প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:৩৮
মতলব দক্ষিণে ভিপি ও খরিদকৃত সম্পত্তি নিয়ে প্রকাশিত অসত্য সংবাদের প্রেক্ষিতে ভুক্তভোগী পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

সোমবার (২৯ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১১টায় চাঁদপুর প্রেসক্লাবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের কলাদীস্থ করিম ম্যানশনের মরহুম হাজী আব্দুল কাদের মোল্লার ছেলে ও মতলব পৌরসভার সাবেক মেয়র আওলাদ হোসেন লিটনের সহোদর মোহাম্মদ জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। তিনি তাদের ভিপি ও খরিদকৃত সম্পত্তি নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত অসত্য সংবাদে ভুক্তভোগী দাবি করে গণমাধ্যমকর্মীদের সম্ভাব্য সহযোগিতা চেয়েছেন।
|আরো খবর
মোহাম্মদ জাকির হোসেন তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, গত ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর চাঁদপুরের ক'টি দৈনিক পত্রিকায় মরহুম আব্দুল কাদের মোল্লা ও জনাব আব্দুল বারী সহ পরিবারের সদস্যদের জড়িয়ে ভিপি সম্পত্তিতে শর্ত ভঙ্গ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ইমারত নির্মাণের যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সংবাদটিতে অনুমতি ছাড়াই ভিপি সম্পত্তিতে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর ভরাট করে চারতলা ইমারত নির্মিত হয়েছে মর্মে যে বিষয়টি প্রচার করা হয়েছে তাতে তথ্যগত যথেষ্ট ভুল রয়েছে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আব্দুল কাদের মোল্লা, মরহুম আব্দুল করিম, মরহুম আব্দুল আউয়াল এবং জনাব আব্দুল বারী ১৯৬৯-১৯৭০ সালে সরকারের কাছে যথাযথ নিয়মে আবেদন করে কলাদি মৌজার ৭০, ২৫, ৬৫২ নং খতিয়ানের ৫৭০, ৫৭১, ৫৭২ ও ৫৭৩ দাগে মোট ৮৭.৭৫ শতাংশ ভূমি লিজ গ্রহণ করেন এবং প্রতিবছর নিয়মমত খাজনা পরিশোধ করে আসছেন। এ ভূমির সাথে আমাদের ক্রয়কৃত ভূমিও রয়েছে, যার পরিমাণ ৫১.২৫ শতাংশ। যেহেতু তফসিল বর্ণিত ভূমি দলিল ও নিজ মূলে মালিক থেকে ভোগ দখলে আছেন, সেহেতু নিরাপত্তার সুবিধার্থে তফসিল বর্ণিত ভূমিতে ইমারত নির্মাণের লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমতির জন্যে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি প্রদান করেন। এ অনুমতির আলোকেই নিয়ম মেনে ইমারত নির্মাণ করা হয়। এ নির্মাণ কাজের পুরো খরচ বহন করেন আমাদের পরিবারের সুসন্তান জাপান প্রবাসী বেলায়েত হোসেন জুলহাস। এ নির্মাণ কাজের সাথে সাবেক মেয়র আওলাদ হোসেন লিটনের কোনো সম্পর্ক নেই বা ছিলো না।
মূলত তর্কিত ভূমির কিছু অংশ পার্শ্ববর্তী জনৈক প্রভাবশালী ব্যক্তির দখলেও রয়েছে। তিনি তার দখলীয় ভূমি কূটকৌশলের মাধ্যমে আরো সম্প্রসারণ করার লক্ষ্যে ১৯৮৭-১৯৮৮ সালে এমএ বারী গং-এর বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন। মামলাটি অসার হওয়ায় মামলার রায় বারী গং-এর পক্ষে যায়। কিন্তু একই ব্যক্তি তার অসৎ উদ্দেশ্যে পার্শ্ববর্তী ভূমির মালিক নেপাল গং ও সরকারি কলেজের সাথেও বিরোধ তৈরি ও মামলা দায়ের করে রেখেছেন। তিনি ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরে উচ্চ পদে চাকুরি করার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে কলেজের নকশা পরিবর্তন করায় মামলার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশে পট পরিবর্তনের পরে এ ব্যক্তি উল্লেখিত ভিপি সম্পত্তি আত্মসাতের অসৎ উদ্দেশ্যে ইনকিলাব মঞ্চ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব বরাবরে উচ্ছেদের আবেদন করেন। