সোমবার, ০৫ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৫ মে ২০২৫, ০৮:৪৩

আগুনের নদী

মিজানুর রহমান রানা
আগুনের নদী

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

পনেরো.

ঢাকা। অনন্যাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ইরফান, মোনালিসা ও অধরা তার বেডে বসে আছে। কানাডা থেকে উড়ে এসেছে অনন্যার স্বামী হাসান বাবু। তারপর ইরফানের কাছে জানতে চাইলো অনন্যা কেমন আছে?

‘ভালো আছে। আপনি ওর পাশে থাকুন। আমি আসছি।’

অনন্যা ঘুমাচ্ছে। গভীর ঘুম। তার পাশে বসলো হাসান বাবু। তারপর তার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। এ সময় হঠাৎ করেই জেগে উঠলো অনন্যা। স্বামীকে দেখেই তার দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগলো।

হাসান বাবু সেই গড়িয়ে পড়া অশ্রু মুছে দিয়ে বললো, ‘অনন্যা কেমন আছো তুমি?’

‘আমাকে ক্ষমা করে দিও বাবু। আমি তোমার অগোচরে অনেক অন্যায় করেছি, পাপ করেছি।’

এবার হাসান বাবুর চোখেও অশ্রু ঝরলো। সে অনন্যাকে বিয়ের পরের জীবনটা শুধু ভালোই বেসেছে। কাছে তেমন একটা পায়নি। সে জানে, অনন্যা ভুল করে বিপদে পড়েই অন্যায় করেছে। ইচ্ছে করে তা করেনি। ডাক্তার বলেছিলো তার জরায়ুতে টিউমার, সার্জারি করলে সন্তান হবে না কোনোদিন। তাই সার্জারিও করা হয়নি একটা সন্তান লাভের আশায়। কিন্তু এই সুযোগেই আমিনুল তার ক্ষতি করেছে বছরের পর বছর। অনন্যাও আমিনুলের ট্র্যাপে পড়ে বহু কিছু করেছে, সে কোনোদিনও অনন্যাকে কিছুই বলেছি। দোষ চাপিয়ে দেয়নি। আজ আর আমিনুলও নেই, তার গডফাদার জামশেদও নেই। তাই সে অনন্যাকে নিতে এসেছে। পুলিশ বলেছে, অনন্যা সুস্থ হলে তাকে মামলা অনুসারে আদালতে তোলা হবে। তারপর তার শাস্তি হবে।

‘কী ভাবছো বাবু, আমার তো অনেক শাস্তি হয়েছে। আর ক’টা দিন না হয় জেলে বসে কাটাবো? তাতে আর কী হবে?’

অবাক হলো হাসান বাবু। তার মনের কথা অনন্যা জানলো কীভাবে? সে প্রশ্ন করলো, ‘তোমার শাস্তি হবে, একথা আমি তোমাকে বলেছি?’

‘না। তুমি মনে মনে তো তা-ই ভাবছো। তাই না?’

অবাক দৃষ্টিতে অনন্যার দিকে তাকিয়ে আছে হাসান বাবু। এটা কীভাবে সম্ভব? একজন মানুষের মনের কথা আরেকজন মানুষ জানে কীভাবে?’

‘আমার পক্ষে এটা বুঝা এখন সহজ, হাসান বাবু। আমি মানুষের মনের কথা বুঝতে পারি।’

‘মেয়েরা তো অনেক কিছুই পারে, তাই না?’

