৭৪ জন, নতুন ৩২ জন।
- ১৯ জুলাই: ১০১ জন, নতুন ৫১ জন।
- ২০ জুলাই: ১০২ জন, নতুন ২৯ জন।
এছাড়া গাইনী ওয়ার্ড, কেবিন ও পেইং ব্লক, শিশু ওয়ার্ডের স্কেনো ও কেএমসি ওয়ার্ডসহ পাঁচ শ'রও অধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্ষা মৌসুমে পানিবাহিত রোগ, ভাইরাসজনিত জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
রোগীর চাপে ওয়ার্ডের প্রতিটি শয্যা পূর্ণ হয়ে গেছে, ফলে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে বারান্দা ও ফ্লোরে বিছানা পেতে।
হাসপাতালে জনবল ও চিকিৎসক সংকটে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতিদিন হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও ধারণ ক্ষমতার তুলনায় দ্বিগুণ বেশি রোগী থাকায় চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে সবাইকে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে রোগীদের সেবা কার্যক্রম আরও ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা সকলকে রোগ প্রতিরোধে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