বুধবার, ৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   তীব্র গরম, দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় ২ মে পর্যন্ত বন্ধ

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

শাহরাস্তি থানা-পুলিশের এ সাফল্য আশাব্যঞ্জক

অনলাইন ডেস্ক

ইদানীং চাঞ্চল্যকর যে কোনো হত্যা মামলার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর সাফল্য যেনো মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তার বিপরীতে এ সংক্রান্ত থানা-পুলিশের সাফল্য ক্রমশ বিরল হয়ে যাচ্ছে। কারণও আছে অনেক। থানা-পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ বহুমাত্রিক যতো কাজ আছে, সেটা পুলিশের বিশেষায়িত অন্যান্য ইউনিট যেমন : নৌপুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, পিবিআই-এর নেই। সেজন্যে কাজের বহুমাত্রিকতায় আচ্ছন্ন থানা-পুলিশ যখন কোনো হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে দ্রুত সাফল্য দেখায়, তখন সাধারণ্যে সন্তোষ প্রকাশের স্বতঃস্ফূর্ততা পরিলক্ষিত হয়। যেমনটি শাহরাস্তি উপজেলায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে গত সোমবার 'শাহরাস্তির আবুল কাশেম হত্যার রহস্য উন্মোচন : চায়ের কেটলির গরম পানিতে দোকানিকে হত্যা, আসামী গ্রেপ্তার' শিরোনামের শীর্ষ সংবাদে ব্যুরো ইনচার্জ মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল লিখেছেন, শাহরাস্তি উপজেলার কালচোঁ গ্রামের বাসিন্দা পঁয়ষট্টি বছর বয়সী আবুল কাশেম গত ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সকাল আনুমানিক সাড়ে ৬টার দিকে রাস্তার পাশে তার জীবিকা অবলম্বনের চা দোকানটি প্রতিদিনের ন্যায় খুলে বসেন। এ সময় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও তার সহযোগী দুজন মোটরসাইকেল আরোহী ওই চা দোকানে আসেন। তারা তিনজন ওই দোকানে চা পান করেন এবং চা পান করা অবস্থায় সিগারেট চান। সিগারেটও দেয়া হয়। তারা বিল প্রদানের জন্যে দোকানি আবুল কাশেমকে ৫০০টাকার নোট দেন। এতো সকালে ৫০০ টাকার নোটের ভাংতি নেই বললে তাদের সাথে আবুল কাশেমের তর্ক-বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে ঐ ব্যক্তিসহ তিনজন ক্রেতা আবুল কাশেমের মাথায় আঘাত করেন এবং চুলার কেটলিতে থাকা চায়ের গরম পানি শরীরে ঢেলে চলে যান। ওই অবস্থায় আবুল কাশেম চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এবং সেখানে ১৪ ফেব্রুয়ারি সকাল অনুমান পৌনে ৬টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় দোকানির ছেলে মোঃ শরীফ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করার জন্যে পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলামের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি তদন্তকালীন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জনৈক মোঃ বাবুল ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে নিশ্চিত হন। এরপর ১৯ এপ্রিল শুক্রবার নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানা পুলিশের সহযোগিতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে এই বাবুলকে সোনাইমুড়ি থানার আমকি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন। সে আমকি গ্রামের পাঠান বাড়ির মৃত লোকমান হোসেন ওরফে লোকমান ডাকাতের ছেলে। গ্রেপ্তারকৃত বাবুল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনা স্বীকার করেন এবং তার সঙ্গে সহযোগী হিসেবে পলাতক আসামী নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ি থানার কেগনারখিল গ্রামের পারভেজ এবং চাটখিল থানার ফতেপুর গ্রামের হাবিবুর রহমান ওরফে সোহেলের কথা জানান। তারা ওইদিন সোহেলের মোটরসাইকেলযোগে শাহরাস্তি থানাধীন কালচোঁ এলাকায় আসেন। চা ও সিগারেট নেয়ার পর ৫০০ টাকার ভাংতি নিয়ে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে বৃদ্ধ দোকানি আবুল কাশেমের গায়ে গরম পানি ঢেলে এবং মাথায় আঘাত করে মোটরসাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামীকে চাঁদপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করার জন্যে চেষ্টা অব্যাহত আছে।

আমাদের দেশে রাস্তার পাশের চা দোকানদার, পান দোকানদার, সবজি বিক্রেতা, বাদাম, চানাচুর বিক্রেতা সহ ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকানদার, ভ্যানগাড়িসহ অন্যান্য গাড়িযোগে বিভিন্ন পণ্য বিক্রেতা, বিভিন্নরূপী ক্যানভাসার, দিনমজুর ও শ্রমিককে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে ভাবি না। এদেরকে ম্লেচ্ছ বলে তুচ্ছজ্ঞান করতে বিবেকের দংশনে ভুগি না। এদের বাঁচামরা খুব কম মানুষের কাছেই আলোচ্য বলে স্থান পায়। এদের নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কার আছে? অথচ 'তেলে মাথায় তেল দেয়া'র সময় অনেকের আছে। এমন গুরুত্বহীন মানুষ কোনো দুর্ঘটনায় মর্মান্তিকভাবে মরলেও অনেকেই কষ্ট পায় না, আনুষ্ঠানিক শোকপ্রকাশ দূরে থাক, সাধারণ শোকপ্রকাশের তাগিদেও ভোগে না। এদের স্বাভাবিক মৃত্যুতে মাইকিং হয় না, ফেসবুকে কেউ লিখে না বলে জানাজা বা শেষকৃত্যে তেমন লোক হয় না। এমন বাস্তবতায় একজন অখ্যাত বৃদ্ধ চা-দোকানির খুন, মামলা এবং তার রহস্য উদ্ঘাটন কাউকে তাগিদ, তদবির ও পীড়ায় ভোগাতে পারে বলে অন্য কারো বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়। তারপরও শাহরাস্তি থানার পুলিশ অফিসার মফিজুল ইসলাম চা-দোকানি আবুল কাশেম হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন অল্প সময়ে। এর পেছনে তার পেশাগত দক্ষতা ও মানবিক তাগিদ কাজ করেছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেজন্যে তাকে ধন্যবাদ ও শোকাহত পরিবারের পক্ষ থেকে আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমরা মফিজুল ইসলামের মাধ্যমে আবুল কাশেম হত্যার রহস্য উন্মোচনকে শাহরাস্তি থানা-পুলিশের আশাব্যঞ্জক সাফল্য বলে মনে করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়