মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৪

মতলব নিউ হোস্টেল মাঠ : বহু ঐতিহ্যের ধারক বাহক

রেদওয়ান আহমেদ জাকির
মতলব নিউ হোস্টেল মাঠ : বহু ঐতিহ্যের ধারক বাহক

একটি মাঠের ইতিহাস বেশ দীর্ঘ এবং বৈচিত্র্যময় হতে পারে। মাঠ কেবল খেলাধুলার স্থান নয়, এটি সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং সমাজের প্রতিচ্ছবিও বটে। প্রতিটি মাঠের নিজস্ব ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট রয়েছে। কোনো মাঠ হয়তো কোনো যুদ্ধের স্থান ছিলো, কোনোটি আবার মেলা বা উৎসবের জন্যে পরিচিত ছিলো। আবার কোনো মাঠ রাজনৈতিক বা সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুও হতে পারে। তবে নিউ হোস্টেল মাঠটি মতলব হাইস্কুলের ছাত্রদের খেলাধুলার জন্যে গড়ে উঠেছিলো। এছাড়াও এ মাঠটি রাজনৈতিক সমাবেশের জন্যে ব্যবহৃত হয়। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক আন্দোলন বা বিদ্রোহের সাক্ষীও এই মাঠ।

মতলবগঞ্জ জে. বি. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্থান মেইন হোস্টেলে সংকুলান না হওয়ার কারণে ১৯৫৫ সালে মতলব নিউ হোস্টেল স্থাপন করা হয়। নিউ হোস্টেল স্থাপন করার প্রায় তিন বছর পর অর্থাৎ ১৯৫৮ সালে নিউ হোস্টেল মাঠ স্থাপিত হয়। সেই থেকেই মাঠটি নিউ হোস্টেল মাঠ নামে পরিচিতি লাভ করে।

মাঠটি মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরে অবস্থিত। মাঠটির একপাশে রয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ‘দীপ্ত বাংলা’ নামে নান্দনিক স্থাপনা রয়েছে। অনেকের নিকট নিউ হোস্টেল মাঠটি তাই দীপ্ত বাংলা মাঠ নামেও পরিচিত।

নিউ হোস্টেল মাঠের শুরুতে ক্রীড়ামোদী দর্শক ও খেলোয়াড়দের মধ্যে নবজাগণের উত্তেজনা বিরাজ করেছিলো। মতলব উপজেলা সদরে আর কোনো মাঠ না থাকায় সারা বিকেল জুড়ে বছরের সব সময় কোনো না কোনো খেলা বা টুর্নামেন্ট চলমান থাকতো। এ মাঠে খেলে অনেক খেলোয়াড় তাঁর খেলোয়াড়ী জীবনে সুনাম অর্জন করেছেন। এছাড়াও সরকারি, বেসরকারি, মৌসুমী প্রতিযোগিতাগুলো নিউ হোস্টেল মাঠ ঘিরে থাকে বলেই দর্শকদের মধ্যে উপভোগের উত্তেজনা বিরাজমান থাকে।

স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেক খেলোয়াড় ঢাকার স্বনামধন্য ক্লাবগুলোতে ফুটবল খেলতেন। তারই ধারাবাহিকতায় নিউ হোস্টেল মাঠে খেলোয়াড় হিসেবে খেলে স্বাধীনতোত্তর সময়ে প্রতিষ্ঠা পান এম. এ. মতিন প্রধান, তাফাজ্জল হোসেন জিএম, সিরাজুল ইসলাম দেওয়ান, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী প্রমুখ। পরবর্তীতে হাজী জাকির, দেওয়ান জাহাঙ্গীর আলম, গোলাম নবী বাদল, আক্তার হোসেন প্রমুখ। তৎপরবর্তীতে দেওয়ান সুরুজ, মেজবাহ উদ্দিন মেজু, পরিতোষ, জহিরুল ইসলাম আলেক, একে আজাদ প্রমুখ এবং তারপরে সালাউদ্দিন, দেবু, গোলাম কাদের মুকুল, লিটন, মোদাচ্ছের হোসেনসহ অন্যরা। এ মাঠে ফুটবল ছাড়াও ক্রিকেট, ভলিবল ও অন্যান্য খেলাধুলা হতো।

মতলবে অনেক ক্লাব থাকা সত্ত্বেও খেলাধুলা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা অনেকটাই কমে গেছে। তবে সম্প্রতি কয়েকটি ক্লাবের স্মৃতি টুর্নামেন্ট আয়োজনের মধ্য দিয়ে এ মাঠটি আবার সরগরম হয়ে উঠেছে। এতে খেলাধুলার দিকে ঝুঁকছে স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় তরুণরা।

বর্ষা মৌসুমে ও অতি বৃষ্টিতে মাঠটিতে পানি উঠে যায়। ফলে মাঠটি সংস্কার করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।

এদিকে খেলাধুলার বাইরেও মতলব নিউ হোস্টেল মাঠে বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। আশি ও নব্বই দশকে ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজনের বাইরেও ভলিবল, হকি ও কাবাডি খেলা বেশ প্রচলন ছিলো। উপজেলা ক্রীড়া সংস্থা ও স্থানীয় ক্লাবগুলোর সদিচ্ছা থাকলে নিউ হোস্টেল মাঠ আগের মতো আবার দর্শক ও খেলোয়াড়দের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠতে পারে।

দীর্ঘ সময়ের খরার অবসানে বৃষ্টি কামনায় এ মাঠে একাধিকবার বিশেষ নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ মাঠটি খেলাধুলা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। বড়ো কোনো টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে গেলে মাঠের পরিসর ছোট হওয়ায় চাহিদা মোতাবেক আয়োজন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। মতলববাসীর দাবি, মাঠটির পূর্ব দিকের পুকুর ভরাট ও পশ্চিম দিকের পরিত্যক্ত হোস্টেল ভবন সরিয়ে মাঠটি সংস্কার করলে নিউ হোস্টেল মাঠে যে কোনো খেলাধুলার আয়োজন আরো অর্থবহ হয়ে উঠবে।

মতলববাসীর ক্রীড়া, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও বিনোদনের এক প্রাণকেন্দ্র এই মাঠ যেনো ফুলের মাঝে থাকা ঘ্রাণের মত অবিচ্ছেদ্য এক নাম। মাঠটির পরিবেশ রক্ষায় এখানে ময়লা আবর্জনা না ফেলে বরং পরিচ্ছন্ন রাখতে সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। এই মাঠ বাঁচলে বাঁচবে শহর, বাড়বে সুনাম, শহর পাবে সবুজে ঘেরা এক ঐতিহ্যের ঘ্রাণ।

আগামী প্রজন্মের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠা ও খেলাধুলার সুন্দর আয়োজন বাস্তবায়নের জন্যে স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলো মাঠটির সংস্কারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে আশা করছে এখানকার ক্রীড়ামোদী দর্শক, স্কুল-কলেজের খেলোয়াড় ও স্থানীয় যুব সমাজ।

রেদওয়ান আহমেদ জাকির : মতলব ব্যুরো ইনচার্জ, সহ-সম্পাদক, অনলাইন, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; প্রচার সম্পাদক, আল-আমিন ক্রীড়া চক্র, মতলব দক্ষিণ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়