সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   এসএসসি সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ

প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

পীযূষ কান্তি বড়ুয়া
খণ্ডে খণ্ডে অখণ্ড জীবন

(ত্রয়োদশ পর্ব)

যে জীবনে কখনো মাতৃভূমি বা স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ-বিভূঁয়ে যায়নি তার কাছে স্বদেশে ফিরে আসার মাহাত্ম্য বলে বুঝানো যাবে না। এ এক অপার্থিব ফিরে পাওয়ার আনন্দ। কোনো ভাষাই যথেষ্ট নয়, কোনো বর্ণনাই পরিমিত নয়। কোনো আনন্দই এ আনন্দের সমকক্ষ নয়। দেশে ফিরে আবারও মেহেদীবাগ গোলপাহাড়ের মোড়ে সেই ক্লিনিকটাতে আসা-যাওয়া শুরু করলাম। ডাঃ নাজিম ভাইয়ের সাথে আড্ডা মারি আর মাঝে-মধ্যে ওটি করি। এর মধ্যে মাথায় চিন্তা আসে, সকালে একবেলা কোনো এনজিওতে চাকরি করবো আর বিকেল থেকে কলেজের লাইব্রেরিতে টানা পড়বো যাতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে দাঁড়াতে পারি। একটা এনজিওর সাথে কথা পাকাপাকি হয়। বেতন তিরিশ হাজার টাকা। সীতাকুণ্ডে অফিস। রোগী দেখা আর ক্লিনিক ম্যানেজারগিরি করা। ভাবলাম, সিএনজি করে দৈনিক আসা-যাওয়া করলে যা থাকবে তা থেকে মায়ের হাতে কিছু নামকাওয়াস্তে দিয়েও আমার অনেকটুকু থাকবে। মায়ের হাতে নামকাওয়াস্তে কিছু দেওয়ার কথা বলছি কারণ বড় দুভাই মাকে মাসান্তে দেশের বাইরে থেকে যথেষ্ট পাঠায়। বাবা তখনও কিছু না কিছু মা'র হাতে দিচ্ছেন। কাজেই আমি নামকাওয়াস্তে কিছু দিয়ে মা-বাবার স্বস্তি উৎপাদন করতে পারলেই হলো। পরের সপ্তাহে সোমবার হতে আমার যোগ দেওয়ার কথা। আমি ধীরে ধীরে মানসিকভাবে গুছিয়ে নিচ্ছি। প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব শেষ করে ঘন্টা দুয়েক কোনো ফার্মেসিতে বসা যায় কি না তা যাচাই করে দেখলাম। যা ফলাফল এলো হাতে, তাতে মনে হলো সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত পড়া কোনো ব্যাপার না। অতএব আমার কর্মজীবনের ছক আমার আঁকা শেষ। কিন্তু বিধিবাম। ঐ যে বলে না-ম্যান প্রপোজেজ গড ডিসপোজেজ। আমারও হলো ঠিক তাই। সোমবারে যেখানে কাজে যোগ দেওয়ার কথা সেখানে আগের রাতে রবিবারে বলা হলো, তারা একজন ডাক্তার পেয়েছে পনের হাজার টাকা বেতনে। তাদের ওখানে আর যাওয়া লাগবে না। ল্যান্ড টেলিফোনে কথা বলতে বলতে তাদের উপর রোখ চেপে রাখা গেলো না। জিজ্ঞেস করলাম, বলদটা কে? বললো, ইউএসটিসি হতে পাস করা ডাক্তার। বুঝলাম, ধনী লোকের ননী গোপাল যার একটা কাজ জোটালেই হলো, যাতে বাবা-মা খুশি হয়। এরকম তিরিক্ষি মেজাজে দিনটা পার করলাম। তারপর পরিকল্পনা বাতিল করি।

