প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১:৪৫
লক্ষ্মীপুর নৌ-বন্দর আর কতোদূর?
ঘোষণার প্রায় ৯বছরেও ভূমি জরিপ শেষ হয়নি

ঘোষণার প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর ঘাটে নৌ-বন্দরের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ মজুচৌধুরীর ঘাটে নৌ-বন্দর নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সরকার। এরপর ভূমি জরিপ ও অধিগ্রহণের জন্যে সার্ভেয়ার নিয়োগ করা হলেও অগ্রগতি নেই। এ নৌ-বন্দর বাস্তবায়িত হলে ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে। তবে জেলা প্রশাসক বলছেন, প্রকল্পটি নৌ-মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। নৌবন্দর করার জন্যে জেলা প্রশাসন কাজ করছে।
|আরো খবর
জেলা প্রশাসক কার্যালয় ও স্থানীয় এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মীপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে মজুচৌধুরীর ঘাটের অবস্থান। এই মজুচৌধুরীর ঘাট লঞ্চঘাট থেকে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষ চলাচল করে আসছে। এখানে নৌ-বন্দর নির্মাণ করার জন্যে দীর্ঘদিনের দাবি ছিলো এ অঞ্চলের মানুষের। এই দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লক্ষ্মীপুরে এসে নৌ-বন্দর নির্মাণ প্রকল্পসহ বেশ কিছু কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর আগে একই বছরের ১২ জানুয়ারি নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের টিএ শাখা রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। কিন্তু ঘোষণার প্রায় ৯বছর অতিবাহিত হলেও এখনো বন্দর নির্মাণের কোনো অগ্রগতি নেই।
এদিকে বন্দর কার্যক্রম গতিশীল করতে ২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-ঢাকা লঞ্চ সার্ভিস চালু করে বিআইডব্লিউটিএ। এর ক'দিন পর কোনো অজুহাত ছাড়াই বন্ধ হয়ে যায় এই রুটের লঞ্চ সার্ভিস। বন্ধের তিন বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি এ লঞ্চ চলাচল। এতে করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এই নৌ-রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও ব্যবসায়ীরা। নৌ-বন্দর বাস্তবায়নের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানবন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে সর্বস্তরের মানুষ।
চরম দুভোর্গের মধ্যে রয়েছে সাধারণ মানুষ। দ্রুত বন্দর বাস্তবায়ন করতে সরকারের কাছে আশা করেন জেলাবাসী।
অভিযোগ রয়েছে, সড়কপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা হয়ে লক্ষ্মীপুর শহর পর্যন্ত দূরত্ব ২০৪ কিলোমিটার। অথচ নৌপথে এই দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। কিন্তু বন্দর ঘোষণা এবং লক্ষ্মীপুর-ঢাকা লঞ্চ চালু হওয়ার পর দুর্ভোগ কমে আসার স্বপ্ন দেখলেও সেটা আবার বন্ধ হয়ে যায়। নৌপথ চালু না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এর সুবিধা পাচ্ছে না এই অঞ্চলের মানুষ। তবে যাত্রী অজুহাত দেখিয়ে এ নৌ-রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা কোনোভাবে ঠিক হয়নি। নাকি অন্যের সুবিধার্থে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করা হয়েছে, সেটাই এখন প্রশ্ন ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষের।
মজুচৌধুরী ঘাটের ব্যবসায়ী মিন্টু, আবুল কালাম ও নেয়ামত উল্যাহসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘোষণার প্রায় ৯ বছর অতিবাহিত হলেও বন্দরের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। মজুচৌধিরীর ঘাটে নৌ-বন্দরটি বাস্তবায়িত হলে বরিশাল, চট্টগ্রাম, সিলেট ও খুলনা বিভাগের ২১ জেলার মানুষের মধ্যে যোগাযোগের নতুন সেতুবন্ধন তৈরি হবে। তৈরি হবে শিল্প কলকারখানা। দ্রুত প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু করার দাবি স্থানীয়দের।
জেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বন্দরের কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশার মধ্যে রয়েছে ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ। সরকার নদী বন্দরের যে উদ্যোগ নিয়েছে, এটি দ্রুত বাস্তাবয়ন হলে এই বন্দর হবে ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। প্রসার ঘটবে লাখ লাখ মানুষের অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হবে।
জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, প্রকল্পটি নৌ-মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন। ইতোমধ্যে নৌ-বন্দরের জন্যে ভোলা-মজুচৌধুরীর ঘাট সড়কসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। পাশাপাশি ভূমি অধিগ্রহণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দ্রুত যেন বন্দর কার্যক্রম শুরু করা হয়, সেদিকে লক্ষ্যে রেখে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।








