প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১:৩৬
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-চাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’র সংবাদ সম্মেলন
ফরহাদ-ইয়াছিন-শাহেদ প্যানেল ঘোষণা
দখলদারিত্ব ও সহিংসতামুক্ত ক্যাম্পাস গড়ার ৩১ দফা অঙ্গীকার ব্যক্ত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-চাকসু নির্বাচন উপলক্ষে ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্যে’র উদ্যোগে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভিপি পদপ্রার্থী মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম।
|আরো খবর
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রাম-ঐতিহ্য ও অর্জনে জড়িয়ে আছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। আমরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অধিকার নিশ্চিত করা এবং অহিংস চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিটি শিক্ষার্থীর অধিকার আদায় করার লক্ষ্যে সবার পরামর্শক্রমে চাকসু নির্বাচনে প্যানেলের নামকরণ করেছি ‘অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য’। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমানে নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। দীর্ঘ সেশনজট, আবাসন সংকট, বিভাগীয় ওয়াশরুমের বেহাল অবস্থা, সুপেয় পানির অভাব, শাটলের বগি সংকট এবং সার্বিক নিরাপত্তাহীনতা প্রতিনিয়ত শিক্ষার্থীদের জন্যে বড় ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যার সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছে। দখলদারিত্ব ও সহিংসতা মুক্ত আবাসিক পরিবেশ তৈরি, মেস ও ক্যাফেটেরিয়ায় মানসম্মত ও স্বল্পমূল্যের খাবার নিশ্চিতকরণ, ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসনের সংকট দূর করতে নতুন হল নির্মাণ দাবি, শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষার আধুনিকায়ন, গবেষণা-ভিত্তিক শিক্ষা ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস-দখলদারিত্ব-লেজুড়বৃত্তিক সহিংস ছাত্ররাজনীতির পরিবর্তে অহিংস ছাত্ররাজনীতি চর্চা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলনে নিম্নোক্ত অঙ্গীকারসমূহ বাস্তবায়নে প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয় :
১. ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল টিমের নিয়মিত টহলের মাধ্যমে ক্যাম্পাস সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
২. ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা।
৩. প্রতিটি পয়েন্টে ক্যাম্পাসের নিজস্ব সিকিউরিটি বুথ বসানো।
৪. আবাসন সমস্যা সমাধানে সেশন জট কমানের পদক্ষেপ গ্রহণ।
৫. নারী শিক্ষার্থী, প্রান্তিক অঞ্চল ও ভিন্নধর্মী শিক্ষার্থীদের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
৬. শিক্ষার্থীর অধিকার বাসস্থান, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, লাইব্রেরি ও ক্যাফেটেরিয়া প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার রক্ষা করা।
৭. প্রতিটি হলে ভেন্ডিং মেশিন এবং লন্ড্রি সুবিধা।
৮. বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরীণ চলাচলের জন্যে জো বাইক সার্ভিস চালু।
৯. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিতে বিশেষজ্ঞ শিক্ষার্থীদের দ্বারা ফুড মনিটরিং টিম গঠন করে রেগুলার ক্যান্টিন এবং ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ খাবারের দোকানগুলো তদারকি।
১০. মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ছুটি নিশ্চিত করা। প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে ডে কেয়ার সেন্টার চালু করা এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বেবি সিস্টার নিয়োগ করা।
১১. রেজিস্ট্রেশন কাজ ডিজিটালাইজেশন করা, বিশেষত একটি অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যাবহার করে সব ধরনের সেবা যেনো ঘরে বসে নেওয়া যায় তা নিশ্চিত করা।
১২. বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক সেবাকে Automation-এর আওতায় এনে All service in one card ব্যবস্থা চালু করা।
১৩. বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে শাটল বাস বা পরিবহন সেবার পরিমাণ বৃদ্ধি করা, যা নাম মাত্র মূল্যে চক্রাকারে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরবে।
১৪. বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি ব্যবহার করে Elsevier, Springer Nature, Wiley, Taylor & Francis, SAGE, JSTOR, Scopus, Web of Science সহ সব বড়ো প্রকাশনা ও ডাটাবেইসে অ্যাক্সেস আরও সহজলভ্য করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্ট্যান্ডার্ড অনলাইন লাইব্রেরী তৈরি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ক্ষেত্রে বরাদ্ধ বৃদ্ধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রকাশনা সংস্থার আধুনিকায়ন এবং প্রতি বছর গবেষণা মেলার আয়োজন করা।
১৫. প্রতিটি ফ্যাকাল্টিতে ভিন্ন ভিন্ন ছাত্র ও ছাত্রী কমন রুম এবং নামাজ কক্ষের ব্যবস্থা করা।
১৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আধুনিকায়ন। পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত। সিট সংখ্যা বৃদ্ধি এবং অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা বৃদ্ধিসহ ২৪ ঘন্টা ডাক্তার সেবা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় সব ধরণের ঔষধ বিনামূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা।
১৭. মাদকাসক্ত, ভবঘুরে ও বহিরাগতমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করা।
১৮. আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের অলিম্পিয়াড, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ বাড়ানো এবং প্রয়োজনীয় তহবিল গঠন।
১৯. কোর্স কারিকুলাম নিয়মিত পর্যালোচনা, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুযোগ, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি ডিজিটালাইজেশন, মেধাভিত্তিক বৃত্তি ও শিক্ষাঋণ, ক্যাম্পাসে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা আয়োজন, ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
২০. ডিজিটাল ক্লাসরুম বৃৃদ্ধি, ল্যাব আধুনিকায়ন, শিক্ষক মূল্যায়নের বাস্তব ভিত্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ।
২১. ক্যাম্পাসের প্রতিটি হলে, একাডেমিক এরিয়ায়, রেলওয়ে স্টেশনে এবং গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করা।
২২. পোশাকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় বিশেষ প্রাধান্য দেওয়া।
২৩. নিজস্ব মিউজিয়াম ও কালচারাল সেন্টার, আধুনিক জিমনেসিয়াম এবং খেলার মাঠ সংস্কার।
২৪. চাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন নিশ্চিত করা।
২৫. কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি, বিজ্ঞান লাইব্রেরি, হল লাইব্রেরি ও পাঠকক্ষ এবং ডিপার্টমেন্টের সেমিনার কক্ষ সম্প্রসারণ করা। এগুলোর নিশ্চিত শিক্ষার্থীদের জন্য আরও সহজলভ্য করা। লাইব্রেরিগুলো ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা।
২৬. সফট স্কিল ডেভেলপমেন্টের ওপর ওয়ার্কশপ আয়োজন করা। উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার-বিষয়ক সেমিনার, কর্মশালার পাশাপাশি ক্যাম্পাসে জব ফেয়ার আয়োজন করা। তরুণ উদ্যোক্তাদের নিয়ে Start-up Summit আয়োজন করা।
২৭. অ্যালামনাই নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
২৮. যৌন হয়রানি ও সাইবার-বুলিং প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বাস্তবায়ন। যৌন নির্যাতন-বিষয়ক অভিযোগ সেল শক্তিশালীকরণ ও আইনি সহায়তা দেওয়া।
২৯. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে কোনো সমস্যা দ্রুত সমাধানে জন্য প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে 'স্টুডেন্ট হেল্প ডেস্ক কল সেন্টার' চালু করা।
৩০. প্রশাসনিক লাল ফিতার দৌরাত্ম্য ভেঙ্গে দেওয়া।
৩১. ক্যাম্পাসের যে কোনো যৌক্তিক আন্দোলনে প্রশাসন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে সমন্বয় করে সমাধান নিশ্চিত করা।
সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন জিএস প্রার্থী ইয়াছিন উদ্দিন সাকিব ও এজিএস প্রার্থী শহীদুল ইসলাম শাহেদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন ২০২৫ অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য মনোনীত পূর্ণাঙ্গ প্যানেল : ভিপি-মুহাম্মদ ফরহাদুল ইসলাম, জিএস-মুহাম্মদ ইয়াছিন উদ্দীন সাকিব, এজিএস-শহীদুল ইসলাম শাহেদ, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক-খায়রুল আমীন হৃদয়, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক-মুহাম্মদ ফয়সাল হোসেন, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক-মুহাম্মদ এহছানুল হক, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক- মুহাম্মদ ইমরান হোসেন, দপ্তর সম্পাদক-এস এম আলী হোসাইন জিসান, সহ-দপ্তর সম্পাদক- মুহাম্মদ ইব্রাহীম রুবেল, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক-জাকিয়া সুলতানা, গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সম্পাদক-মুরিদুল হাসান মুরাদ, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক-সৈয়দা সুরাইয়া হোসাইন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক-জান্নাতুন নাঈম খুকি, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক- মিফতাহুল জান্নাত, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক- মুহাম্মদ তারেক হাসান, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন বিষয়ক সম্পাদক-মুহাম্মদ জহির উদ্দীন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক-জুলহাস নাঈন সায়েম, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক-ইসমাইল ফাহিম, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক-মুহাম্মদ মামুন মিয়া, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক-মুহাম্মদ ইমাম হোসাইন, পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক-মোহাইমিনুল কবির, নির্বাহী সদস্য- দৌলতুল ইসলাম সাকলাইন, তাউছিফুর রহমান, মুহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, মুহাম্মদ সাব্বির রহমান ও হানিফ ইসলাম।