মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১৯:৩৮

প্রেমের মরা এবার জলে ডুবে গেলো!

স্ত্রীর প্রতারণায় নিঃস্ব স্বামী ॥ টাকা স্বামীর হলেও বাড়ি স্ত্রীর!

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি।।
স্ত্রীর প্রতারণায় নিঃস্ব স্বামী ॥ টাকা স্বামীর হলেও বাড়ি স্ত্রীর!

‘বলা হয়ে থাকে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর।’ কিন্তু ফরিদগঞ্জে ঘটলো এর উল্টো ঘটনা। বিশ্বাস করে প্রবাসী স্বামী বিভিন্ন মাধ্যমে তার স্ত্রীর কাছে টাকা পাঠায় ভূমি ক্রয় করার জন্যে। ভূমি ক্রয়ও করা হয়, কিন্তু তা স্বামীর নামে নয়, স্ত্রী নিজের নামেই সব সম্পত্তি দলিল করে। টাকা স্বামীর হলেও বাড়ি আর ভূমি স্ত্রীর। এ রকমই একটি গুরুতর অভিযোগ উঠেছে খাদিজা আক্তার মিতু নামের এক প্রবাসীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে। তবে স্ত্রী এ অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে সাংবাদিকদের জানান।

উপজেলার পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের শাশিয়ালী গ্রামের মো. শাহ-আলম খানের জ্যেষ্ঠ পুত্র ফয়সাল পাটওয়ারী। ভালোবেসে বিয়ে করেন একই ইউনিয়নের খুরুমখালী গ্রামের নাছির ভূঁইয়ার ২য় কন্যা খাদিজা আক্তার মিতুকে। খাদিজা আর ফয়সাল সম্পর্কে খালাতো ভাই-বোন। তাদের ভালোবাসার গভীরতা এতোই বেশি ছিলো যে, খাদিজা নিজের মা-বাবাকে ছেড়ে গোপনে ফয়সালের হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করে। কিন্তু গীতিকারের গীতকে মিথ্যা প্রমাণ করে দেয় তারা! তারা প্রমাণ করে দিলো, কখনো কখনো প্রেমের মরা জলে ডুবে।

২০১৬ সালে তারা চার লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করে। প্রথম বছর তাদের দাম্পত্য জীবন ভালোই কাটে। বিপত্তি বাধে ফয়সাল বিদেশ যাওয়ার পর। বিদেশ যাওয়ার আগে তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তান আসে। ২০১৭ সালে ফয়সাল সৌদি আরব যায়। ফয়সালের অভিযোগ, তার স্ত্রী মা-বাবার সাথে থাকতে চায় না। এটা নিয়ে প্রায় সময়ই ঝামেলা লেগে থাকে। তাই ফয়সাল তার স্ত্রীর পছন্দ অনুযায়ী তারই নানার বাড়ি চলে আসে এবং রূপসা বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকে। গার্ডিয়ান হিসেবে খাদিজার মামা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার আব্দুল খালেক পাটোয়ারী দেখাশোনা করতেন। এদিকে ফয়সাল স্ত্রী, কন্যা এবং অর্থের দিকে এতোই মনোনিবেশ করেন যে, নিজ মা-বাবার কথা ভুলেই যান।