‘মেয়ে বলে নয়। এখন আমার সেই ক্ষমতা অর্জিত হয়েছে। আমি জানি আগামীকাল পুলিশ আসবে। তারপর আমাকে কোর্টে তুলবে। আমাদের অ্যাডভোকেট বলবে, মাননীয় জজ সাহেব। মেয়েটা আত্মরক্ষার্থে আমিনুলকে মেরেছে। কারণ এই আমিনুল এই মেয়েটাকে ট্র্যাপে ফেলে বহুবার নির্যাতন করেছে, সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে দিনের পর দিন তাকে ধর্ষণ করেছে। তাই মেয়েটা অতিষ্ঠ হয়ে কানাডা থেকে যে ছুরি এনেছে বাংলাদেশে এসে নিজকে খুন করবে বলে, কিন্তু এক পর্যায়ে আমিনুলের পশুত্বের কারণে নিজকে হত্যা না করে আমিনুলকেই হত্যা করে নিজকে বিপদমুক্ত করেছে। তারপরও তার রক্ষা হয়নি। জামশেদ নামে এক আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসী তাকে কানাডা থেকে তুলে নিয়ে মেক্সিকোতে তার মাথায় মাইক্রো চীপ বসিয়েছে। যাতে অনন্যাকে নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেখান থেকেই গোয়েন্দা পুলিশের এএসপি তাকে জামশেদের কবল থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এখন মেয়েটার মাথায় সেই চীপ লাগানো আছে। সরকারি ডাক্তারগণ বোর্ড মিটিং করে এই সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, মেয়েটার মস্তিস্ক থেকে ওই চীপ খুলে ফেলা হলে মেয়েটা আর বাঁচবে না। তাই ওটা কখনোই খোলা যাবে না ইয়োর অনার। যেহেতু মেয়েটা পুরুষদের নানারকম নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মরক্ষার্থে একটা বিকৃত মস্তিস্কসম্পন্ন মানুষকে খুন করেছে আমি তার সর্ব নিম্ন শাস্তি কামনা করছি।’

আরো অবাক হলো হাসান বাবু। তারপর প্রশ্ন করলো, ‘তুমি কি ভবিষ্যৎও বলে দিতে পারো?’

‘না, বেশি দূরের ভবিষ্যৎ বলতে পারি না। খুব কাছের ভবিষ্যৎ বলতে পারি। তবে এটা ভবিষ্যৎ বলা না। এটা হচ্ছে প্রযুক্তির একটি সুফল মাত্র। মানুষ ভবিষ্যৎ বলতে পারে না, তবে আবহওয়ার অগ্রিম তথ্যের মতো যন্ত্রের সাহায্যে কিছু বিষয় অনুধাবন করতে পারে মাত্র।’

‘তাহলে তারপর কী হবে বলতে পারো?’

‘তারপর আমার তিন বছরের শাস্তি হবে। এক বছর কাটানোর পর সরকার আমাকে বিশেষ বিবেচনায় বিজয় দিবসে মুক্তি দিবে। তখন আমার কোলে একটা শিশু থাকবে।’

হাসান বাবু কী বলবে বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ নীরব থেকে প্রশ্ন করলো, ‘তারপর কী হবে?’

‘আমি শিশুটাকে মেরে ফেলতে চাইবো, কিন্তু তুমি তা করতে দেবে না। তুমি তাকে তার বাবার দেশে পাঠিয়ে দিবে। আর আমি তোমার সাথেই জীবনটা কাটিয়ে দিবো।’

‘কেনো?’

‘কারণ তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো। পৃথিবীর কোনোকিছুই তোমার সেই ভালোবাসা নষ্ট করতে পারে না। ভালোবাসা হচ্ছে এক ধরনের আবেগ। মানুষ তার আবেগ পূরণের জন্য যে কোনো ক্ষতি মেনে নেয়।’

হাসান বাবু প্রাণখুলে হাসলো। অনন্যা বললো, ‘আমি কি সত্যি বলেছি?’

‘তুমি এখন ঘুমোও। তোমার ভীষণ ঘুমের প্রয়োজন। আগে সুস্থ হও। তারপর তোমাকে আমি একটা সারপ্রাইজ দেবো, যা কখনো তুমি কারো কাছ থেকে পাওনি।’

কথাগুলো শুনতে শুনতে সত্যিই অনন্যা ধীরে ধীরে ঘুমের দেশে তলিয়ে গেলো। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়