রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

এটি নৌপুলিশের অনেক বড় সফলতা
অনলাইন ডেস্ক

নব্বইর দশকের শেষ দিকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা অনেক বেশি অনিরাপদ হয়ে পড়ে। রাতে তো বটেই, দিনের আলোতেই এই নৌপথ ডাকাতদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। তখন নদীতে নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডের টহল এখনকার মতো ছিলো না। চাঁদপুরের প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্র পুরাণবাজার থেকে বিভিন্ন রূটে চলাচলকারী টেম্পু/ট্রলার (ইঞ্জিন চালিত নৌকা)-এর যাত্রীরা এই নৌডাকাতদের উপদ্রবে খুবই অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো। তাদের জানমাল মারাত্মক বিপন্ন হয়ে পড়েছিলো। একদিন নৌ ডাকাতদের একটি দল নদীতে উপর্যুপরি ডাকাতি করার বিষয়টি নৌবাহিনীর একটি জাহাজ থেকে নৌসেনারা প্রত্যক্ষ করছিলো। এমতাবস্থায় তারা স্পীড বোটযোগে ধাওয়া করে নৌডাকাতদের ধরে ফেলে এবং চাঁদপুরের পুলিশের নিকট হস্তান্তর করে। সেদিন বড় স্টেশনে এই ডাকাতদের দেখতে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়েছিলো। আর এ সংক্রান্ত সংবাদের কারণে চাঁদপুর কণ্ঠ চারবার মুদ্রণ করতে হয়েছিলো। এটি শুধু চাঁদপুর কেনো, বাংলাদেশের কোনো আঞ্চলিক পত্রিকার জন্যে এখন পর্যন্ত বিরল ঘটনা বলেই আমরা মনে করি।

এক সাথে এতো ডাকাত ধরার পর অন্তত এক দশক ধরে চাঁদপুরকেন্দ্রিক সকল নৌপথ ডাকাতমুক্ত ছিলো। তারপর ক্রমশ পরিস্থিতির একটু-আধটু অবনতি হতে থাকে। নৌপথে নৌডাকাতরা স্পীডবোট ও ডাবল ইঞ্জিনবিশিষ্ট নৌকাযোগে সুযোগ পেলেই ডাকাতি করে এবং সেটা রাতের বেলা যতোটা না, দিনের বেলায় অনেক বেশি। পুরাণবাজার অভিমুখী ব্যবসায়ীরা সহ নৌ যাত্রীরা এই ডাকাতির ফলে কতো টাকা যে খুইয়েছে, তার হিসাব মিলানো কঠিন। সেজন্যে নৌ ডাকাতদের উৎপাতে নব্বইর দশকের শেষ দিকের মতো যাত্রীদের মধ্যে একটা অতিষ্ঠ-ভাব বিরাজ করেই আসছে। নদীকে নৌ ডাকাতমুক্ত করাই যাচ্ছে না।

অবশেষে গত ২৪ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টায় নৌ পুলিশের অভিযানে অস্ত্রসহ ১৩ ডাকাত আটক হওয়ায় জনমনে কিছুটা স্বস্তিভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর নৌপুলিশের সফল অভিযানের কারণে এই ডাকাতরা আটক হয়। সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) বাবুল বালার সাহসিকতায় মেঘনা নদীর একলাছপুর এলাকা থেকে এই ডাকাতদের আটক করা সম্ভব হয়। তিনি জানান, সুরেশ্বরে নদীতে চলাচলকারী বেশ ক’টি বাল্কহেডে ডাকাতিশেষে স্পীড বোটযোগে ডাকাতরা ফেরার খবর পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সঙ্গীয় ফোর্সসহ স্পীড বোটযোগে অভিযান চালাই। তখন পলায়নপর ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়। এতে সালাউদ্দিন নামে এক ডাকাত গুলিবিদ্ধ হয়, যাকে চাঁদপুর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ এই ডাকাতদের দমাতে ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। আটক ডাকাতরা জানিয়েছে, তাদের দলের সদস্য সংখ্যা ছিলো ২১ জন। তন্মধ্যে ৮ জন পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ১৩ জন নৌ পুলিশের হাতে ধরা পড়ে।

চাঁদপুরে নৌ পুলিশের অভিযানে ১৩ জন ডাকাত বিপুল অস্ত্রসহ ধরা পড়ার মতো সাফল্য স্মরণকালে সবচে’ বড় সাফল্য। এজন্যে আমরা ডাকাতিতে অতিষ্ঠ নৌযাত্রীদের পক্ষ থেকে নৌ পুলিশকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা চাঁদপুরসহ সন্নিহিত এলাকার নদীতে নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সমন্বিত ও সাঁড়াশি অভিযান প্রত্যাশা করছি, যাতে এখানকার নৌপথ নিরাপদ বা ঝুঁকিমুক্ত থাকে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়