দুয়েকদিন অস্থিরতায় কাটে। বুঝলাম, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যেখানে মেধা নয়, অর্থের বেসাতি চলে সেসব প্রতিষ্ঠান অনেকের জন্যে মাথাব্যথার কারণ। দুয়েকদিন পরে হঠাৎ সাগরের সাথে দেখা। সাগর আমার মেডিকেল কলেজে এক বছর পরে ভর্তি হওয়া সতীর্থ। ছত্রিশতম ব্যাচ। তার সাথে এভারগ্রিনে বসে কথা বলতে বলতেই সে আমাকে প্রস্তাব দিয়ে বসে চাঁদপুরে আসার। তারা কয়েকজনে মিলে মিডল্যা- হাসপাতাল চালু করেছে। আমি তার প্রস্তাবটা সানন্দে গ্রহণ করে নিলাম। কারণ আমার কখনও চাঁদপুরে আসা হয়নি। একেতো ঐ এনজিওর ওপর মেজাজ চটে আছে, দ্বিতীয়ত নতুন একটা জায়গায় আসার আহ্বান, দুটো মিলেই আমার অবস্থা হলো মিশ্র অনুভূতির। আমার সিদ্ধান্ত শুনে মা আমাকে ভয় লাগাতে শুরু করলো। ওখানে যাওয়ার দরকার কী? চর অঞ্চলের মানুষ। কথায় কথায় লাঠি-সোঁটা নিয়ে মারামারি করে। তোর যা মেজাজ তাতে কখন কোন্ অঘটন ঘটে যায়। আমার বড় ভাইও শুনে আমাকে ভয়ভীতি লাগালেন। কিন্তু আমার মনের মধ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে নূতন এক জেলা আবিষ্কারের নেশায় পেয়ে বসেছে। খোঁজ-খবর নিয়ে নিজেই মেঘনার টিকেট করে আনলাম। বিকেল পাঁচটায় ট্রেন। আমার বাসা হতে বটতলী পাথর ছোঁড়ার দূরত্বে। দুপুরে মায়ের হাতে রান্না করা ভাত খেয়ে প্রতীক্ষায় থাকলাম রওনা দেওয়ার। একসময় অভিবাসী পরিব্রাজকের মতো ব্যাগ নিয়ে চড়ে বসলাম মেঘনায়। ট্রেনে চড়ে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ গিয়েছি। কিন্তু ট্রেনে চড়ে চাঁদপুর যাওয়া যায় তা জানা ছিলো না। সেদিন ছিলো দুহাজার তিন সালের পনের মে। কে জানতো আমার সুবর্ণ সকালগুলো কেটে যাবে তিন নদীর মিলনস্থলের কাছে!

