সোমবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪

এদের প্রতিহত করুন, মা ইলিশ রক্ষা করুন

অনলাইন ডেস্ক
এদের প্রতিহত করুন, মা ইলিশ রক্ষা করুন

ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। সকল ভোক্তার কাছে অত্যন্ত সুস্বাদু বলে বিবেচিত এই মাছ। এই মাছ খেতে অপছন্দ করে এমন লোকের সংখ্যা বিরল। একসময় ইলিশের প্রাচুর্যে হতদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চ মধ্যবিত্ত, ধনী সহ সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এ মাছটি কিনে খেতে পারতো। আর এখন? এ মাছ কিনে খেতে পারার মানুষের সংখ্যা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। কারণ একটাই, দুর্মূল্য। কাগজে কলমে দেশের মৎস্য বিভাগ ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে বললেও বাস্তবে সেটার প্রমাণ নেই।

সরকার ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে ইলিশ গবেষকদের পরামর্শে কী না করছে। প্রতি বছর অক্টোবর মাসে প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় ইলিশের প্রজনন ক্ষেত্র দেশের যে সকল নদী, সেগুলোতে ইলিশসহ সকল মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তথা অভয়াশ্রম ঘোষণা করে। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার এবং সংলগ্ন লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত আরো ৩০ কিলোমিটারসহ মোট ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে সবচে’ বড়ো অভয়াশ্রম। আর বাকি অভয়াশ্রমগুলো বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও শরীয়তপুর জেলার নদীগুলোতে অবস্থিত। এই অভয়াশ্রমগুলোতে ইলিশ যাতে অক্টোবর মাসের ২২দিন নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারে এবং মার্চ-এপ্রিল দুমাস এই ডিম থেকে বেড়ে ওঠা কিশোর ইলিশ তথা জাটকা যাতে ক্রমশ পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে পারে সেজন্যে সরকার ছয়টি অভয়াশ্রমে সকল প্রকার মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়া সারা বছরের যে কোনো সময় জাটকা ধরা নিষিদ্ধ ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। অভয়াশ্রম চলাকালে জেলেদের খাদ্য সহায়তা এবং বিকল্প কর্মসংস্থানের প্রকল্পও বাস্তবায়ন করে চলছে। কিন্তু এতোসব সত্ত্বেও অনেক অপরিণামদর্শী জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই ইলিশ ধরছে। তাদের প্রবণতা এমন, তারা নিষিদ্ধ কারেন্ট জালসহ অন্যান্য নিষিদ্ধ উপকরণ ব্যবহার করে নদী ছেঁকে ইলিশের বংশকে নির্বংশ করে ছাড়বেই। এতে ইলিশের প্রাচুর্য কমে যাচ্ছে, ভরা মৌসুমেও জেলেরা পাচ্ছে না পর্যাপ্ত ইলিশ। ফলে ইলিশ হয়ে গেছে নিতান্তই সামর্থ্যবান রসনা বিলাসীদের ব্যয়বহুল খাদ্য উপকরণ। আর অসচ্ছল-অসামর্থ্যবানদের জন্যে হয়ে গেছে কষ্টকর এক পরিহাস। এটা সরকার উপলব্ধি করে এবার ৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষার জন্যে নিয়েছে অভয়াশ্রমসহ কঠোর পদক্ষেপ। দেশের অন্য পাঁচটি অভয়াশ্রমে কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সেটা জানা না গেলেও চাঁদপুরের জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে সর্বাত্মক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেমনটি অতীতে এতোটা দেখা যায় নি।

মা ইলিশ রক্ষার জন্যে কে কী ব্যবস্থা নিয়েছে সেটি জানার আগে আমাদের জানা প্রয়োজন একটি মা ইলিশ কতোটি ডিম ছাড়ে। জানা যায়, প্রজনন মৌসুমে আকার, বয়স, ঋতু ও পরিবেশভেদে একেকটি মা ইলিশ ১০ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়ে। কাজেই একটি মা ইলিশ ধরে খেয়ে ফেলা মানেই অন্তত ১০ লাখ ইলিশ খেয়ে ফেলা। এটা যে কতোটা ক্ষতিকর সেটা বিবেকবান সচেতন মানুষ একটু চোখ বুঁজে ভাবলেই মা ইলিশ নিধনে পা বাড়াবে না। যারা এমনটি ভাববে না, যারা ভবিষ্যতে পরিণাম কী হবে সেটা নিয়ে ভাবে না অর্থাৎ অপরিণামদর্শী, তারাই মা ইলিশ নিধনে নির্বিচার প্রয়াস চালায়। এদের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর, পুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড কেনো, নদী উপকূলের দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষেরই রুখে দাঁড়ানো উচিত। কেননা জাতীয় মাছের বংশ বিস্তার রোধে তথা উৎপাদন বৃদ্ধিতে বাধা প্রদানকারীরা জাতীয় শত্রু। এদের প্রতিহত করাটা আবশ্যক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়