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তারা এ বিষয়ে অবগত নয়। এ আবেদনের প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাননীয় সচিব মাননীয় জেলা প্রশাসক বরাবরে এবং জেলা প্রশাসক আদিষ্ট হয়ে উপজেলা এসিল্যান্ড বরাবর তদন্ত করার নির্দেশ জারি করেন। তৎকালীন এসিল্যান্ড ও তহশীলদার সঠিক তদন্ত রিপোর্ট প্রদানের স্বার্থে এ প্রভাবশালী ব্যক্তির কথামত কাজ না করায়, সেই ব্যক্তি ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের উচ্চপদে চাকুরি করায় এবং এখনো সরকারের একটি প্রকল্পে চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত আছেন বিধায় তার অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে অত্যন্ত সৎ ও দক্ষ সহকারী কমিশনার (ভূমি) জনাব জাবেদ হোসেন চৌধুরীকে মাত্র ১০ মাসের মাথায় ও তহশীলদারকে কৌশলে বদলি করান। পরবর্তীতে নতুন এসিল্যান্ড ও তহশীলদার আনিয়ে অত্যন্ত গোপনে একপাক্ষিকভাবে ও তড়িঘড়ি করে তার পক্ষে তদন্ত রিপোর্ট প্রদান করান ও উচ্ছেদ আদেশ জারি করান। ভুক্তভোগী পরিবার উক্ত উচ্ছেদ আদেশের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশনটি গ্রহণ করে উচ্ছেদ আদেশটি ৬ মাসের জন্যে স্থগিত করেন। বর্তমানে এটি মহামান্য হাইকোর্ট বিচারাধীন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ জাকির হোসেন দাবি করেন,
মতলবের মানুষের প্রতি আলোচ্য ভুক্তভোগী পরিবারের রয়েছে অসামান্য অবদান। মরহুম আব্দুল করীম সাহেবের মাধ্যমে মতলবে প্রথম বিদ্যুৎ আসে। এই পরিবারের আরেক সুযোগ্য সদস্য জনাব আব্দুল বারী সাহেবের প্রচেষ্টায় মতলবে প্রথম টেলিফোন ও গ্যাস আসে। মতলব বাজারের শাহী জামে মসজিদ পুনর্নির্মাণের সিংহভাগ অর্থ এই পরিবার থেকে যোগান দেয়া হয়। জনাব এম এ বারী সাহেব এই মসজিদের সভাপতি হিসেবে এখনো অবদান রেখে চলেছেন। বাজার উন্নয়নে এই পরিবারের রয়েছে অভূতপূর্ব অবদান। এক সময়ে বাজারের ক্রেতা- বিক্রেতাদের খাজনা মওকুফ করে দিয়ে জনগণকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা করেন। আর কে জনকল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে গরিব ও অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। বর্তমানে এই পরিবার হাজী আব্দুল কাদের মোল্লা-ফাতেমা বেগম ট্রাস্ট (কে এফ টি)-এর মাধ্যমে মতলবের শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে নানামুখী কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এই ট্রাস্টের একটি প্রতিষ্ঠান কে এফ টি কলেজিয়েট স্কুল ইতোমধ্যেই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে কে এফ টি মেধা অন্বেষণ নামে উপজেলাব্যাপী মেগা ইভেন্টের আয়োজন করে যাচ্ছে। যার মাধ্যমে ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশ হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে কোমলমতি মেধাবীদের বৃত্তি ও পুরস্কার প্রদান করছে।
এমন একটি পরিবারের বিরুদ্ধে ভূমি ও জরিপ অধিদপ্তরের উচ্চ পদে চাকরি করা উক্ত প্রভাবশালী বাক্তির প্ররোচনায় উদ্দেশ্যমূলক ও মানহানিকর সংবাদ প্রচার ও তার সকল ষড়যন্ত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং তার দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও শাস্তি দাবি করছি। পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন আর কেউ কোনো সম্মানিত ব্যক্তি ও পরিবারকে এহেন হয়রানি করতে না পারে তার জন্যে সমাজের সচেতন মহলের এগিয়ে এসে তা প্রতিহত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি রহিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশসহ সাবেক সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ অন্য নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।