ট্রেনে যেটা ছিলো প্রথম শ্রেণি, ওটা আসলে নামেই। হেন কোনো ভিখারি কিংবা ফেরিওয়ালা বাকি ছিলো না ঐ বগিতে উঠার। বগিতে উঠার পরে অবাক হয়ে দেখলাম, কতো ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধী ভিক্ষুক হতে পারে! কারও দুটো হাত নেই, কব্জি হতে কাটা। কারও দুহাঁট ভাঙা। কারও নাকই নেই। কেউ আবার প্লবগ হয়ে চলে। বুকে হেঁটে হেঁটে। অন্ধ তো আছেই। আছে নুলো-ল্যাংলা। কারও আবার পেটে বিশাল টিউমার। কারও রানে দগদগে ক্ষত। এতোসব প্রতিবন্ধিতা! এগুলো সবই অর্থ উপার্জনের মোক্ষম হাতিয়ার। কেউ কেউ দল বেঁধে আসে। ঠাকুরমার ঝুলির কানা-কুঁজোর মতো। কণ্ঠে সুরেলা বোল। বিলাপগীতি গেয়ে অর্থোপার্জনের সহজ প্রয়াস। আরেকটা দল আছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়ে রসিদ বইসহ চাঁদা কাটতে আসে। এরা কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী নয়, তারপরও তাদের সাথে ঐ প্রতিবন্ধীদের তেমন কোনো পার্থক্য খুঁজে পাওয়া গেলো না। দুয়েকজনকে পাওয়া গেলো, ছোট চিরকুট আর দুটো করে লজেন্স ধরিয়ে দিচ্ছে। সবাইকে বিলানো হলে তারপর সেগুলো ফেরত নেওয়া হচ্ছে। তাতে ফরিয়াদ লেখা। ঐ চকলেটের বিনিময়ে দশটা করে টাকা দিলেই এরা খুশি। সবাই চিরকুট নেয় বটে কিন্তু সবাই টাকা দেয় না। চকলেট ফিরিয়ে দেয়। এরা যেতে না যেতেই আসে ভয়ঙ্কর সেই দলটি। দুহাতে তালি বাজিয়ে হিজড়ারা আসে। কুড়ি টাকার নিচে এদের কাছ থেকে ছাড় নেই, রেহাই নেই। মায়ের মুখে শোনা, এদের দেখে দিন শুরু হলে নাকি দিন ভালো যায়। রেঙ্গুনে মা যখন কিশোরী বধূ, একা একা সামলাচ্ছেন তাঁর চেয়ে ষোল বছরের ছোট তাঁরই প্রথম আত্মজাকে, তখন কুটোবাছা করে দিতে মাঝে মাঝে একজন হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ মায়ের কাছে আসতো। যেদিন উনি আসতেন সেদিন নাকি মায়ের দিন বেশ সৌভাগ্যে কাটতো। যদিও প্রথম দিন তিনি যখন হুট করেই ঘরে ঢুকে গেলেন, তখন মা খুব ভয় পেয়েছিলেন। ঐ তৃতীয় লিঙ্গের মানুষই মাকে অভয় দিয়ে মায়ের আস্থা অর্জন করেছিলেন। ফেনি স্টেশনে এসে পেলাম গরম গরম সিঙাড়ার রমরমা। খেতে মন চাইলেও অস্বাস্থ্যকর ভেবে আর মন সায় দেয়নি। লাকসামে রেলওয়ে জংশনের সাথে আগে থেকেই পরিচিত। আশির দশকে চট্টগ্রাম থেকে অনেক নিম্ন মধ্যবিত্তের মানুষ লাকসামে এসে কোনো এক বালক ফকিরের পানিপড়া নিয়ে যেতো। আসলে বাঙালি কখনো ভালোর জন্যে চীনে না গেলেও দুই নম্বরি চীনা মালামালের জন্যে হিমাদ্রি লঙ্ঘনেও হতোদ্যম হয় না। লাকসামে নেমে চা খেয়ে কিছুটা নিঃসঙ্গতা কাটানো হলো। তখন দশ টাকায় ছোট পাউরুটি দেখে মায়ায় আটকে গেলাম। খেতে মন না চাইলেও প্রেমে পড়ে নিয়ে নিলাম একটা হাতে নেড়েচেড়ে দেখবার জন্যে। এরমধ্যে সাগরের সাথে একবার ফোনে আলাপ হয়ে গেছে, আমি কদ্দুর তার হদিস জানতে। সূচনায় যাত্রাকালে যে উৎসাহ তৈরি হয়েছিলো মনে, নূতনকে জানার জন্যে, যতই নিকটবর্তী হচ্ছি গন্তব্যের ততই মনের শক্তিতে ঘুনের আনাগোনা টের পাচ্ছিলাম। ধৈর্যে অধীরতা এসে বাসা বাঁধতে শুরু করলো। দাপটের একটা জীবন চট্টগ্রামে ফেলে শুধু নূতনকে বরণ করতে চাঁদপুর আসা! কেউ আমাকে জানে না, আমিও কাউকে জানি না। যা জানে সাগর জানে। তা-ও শতভাগ নয়, সিকি ভাগ। তবে ঐ সিকিতে শতকের গাঢ়ত্ব ছিলো।

