প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১৪
নামজারি করেন সিলেটে পাথর কাণ্ডের ইউএনও, ফরিদগঞ্জের তৎকালীন এসি ল্যান্ড
ফরিদগঞ্জে ভুয়া দলিল দিয়ে নামজারি।। সর্বস্ব হারানোর আতঙ্কে এক পরিবার

ঘষামাজা দলিল দিয়ে উপজেলা ভূমি অফিসের সহযোগিতায় নামজারি সম্পন্ন করার পর সুযোগের অপেক্ষার পালা। অবশেষে সেই সময় এলো। জাতীয় জীবনের ঘটে যাওয়ার বিগত অভ্যুত্থানের সময়কে পুঁজি করে জমা খারিজ করা সম্পত্তি নিজেদের দখলে নিতে চেষ্টা শুরু করে ওই চক্রটি। যদিও অদ্যাবধি সম্পত্তি দখলে নিতে না পারলেও বাধা প্রদান ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চলছে ওই চক্রটি।
আর ঘষামাজা করার দলিল দিয়ে জমা খারিজটি সম্পন্ন করেছেন তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও সিলেটের পাথরকাণ্ডের আলোচিত ইউএনও বর্তমান ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার বেগম। সম্প্রতি ওই খারিজ বাতিলের আবেদন করার পর বিষয়টি উঠে আসে। অভিযোগ রয়েছে, ওই একটি নামজারি করতে জমা দেয়া ৮টি দলিলের সব ক'টিই ঘষামাজা করা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের প্রয়াত বসন্ত কুমার দত্তের ছেলে স্বপন চন্দ্র লোধ ও প্রতিবেশী আবুল হাসেম বেপারী ছিলেন দীর্ঘদিনের বন্ধু। একজনের বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে অপরজন ছাড়া অসম্পূর্ণ থাকতো। স্বপন লোধ নিজের ঘরের কথা স্ত্রী-সন্তানদের না বলে বন্ধু আবুল হাসেমকে বলতো। জমিজমার কাগজপত্র সবকিছুই আবুল হাসেমের নখদর্পণে। কিন্তু এই বন্ধুত্বের অগোচরে চলে অন্যকাণ্ড। যা স্বপন লোধের মৃত্যুর পর ধীরে
ধীরে প্রকাশ হয়ে পড়ে।
স্বপন লোধের ছেলে শিমুল লোধ জানান, পৈত্রিক সূত্রে তারা যেটুকু সম্পত্তির মালিক হন, তন্মধ্যে ৬০ শতক ভূমি ১/১ খতিয়ানে রয়েছে। উক্ত খতিয়ান থেকে গোপনে আবুল হাসেম বেপারী দলিল ঘষা-মাজা ও জালিয়াতি করে নিজের নামে ৫৬ শতক ভূমি নামজারি সৃজন করে নেয়। তার সৃজনকৃত নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান করে ১৯৮৮ সালের ৪৯৮২ নং ও ১৯৯৪ সালের ২৩১৮নং দলিল দুটি ঘষামাজা ও ছল-চাতুরির বিষয়টি ধরা পড়ে। ৪৯৮২নং দলিলে দাতা ও গ্রহীতা ঠিক থাকলেও ভূমির পরিমাণ ৪৪ শতকের স্থানে দলিল ঘষামাজা করে ১ একর (একশ' শতক) করা হয়েছে। সাবেক ৫৮ দাগ হালে ১০০ নং দাগ দলিলে উল্লেখ না থাকলেও ওই দলিল দিয়ে ওই দাগের ৫৬ শতক জমি আবুল হাসেম নামে খারিজ করে নেয়া হয়েছে। ২৩১৮নং দলিলে দাতা ও গ্রহীতা কোনো কিছুরই মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই দলিলটির মৌজা মূলত পৌর এলাকার ভাটিয়ালপুর হলেও ঘষামাজা করে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া মৌজা দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে এই দু দলিলের বিপরীতে প্রদান করা ভায়া দলিল নিয়েও ঝামেলা রয়েছে। ১৯৬৮ সালের ১৩১৮ নং দলিলেও দাতা-গ্রহীতার নাম মিল পাওয়া যায় নি। ওই দলিলটি পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের বিষুরবন্দ মৌজার। এটিও ঘষামাজা করে গুপ্টি পশ্চিম ইউনিয়নের খাজুরিয়া মৌজা দেখানো হয়।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গণমাধ্যমকর্মীরা চাঁদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড রুমে তল্লাশি করে আবুল হাশেম কর্তৃক দলিল ঘষামাজার বিষয়টি সঠিক বলে নিশ্চিত হন।
সরেজমিন খাজুরিয়া এলাকার দত্তের বাড়িতে গেলে কথা হয় দত্ত তথা লোধ পরিবারের উত্তরসূরিদের সাথে। প্রয়াত স্বপন লোধের স্ত্রী কাজল রাণী, ছেলে শিমুল লোধ, গনেশ লোধ, মেয়ে মায়া রাণী ও শিলা রাণী জানান, প্রয়াত স্বপন লোধের বন্ধু হিসেবে আবুল হাসেমকে তারা এখনো শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। কিন্তু বিগত ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা এক প্রকার আতঙ্কে রয়েছি। আমাদের সম্পত্তিগুলোতে আমরা আবাদ করতে পারছি না, তাদের বাধার কারণে জমিগুলো অনাবাদী রয়ে গেছে। পুুকুরে মাছ ধরা, গাছগাছালি থেকে ফল পাড়া, ডাল কাটাও বন্ধ। তারা বন্ধু থেকে শত্রুতে পরিণত হয়েছেন, যা আমরা কখনোই চাইনি।
এদিকে শিমুল লোধ জানায়, খারিজ বাতিলের আবেদনের পর গত ২৫ আগস্ট ২০২৫ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ওই শুনানিতে আমি দুটি দলিল ও ভায়া দলিলসহ তিনটি দলিলের সহি-মোহর যুক্ত অবিকল নকল উপস্থাপন করলে দলিল ঘষামাজা ও ছল-চাতুরির বিষয়টি উঠে আসে। ফলে সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর বিজ্ঞ আদালত আবুল হাসেমকে এ দলিলের মূল কপি ও সহি মোহর যুক্ত অবিকল নকল দলিল দাখিলের নির্দেশ দেন। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, তারা এখনো তা জমা দেননি।
দলিল ঘষামাজা ও ভুয়া দলিল সৃজন বিষয়ে আবুল হাসেম বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত এসব অভিযোগ সত্য নয়। যথাসময়ে মূল দলিল সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে জমা দেবেন।
শিমুল লোধ আরো জানান, আমাদের জমাখারিজকৃত কিছু সম্পত্তি অপর কয়েকটি পরিবার দীর্ঘদিন যাবত দখল করে রেখেছে।