প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:২০
শিক্ষক নাই--শিশুরাও অন্য স্কুলে চলে গেছে
৫ কোটি টাকা ব্যয়ে স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হলেও পাঠদান বন্ধ দেড় বছর !

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৮টিসহ জেলায় ৩৪টি স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করা হয় প্রায় দু বছর আগে। ৭টি সরকারি বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হলেও প্রায় ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তর-পূর্ব দেবীপুরে নির্মাণাধীন বেসরকারি বিদ্যালয় ভবনটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না দেড় বছর ধরে। শিক্ষক নাই, প্রায় দুশ' শিক্ষার্থী চলে গেছে অন্য স্কুলে। গত ছয় বছর আগে সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণের জন্যে পুরাণ টিনের ঘর ভেঙ্গে নতুন ভবন নির্মাণ করছিলেন ঠিকাদার।
বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাল্টিপারপাস ডিজাস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি)-এর আওতায় রায়পুরে ৮টি এবং জেলায় ৩৪টি ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা নাভানা কনস্ট্রাকশন।
উল্লেখ্য, 'রায়পুরে ৮টিসহ জেলায় ৩৪ স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ, ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের পরস্পরকে দোষারোপ' এই শিরোনামে ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দৈনিক যুগান্তরে এক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) সরেজমিন দেখা যায়, রায়পুর ইউনিয়নের উত্তর-পূর্ব বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় কেন্দ্র। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভবন তৈরির কাজও শুরু হয়। ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা কোথায় বসে ক্লাস করবে, সেই চিন্তায় অস্থির ছিলো উত্তর দেবীপুরসহ রায়পুরে ৮টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। পরে গত বছর ৭টি সরকারি স্কুলের কাজ সমাপ্ত করে কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয় নাভানা।
স্কুলের দাতা সদস্য ও চা দোকানি আবদুল আখের (৪০) বলেন, আমাদের জমিতে স্কুল ভবনটি করা হয়। স্কুল পরিচালনা কমিটি বলেছিলেন এই জমির পরিবর্তে অন্য জায়গায় আমাদেরকে জমি ও টাকা দিবে। তারা আজও তা দিচ্ছেন না। নানান টালবাহানা করছেন।
উত্তর-পূর্ব দেবীপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুদ্দিন আজাদসহ শিক্ষকরা জানান, এই ওয়ার্ডের একমাত্র স্কুলটি ছাড়া অন্য কোনো স্কুলও নেই। ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নাভানা আমাদের বুঝিয়ে দিচ্ছে না। স্কুলের ভবনের এ অবস্থা নিয়ে উপজেলা ও জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে অবহিত করা হলেও কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না। চুক্তি ছিলো নির্মাণ শেষ করে ২৪ মাসের ভেতর পাকা ভবন হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু গত দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ। কোনো বেতন নাই-শিক্ষকও নাই এবং প্রায় দুশ' শিক্ষার্থী অন্য স্কুলে চলে গেছে। ভবনটির অবস্থাও স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে। নিচে দু পাশে ফাটল দেখা দিয়েছে। হাঁস-মুরগি পালন হচ্ছে। বিদ্যুৎ লাইন ও পানি নাই। খুব খারাপ অবস্থা।
বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ শিক্ষকরা জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ না করেই বিল উত্তোলন করে নিয়েছে। ভবনটি নির্মাণকালীন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার জন্যে যে অস্থায়ী টিনশেড ঘর ও তার পাশেও সেমিপাকা ঘরটিও পরিত্যক্ত পড়ে আছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা এ বিদ্যালয় ভবনটি নির্মাণ করা হয়।
নাভানা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী জানান, কাজের শুরু থেকেই রড, সিমেন্ট, বালু, পাথরের টানাটানি ছিলো। এতো সংকটের পরেও বড়ো প্রকল্পের কাজ করা হয়। কিছু সমস্যার কারণে উত্তর দেবীপুর স্কুল ভবনটি বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। কিছু কারণে উক্ত প্রকল্প থেকে বহু প্রকৌশলী চাকরি ছেড়ে চলেও গেছেন। বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদেরও অনেকের বেতন-ভাতা নেই।
নাভানা প্রজেক্টের তৎকালীন ম্যানেজার প্রকৌশলী এএইচএম মাহবুবুর রহমান জানান, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বুঝিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
রায়পুর প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঈনুল ইসলাম বলেন, গত বছর নাভানা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চিঠি দেয়া হয়েছিলো। আবারও খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।