ফয়সাল খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বিবাহের পর থেকে আমার স্ত্রী আমার এক কন্যাকে নিয়ে আমার মামা শ্বশুরের এলাকায় থাকে। সে আমার নিজ বাড়িতে থাকবে না। সে আমার মা-বাবার সাথে থাকতে চায় না। যেহেতু ভালোবেসে বিয়ে করেছি, তাই তার কথা গুরুত্ব দিয়ে রূপসা বাজার অগ্রণী ব্যাংকের নিকটে ভাড়া বাসায় থাকতাম। পরে আমার স্ত্রী, শাশুড়ি ও আমার মামা শ্বশুর (আব্দুল খালেক) সহ আমাকে বলে, “আমাদের আশেপাশে জায়গা বিক্রি হবে। তুমি টাকা পাঠাও, তোমার নামে জায়গা ক্রয় করবো।” আমি তাদের কথামতো টাকা পাঠাই এবং আমার নানা শ্বশুর বাড়ি কবি রূপসায় জায়গা ক্রয় করি। সেখানে আমি একটি একতলা পাকা বাড়িও করি। পরবর্তীতে একই ভাবে ঢাকার সাভারে বাড়ি ও জায়গা ক্রয় করার জন্যে গত ৭ বছরে প্রায় এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা পাঠাই। আমার স্ত্রী, শাশুড়ি ও মামা শ্বশুর মিলে আমার নামে জায়গা না কিনে স্ত্রীর নামে জায়গাসহ বাড়ি ক্রয় করে। আমি দেশে এসে বিষয়টি জানতে পারি। সেই থেকে আমাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। আমার বিপুল টাকার মধ্যে শুধুমাত্র কবি রূপসা গ্রামে যেখানে বাড়ি করেছি ঐ জায়গাটুকু আমার নামে কিনেছে। যদিও পরবর্তীতে ফিল্মি স্টাইলে সন্ত্রাসী কায়দায় জোর করে আমার স্বাক্ষর নিয়ে তারা শেষ সম্বল কবি রূপসার জায়গাটুকুও নিয়ে নেয়। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে সাফকবালা না করে হেবা করে নেয়। আমি প্রতিকার চেয়ে সবার দ্বারে দ্বারে ঘুরে ব্যর্থ হয়ে আইনের আশ্রয় নিয়েছি। বিষয়টি আমি মেনে নিতে পারিনি। মানসিক যন্ত্রণায় আমার হার্ট অ্যাটাক হয়। দেশে এসে চিকিৎসা নিয়ে এখনো বেঁচে আছি।”

এ বিষয়ে অভিযুক্ত খাদিজা আক্তার মিতু বলেন,‘ওর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। ও বিদেশ যাওয়ার পর থেকে আমাদেরকে কোনো টাকা-পয়সা দেয়নি। এমনকি কোনো রকম যোগাযোগই রাখেনি। এর কারণ, সে বহু নারীতে আসক্ত হয়ে পড়ে। ২০২১ সালে সে গোপনে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে।’ এমন একটি দুশ্চরিত্র ছেলের সাথে আমি সংসার করবো না।” জমি এবং বাড়ির বিষয়ে প্রশ্ন করলে মিতু বলেন, “কবি রূপসার জায়গা আমার বাবা দিয়েছে। বাড়ি আমার টাকায় করেছি। ঢাকার বাড়ি এবং জায়গা আমার দুলাভাই দিয়েছে।”

মামলার ৪নং আসামী ৮নং পাইকপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক পাটওয়ারী বলেন, ‘'বর্তমানে আমার ভাগ্নিদের (খাদিজা আক্তার মিতু) সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সাথে জমি নিয়ে আমাদের বিরোধ। এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমি হলাম মামা, আপনি তার বাবার সাথে কথা বলেন।’' অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা খালাত ভাই- বোন। প্রেম করে বিয়ে করেছে। ছেলে বেকার দেখে এবং নানা শ্বশুর বাড়িতে থাকবে সে সুবাদে শান্তির লক্ষ্যে ছেলেকে কিছু ভূমি দলিল করে দেয়। আবার ছেলে (মেয়ের জামাই) উল্টাপাল্টা চলার কারণে তারা তাদের জায়গা ফেরত নিয়ে নেয়।’

প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। সেজন্যে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদেরকে বলা হয় রেমিট্যান্স যোদ্ধা। একজন প্রবাসী বা রেমিট্যান্স যোদ্ধা নিজের সর্বোচ্চ সময়, শ্রম দিয়ে, বিলাসিতা ত্যাগ করে অর্থ উপার্জন করেন। আর কষ্টার্জিত সে অর্থ দেশে পাঠান। স্ত্রী, সন্তান, মা-বাবা ও আত্মীয় স্বজনসহ পরিবারের সকলের ভরণ পোষণ ও তাদের সুখের জন্যে বছরের পর বছর পড়ে থাকেন প্রবাসে। তাদের সেই কষ্টের টাকা যদি এভাবে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়