চলতে চলতে মনে হলো, আন্তঃনগর ট্রেন মেঘনা বুঝি অলিম্পিকে যাওয়া আমাদের বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের দৌড় প্রতিযোগী, যে ফিনিশিং লাইনে টাচ না করে নিজে পেছনে থেকে সবাইকে উৎসাহ দেয় এগিয়ে যেতে। মেঘনাকে দেখলাম, ঢাকা-চট্টগ্রামের লাইনে সবকটা ট্রেনকে পাস দিতে। নিজে তারপর ধীরেসুস্থে এগোয়। আহা! এমন যদি হতো সব মানুষ তাহলে প্রতিযোগিতা নয়, সৌহার্দ্যে আমাদের জীবন কেটে যেতো। ধীরে ধীরে স্টেশনের নামফলকগুলো পড়ার জন্যে উদ্গ্রীব হলাম। লাঙ্গলকোট, চিতোষী, মেহের ইত্যাদি। একসময় হাজীগঞ্জ-মৈশাদী পার হয়ে চলে এলাম চাঁদপুর কোর্ট স্টেশনে। সাগর এবং কিশোরদাকে পেলাম স্টেশনে। তারা আমাকে নিয়ে ঢুকলেন রুচি হোটেলে। আকবর সাহেবের রুচি হোটেল। পরে তিনি অবশ্য আমার রোগী হয়ে গিয়েছিলেন। এমনিতেই আমি বাসায় বারোটার পরে খেতে অভ্যস্ত। কিন্তু রেলযাত্রার কারণে পেটের রসদে টান পড়েছিলো আগেভাগে। তাই আর না করিনি। মনে পড়ে না, ইলিশের বাড়ি এসে ইলিশকে প্রথম দর্শনে কাছে টেনেছিলাম কি না। তবে শাকের তরকারি ছিলো উপাদেয়। আহার শেষে চলে যাই ডাকাতিয়ার সাথে প্রণয়ে মেতে ওঠা তাজমহল আবাসিকে। তখনও চাঁদপুরে আর কারও সাথে আমার পরিচয় ঘটেনি। নদীর সুঠাম হাওয়ায় আর ক্লান্তিতে একাকার হয়ে ঘুম আমাকে টেনে নিয়ে গেলো অচেতনতার দেশে।

পরদিন সকালে আমাকে দেখতে আসলেন মুজিব ভাই। মুজিবুর রহমান ফরহাদ। তখন তিনি ফরিদগঞ্জের মাননীয় সংসদ সদস্য আলমগীর হায়দার সাহেবের ব্যক্তিগত সহকারী (রাজনৈতিক)। খুব ফর্মে আছেন। তিনি সাগরের গ্রামের বড় ভাই এবং একই স্কুলের ছাত্র। পাশাপাশি মিডল্যান্ডের অধিকাংশই ফরিদগঞ্জের লোক। সাগরের মুখে শুনে শুনে মুজিব ভাই হয়তো আমাকে আপন ভেবে নিয়েছেন। ক্যাফে কর্নারে নাশতা খেয়ে আমি মিডল্যান্ডে আসলাম পরিচিত হতে। তখন মিডল্যান্ড হাসপাতাল ছিলো রহমতপুর কলোনীর ভূঁইয়াবাড়িতে। বাড়িটি তিনতলা। আমার থাকার ব্যবস্থা হলো তিনতলায়। দুই তলায় হলো ওটি আর লেবার রুম। নিচতলায় অফিস ও ইমার্জেন্সি। আমার রুমে তখনও ফ্যান লাগানো হয়নি। মাহমুদে এলাহী ব্যস্ত ছিলেন ফ্যানের ব্যবস্থা করতে। আমার রুম থেকে ডাকাতিয়াকে দেখা যায়। সাথে ডাব্লিউ রহমান জুট মিলের ঝাপসা অবয়ব। পঞ্চমীর বেঁকে যাওয়া চাঁদের মতো ডাকাতিয়ার সাথে অভিসার হবে ভেবে পুলকিত হলাম। ছোট রুমটা পছন্দ হলো। তবে লাগোয়া টয়লেট না থাকায় একটু মন খারাপ হলো। রোগীদের কমন টয়লেটে যেতে হলো না, নিচতলায় অফিসকক্ষের টয়লেটই আমার সমস্যা সমাধান করে দিলো।

