প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৯
মধুরোড স্টেশনে জঙ্গল পরিষ্কার করে তারা বানালেন ফুলের বাগান

চাঁদপুর-লাকসাম রেলপথের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন মধুরোড। ১৮৯৫ সালে নির্মিত এ স্টেশনটি গত ক’বছর আগে একটি আধুনিক রেল স্টেশনে রূপান্তরিত করেন বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পর গত ৪-৫ বছরের মতো স্টেশনের পশ্চিমাংশ হয়ে যায় জঙ্গলময়--পরিত্যক্ত জায়গা হিসেবে। অথচ সেখান দিয়ে চলতে হয় দূরদূরান্ত থেকে আগত যাত্রীসহ পর্যটকেরা। বিশেষ করে বিকেল ও সন্ধ্যার পরের সময়টুকু প্রাকৃতিক পরিবেশে খুবই চমৎকার লাগে এ স্থানটি। তবে স্টেশনের প্রবেশ দ্বারের কারণে মুখ ফিরিয়ে নিতে হচ্ছিলো অনেকেরই। সারাদিন পথচারীরা মূত্রত্যাগ করতো। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়াটাই যেখানে ছিলো মুখ্য। হাঁটতে গেলে দম বন্ধ হয়ে আসে সেখানে। এজন্যে নাক সিটকে প্রতিদিন চলাচল করতে হয় পথচারীদের। এ যেন রোজকার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ময়লা-আবর্জনা জমে থাকলেও তা পরিষ্কার করার তাগিদ ছিলো না কারো। পথচারীদের ওই এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এ অবস্থায় স্থানীয় দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসলেন অলাভজনক ও অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রভাত যুব সমাজকল্যাণ সংস্থার সদস্যরা। স্টেশন মাস্টার সাঈদ হোসেন শিপনের সার্বিক সহযোগিতায় চলতি বছরের গত ১৬ জুন উক্ত ময়লার ভাগাড়টি পরিষ্কারের উদ্যোগ নেয় ১৫-২০ জন কর্মী। সেখানে রোপণ করা করা হয় কৃষ্ণচূড়া ও রাধাচূড়া গাছের চারা।
মধুরোড স্টেশনের সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্যে সংগঠনটির এক ঝাঁক তরুণ স্বেচ্ছাসেবক প্রতি সপ্তাহে কাজ করে আসছেন। মহামায়া-ছোট সুন্দর সড়ক থেকে বের হওয়া মধুরোড প্লাটফর্মে যাওয়া সড়কের দুপাশের জঙ্গল পরিষ্কার করে সেখানে রোপণ করেছেন রঙ্গন, ঝাউ, ট্রেসিনা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, সাদা জবা, টগরসহ বিভিন্ন প্রজাতির রঙ-বেরঙের ফুলের গাছ। রোপিত সেই গাছগুলোর নিরাপত্তায় বেড়া দেয়াসহ পরিচর্যাও করছেন নিয়মিত। সেখানকার পরিবেশটি এখন ফুটে উঠছে এক মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিনন্দন স্থান হিসেবে।
সংগঠনটির এমন কার্যক্রমে খুশি স্থানীয়রা ও চাঁদপুর রেল বিভাগ। সরকারি নিবন্ধনকৃত স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ২ শতাধিক গাছের চারা রোপণ এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে। একটি জনবহুল জঙ্গলময় স্থানকে পরিষ্কার করে দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান তৈরি করে চাঁদপুরে বেশ আলোচনায় এসেছে সংগঠনটি। এমন ব্যতিক্রমী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করায় চাঁদপুরে সেরা সংগঠন পুরস্কার-২০২৫-এ ভূষিত হয়েছে প্রভাত যুব সমাজকল্যাণ সংস্থা। গত ৩১ আগস্ট শনিবার চাঁদপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবী অ্যাসোসিয়েশনের দিনব্যাপী কর্মশালায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দের হাতে সম্মাননা পুরস্কার তুলে দেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।
সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান জানান, আমরা বিগত ৮ বছর গাছের চারা রোপণ ও বিতরণ করে এসেছি। কিন্তু এ বছর থেকে একটি ভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। এতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছি। সামাজিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা থাকলে আগামীতে এ রকম উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করে যাবো ইনশাআল্লাহ।
লেখক : সমাজকর্মী ও ফিচার লেখক, চাঁদপুর সদর।