সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

জীবন দর্শন

বিমল কান্তি দাশ
জীবন দর্শন

প্রায় ১০০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। এর মধ্যে কিছু প্রাণী খালি চোখে বীক্ষণিক আর কিছু প্রাণী অণুবীক্ষণিক। এই প্রাণী জগৎ দশটি পর্বে বিভক্ত ছিলো। প্রথমে অমেরুদণ্ডী ব্যাকটেরিয়ার এককোষী জাতীয় প্রাণীর সন্ধান মিলেছিলো। যাদের অণুবীক্ষণিক-এর মধ্যে সৃষ্টি তত্ত্বের নিগূঢ়ে রহস্য সুপ্ত অবস্থায় রয়েছে। ব্যাকটেরিয়ার অবর্তমানে সমগ্র পৃথিবী ভাগাড় হয়ে যেত। এরূপ নয়টি পর্বের মধ্যে পরস্পর বিবর্তন ঘটে, এরাই সংখ্যায় অনেক বেশি। শুধুমাত্র কর্ডেটা পর্বের প্রাণীরাই মেরুদণ্ডী। এর উপপর্ব হলো ভার্টিব্রাটা। এরা কিছু জলচর কতেক স্থলচর আবার কতেক উভচর এবং বায়ুচর। আধুনিক শারিরগত মানুষ হলো হোমোসেপিয়ান্স। এরা প্রাচীন বলিষ্ঠ পূর্ব পুরুষ হোমোইরেকটাশ গোত্রের নবরূপ প্রাপ্ত আধুনিক মানুষ। আফ্রিকাই আদিমানবের জন্মস্থান। তবে অধুনা অবলুপ্ত বৃহদাকার মেরুদণ্ডী প্রাণী ও পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের প্রাগৈতিহাসিক অধিবাসী বলতে বোঝায় ডাইনোসরকে। ধারণা করা হচ্ছে, ৬ কোটি বছর পূর্বে একটি বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডাইনোসরদেরকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে দেয়। আফ্রিকা থেকে প্রাচীন মানবসমাজ বিমিশ্রিত হয়ে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আজকের আধুনিক মানুষে পরিণত হয়েছে এবং সভ্যতার ধারক ও বাহক হিসেবে বিশ্বে ডিজিটালাইজেশন প্রবর্তন করেছে।

ডিজিটাল যুগ মানুষকে দিয়েছে অসংলগ্ন উপভোগের সুযোগ, কিন্তু বঞ্চিত করেছে সামান্যতম আত্মোপলব্ধি থেকেও। মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের প্রতীক হলো মানুষের শরীরগত প্রভেদ। যেমন মানব ধড়ের সাথে মাথার সংযুক্তি লম্বালম্বি সোজা উপরের দিকে। কিন্তু অন্যান্য মেরুদণ্ডী প্রাণীর ধড় এবং মাথার সংযুক্তি ভূমির সাথে সমান্তরাল। এ কারণেই মানব মস্তিষ্কে উদ্ভাবনী শক্তি সুপ্ত অবস্থায় বিরাজ করে, যা কঠোর গবেষণায় বিকশিত হয়ে জাগতিক সৃষ্টির কল্যাণে উদ্ভাবিত হয়ে যায়।

মানব জীবন দুটি চক্রের আবর্তে আবর্তিত হয়, একটি জীবনচক্র অপরটি কর্মচক্র। জীবন চক্র প্রাকৃতিক নিয়মে সূচনা থেকে ক্রান্তি লগ্ন পর্যন্ত চলমান থাকে। সচ্চিদানন্দে নিবিড় নিয়মানুবর্তিতায় মগ্ন থাকাই কর্ম চক্র। যে দর্শন মানুষের চিত্তে মনুষ্যত্ব বোধের জাগরণ ঘটায়ে মানবতা বোধের উন্মেষ ঘটায়, মানুষের সুখ-শান্তি-কল্যাণ ও সার্বিক উন্নতির জন্যে নিবেদিত থাকে তাহাই মানবতাবাদী দর্শন। বিশ্ব মানবতাবাদী জ্ঞানের শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সক্রেটিস-প্লেটো-এরিস্টটল-গৌতম বুদ্ধ-যীশুখ্রীস্ট-শ্রী চৈতন্য-হযরত মোহাম্মদণ্ডজালাল উদ্দিন রুমী ও ভারতীয় দার্শনিক শঙ্করাচার্য।