মিডল্যান্ডে সকালের ডিউটি ছিলো সাগরের। আমি বিকেল তিনটা থেকে ঢুকে একেবারে পরদিন সকাল নয়টায় বের হতাম। আমার অবশ্য কোনো অসুবিধা হতো না। যারা ছিলো সবাই কাছাকাছি বয়স। আগে থেকেই বলা ছিলো, সকালে আমি যাতে চেম্বার করতে পারি। চানখাঁর দোকানের পল্লি চিকিৎসক লনী বাবুর সাথে বোরহানের কথা হয়েছিলো। বাবুরহাট মধ্যবাজারে লনীবাবুদের একটা প্যাথলজি সেন্টার আছে। বোরহান আমাকে সেখানে নিয়ে গেল সকালে। খবর পেয়ে বিমল বাবু আর নৃপেন্দ্র লাল আচার্য এলেন। তারাও এই প্রতিষ্ঠানের মালিক। কথাবার্তায় নৃপেন্দ্রবাবু একটু নিমরাজি হলেন। কারণ তিনিই বয়োজ্যেষ্ঠ এবং ঐ প্রতিষ্ঠানে তিনিই বেশি রোগীপত্র দেন। কাজেই তাকে না জানানোয় তিনি আমাকে মেনে নিতে চাইছিলেন না। তবুও না করেননি। ঠিক হলো, আমি কয়েকদিন পরে বসবো। সাইনবোর্ড আর প্রেসক্রিপশন প্যাড হতে যে কয়দিন লাগে।

মিডল্যান্ডে তখন সার্জন হিসেবে আসতেন ডাঃ একেএম শাহাদাত আর তার সাথে অ্যানেস্থেশিয়া দিতেন ডাঃ মাইনুল ইসলাম মজুমদার। মোবারক ভাইও আসতেন প্রায়শই। মেডিসিন রোগী দেখার কোনো নির্দিষ্ট ডাক্তার লাগতো না। কখনো সালেহ আহমদ, কখনো মকবুল ভাই আর কখনো নিজের পাঠানো রেগীর ক্ষেত্রে দেলোয়ার ভাই আসতেন। কখনো কখনো আসতেন মশিউর ভাই যিনি এমও সিএস হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। শিশুদের ডাক্তার হিসেবে আসতেন জমির সাহেব এবং মোশতাক আহমদ। গাইনি রোগী দেখতেন ফাতেমা নেওয়াজ আপা আর কবিতাদি। সকালে সাগর কিছু আউটডোর রোগী দেখতো। বিকেলে আমিও দুয়েকটা আউটডোর রোগী দেখতাম। রোগী দেখতে দেখতে একসময় রহমতপুর কলোনীতে আমার পরিচিতি হয়ে গেলো। আবার সকালে বাবুরহাটে রোগী দেখতে গিয়েও প্রসার শুরু হলো। নৃপেন্দ্র বাবুর কাছে রীতিমতো পরীক্ষা দিয়েই আমাকে পাস করতে হয়েছে। তিনি মঠখোলায় জাহানারা নামে একজন রোগী দেখালেন। রোগীটা চার হাতেপায়ে প্যারালাইসিসের মতো হয়ে গিয়েছিলো। কবিতা সাহাকে দেখানো হলে তিনি ঢাকা রেফার করে দেন। এই রোগী দেখানোর জন্যে নৃপেন্দ্র বাবু আমাকে নিয়ে গেলেন। আমি গিয়ে জানলাম, কবিতাদি তাকে দুর্বলতা কাটাতে টেন পার্সেন্ট গ্লুকোজ স্যালাইন দিয়ে ছিলেন দুটো। আবার গত কয়েকদিন ধরে ঐ রোগীর পাতলা পায়খানাও হয়েছে, যা কবিতাদিকে জানানো হয়নি। ব্যস্! আমি বুঝলাম, রোগীটা হাইপোক্যালেমিয়াজনিত কারণে কোয়াড্রুপ্যারেসিসে ভুগছে। দিলাম একটা হার্টসল এক হাজার সিসি রানিং এবং একটা ষাট ফোঁটায়। রোগী উঠে দাঁড়িয়ে টয়লেটে গেলো। আর আমি পাস করলাম নৃপেন্দ্র বাবুর পরীক্ষায়। তিনি সেই যে আমাকে বাঁধলেন, আর ছাড়েননি। তিনি আগে আগে ব্যাগ নিয়ে চলেছেন আর পেছনে আমি, এ দৃশ্য অতি সাধারণ ছিলো এক সময়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়