বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৫, ২১:২৪

মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা

এমএ গাফফার
মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন বিষয়ক কর্মশালা

চাঁদপুরে মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, শিক্ষার মান, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ল্যাবসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্রদের নিয়ে কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট ২০২৫) সকালে শিক্ষা অধিদপ্তরের আয়োজনে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) সুচিত্র রঞ্জন দাসের সঞ্চালনায় জেলা প্রশাসক বলেন, প্রথমে আমি বলবো, আমাদের স্কুলগুলোতে যে ম্যানেজিং কমিটি আছে তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উদাসীন। বিদ্যালয়ের সুযোগ-সুবিধাগুলো সাধারণত এদের কাছে এক রকম জিম্মি হয়ে পড়ে। এর মূল কারণ হলো, কমিটির সদস্য নিজেরাই বেশিরভাগ অশিক্ষিত। তারা জানেই না আসল সমস্যা কোথায়। এরপরে তাদের অনেকেই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে কিছুই করতে পারে না। তারা অধিকাংশ সময়ে রাজনৈতিক নেতার লেজুড়বৃত্তিতে মেতে উঠে। এসব করতে গিয়ে বিদ্যালয়গুলোর অত্যাবশকীয় বিষয়গুলো তাদের নজরে পড়ে না। শিক্ষার মান আমাদের দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। এখন আপনারা গত বছরের বোর্ডের ফলাফলের দিকে তাকান। জেলার ফলাফলের অবস্থা খারাপই বলা যায়। আপনারা ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে অভিভাবকদের নিয়ে বসেন না। দু মাসে অন্তত একবার আপনাদের বসা উচিত। এমনও হয় যে, আমাকে অনেকে বলে, আমরা অভিভাবকদের নিয়ে বসি কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা যায় যে, উনারা বসেন না। কেন এই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছেন? এতে আপনাদের ছেলেমেয়েদের, আপনাদের ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের ক্ষতি হচ্ছে।

তিনি বলেন, দেখুন শিক্ষকদের তার ছাত্র-ছাত্রীদেরকে শিক্ষার মূল্যবোধ সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে শিক্ষার জন্যে শিক্ষা গ্রহণ করতে শিখতে হবে। শিক্ষা কোনো ফায়দা হাসিল করার জন্যে না। যখনই এটা ফায়দার জন্যে হবে তখনই শিক্ষার্থীরা ভুল পথে পরিচালিত হবে। মোবাইলের কুশিক্ষা তাদের বোঝাতে হবে। টেকনোলজির অশেষ সুবিধা তাদের দেখিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি উন্নত চরিত্র, সমাজে মেলামেশা করতে দেয়া প্রয়োজন। তবেই সে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

তিনি আরও বলেন, শুধু শিক্ষার্থীদের না, ক্লাসে শিক্ষকদের পাঠদানের মানও বাড়ানোর দিকে জোর দিতে হবে। শুধুমাত্র কোচিং নির্ভর ক্লাস করিয়ে আপনারা ক্ষান্ত দেন, যেটা নৈতিকতা বিরোধী। আমার কাছে এমনও অভিযোগ আছে, যে কোচিং করে বা সংশ্লিষ্ট স্যারের কাছে পড়ে, তাকে সেই বিষয়ে ভালো নাম্বার দেয়া হয়। দেখুন, আপনারা বেতন পান কিন্তু সব শিক্ষার্থী পড়ানোর জন্যে। যত্ন নিলে সবার নিতে হবে। এটা না করা জঘন্যতম অপরাধ। শিক্ষকরা কেন অপরাধে জড়াতে যাবে? আর যদি নাই পারেন তাহলে এ পেশাকে ছেড়ে দেন। জাতির বিবেককে আমরা এ রকম দুর্নীতিগ্রস্থ দেখতে চাই না।

বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের দেশে অনেক সরঞ্জামের ব্যবস্থা আমরা করতে পারি না। এমনও বিদ্যালয় আছে, যেখানে ঠিকমত কার্যকর ল্যাব নেই। এ রকম দৈন্যদশার ওপর আরো যোগ হয়েছে আমাদের সরকারি বন্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন উপলক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকে। তারপর বিদ্যালয়ের সার্বিক সুবিধা কম থাকে, এর মধ্যে আমাদের শিক্ষার্থীদের প্রতি বছর নির্দিষ্ট কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। আমার আহ্বান থাকবে যে, আসুন আমরা অভিভাবক, শিক্ষকরা মিলে আপনার আমার সন্তানের একটা উন্নত ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার জন্যে সম্মিলিত চেষ্টা করি।

কর্মশালায় বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এরশাদ উদ্দিন, জেলা শিক্ষা কর্মকতা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত জামিল সৈকত, সাহিত্য একাডেমি, চাঁদপুর-এর মহাপরিচালক কাদের পলাশ, হাজী আব্দুল কাদের মোল্লা ফাতেমা বেগম ট্রাস্ট কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন কামরান, ড্যাফোডিল স্কুলের অধ্যক্ষ নুর খান, সময় টিভির প্রতিনিধি ফারুক আহাম্মদসহ অন্যরা। উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীগণ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়