সক্রেটিস মনে-প্রাণে বিশ্বাস করতেন একটি বুদ্ধি সহজাত নৈতিক শক্তি, ব্যক্তির ভালো-মন্দ আচরণের জন্যে দায়ী। তাই তিনি জোর দিয়ে বলতেন Know thyself. বুদ্ধদর্শন হলো-- ‘আগে জানো, পরে মানো’ এবং ‘ত্যাগেই আনন্দ নিহিত থাকে’। অজ্ঞতা থেকেই সকল পাপের জন্ম ইত্যাদি। নবীজির বাণীগুলোর মধ্যে বিদায় হজে¦র বাণীগুলো শাশ্বত। যে জ্ঞানের সন্ধানে বের হয় সে আল্লাহর পথে বের হয়। যার দুটি দিন সমান গেলো, সে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। অসমান এবং কুধারণা থেকে বিরত থাকা ভালো এবং অত্যাচারিতের আর্তনাদ আল্লাহ সকাশে দ্রুত পৌঁছে যায়। প্লেটো জ্ঞানপিপাসু ছিলেন এবং জ্ঞান বিতরণের জন্যে অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠন করেছিলেন। গ্রিক ভাষায় এসব প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল ‘একাডেমাস’। আজকের ‘একাডেমী’ শব্দটি তারই প্রতিশব্দ। তিনি বিশ্বাস করতেন, সঙ্গীত মানবজীবনকে পূর্ণতা দেয় এবং বিকশিত করে ইত্যাদি।

ভারতীয় দার্শনিক শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। মানব জীবন দর্শনে তিনি যা পেয়েছেন তা হলো :

কাতব কান্তা, কস্তে পুত্র?

সংসারে হয় মতির বিচিত্র।

কস্য ত্বং বা কুত আয়াত?

তদ্বৎচিন্তায় তদিদং ভ্রাতঃ।

অর্থাৎ, কে তোমার স্ত্রী এবং কে তোমার পুত্র?

এ সংসারের ব্যাপার অতিশয় বিচিত্র।

তুমি কে, কোথা হতেই বা আসিয়াছ?

হে ভ্রাতঃ এই নিগূঢ় তত্ত্ব চিন্তা কর।

অর্থাৎ সকল দর্শনের মূল কথা ‘জ্ঞান হলো জীব গাড়ির ইঞ্জিন স্বরূপ’।

যাই হোক না কেন, যুগে যুগে প্রাকৃতিক মহাবিপর্যয়গুলো বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ‘বিগ-ব্যাং’গুলো কিছুটা মানবের কল্যাণের তরে আবার কিয়দংশ মানবের অকল্যাণের তরে ব্যবহৃত হয়ে সৃষ্ট ভারসাম্য রক্ষায় এক অদৃশ্য ভূমিকা স্রষ্টার সৃষ্টিকে টিকিয়ে রেখেছে।

এছাড়া ১২০৭ সালে জন্ম নেওয়া ইরানী কবি ও দার্শনিক মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি ছিলেন আধ্যাত্মিকতা অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফীবাদের শ্রেষ্ঠ ধারক ও বাহক। তাঁর শাশ্বত চিন্তাধারা আধুনিক ডিজিটালাইজেশন-এর প্রতি কটাক্ষ স্বরূপ।

লেখক : কবি, প্রবন্ধকার। সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়